ধর্ম ডেস্ক : রোজার আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম মাধ্যম। অন্য যেকোনো আমলে লোক দেখানোর প্রবণতা থাকতে পারে তবে রোজায় এমন কোনো প্রবণতা নেই। মানুষ একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্যই রোজা রেখে থাকে। বছরে এক মাস রোজা রাখা ফরজ। এর বাইরে পুরো বছর, সপ্তাহ, মাস ও বিভিন্ন মাসে নফল রোজা রাখার ফজিলত আছে।
পুরো বছর একজন মুসলিম যেসব নফল রোজা রাখতে পারবেন, সেগুলো হলো—
শাওয়ালের ৬ রোজা
রমজানের ফরজ রোজা শেষে যেই নফল রোজা শুরু হয় তার অন্যতম হলো শাওয়ালের ৬ রোজা। এই রোজার ফজিলতন অন্য যেকোনো নফল রোজার তুলনায় বেশি। কারণ এই রোজার মাধ্যমে একজন মুসলমান পুরো বছর রোজা রাখার সওয়াব পেয়ে থাকেন।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে রমজানের রোজা রাখে, অতঃপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখে, সে যেন বছরজুড়ে রোজা রাখে। ( মুসলিম, হাদিস : ২৮১৫)
জিলহজ মাসের রোজা
শাওয়ালের পর মাসের হিসেবে যে নফল রোজার বিধান রয়েছে তাহলো জিলহজের রোজা। এ মাসটি হজ ও কোরবানির মাস। এ মাসে প্রথম থেকে নবম দিন পর্যন্ত মোট ৯টি রোজার ব্যাপারে হাদিসে উৎসাহিত করা হয়েছে।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, আল্লাহর কাছে অন্য কোনো দিনের ইবাদত অতটা বেশি পছন্দনীয় নয়, যতটা বেশি পছন্দনীয় জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের ইবাদত। এর প্রত্যেক দিনের রোজা এক বছর রোজার সমতুল্য আর এর প্রত্যেক রাতের ইবাদত কদরের রাতের ইবাদতের সমতুল্য। (তিরমিজি, হাদিস : ৭৫৮)
আরাফার দিনের রোজা
জিলহজ মাসের নবম দিন হলো আরাফার দিন। সেদিনের রোজার ফজিলত আরও বেশি। আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূ লুল্লাহ সা. বলেন, আমি আশা করি আরাফার দিনের রোজা তার পূর্ব ও পরের এক বছরের পাপ মোচন করে দেবে। (মুসলিম, হাদিস : ২৮০৩)
উল্লেখ্য, ইবাদতের মাধ্যমে সাধারণত সগিরা গুনাহ ক্ষমা হয় আর কবিরা গুনাহ তওবার মাধ্যমে ক্ষমা হয়।
আশুরার রোজা
শাওয়াল, জিলহজ ছাড়াও মহররম মাসে আশুরার নফল রোজা রয়েছে। মহররম মাসের ১০ তারিখ হলো আশুরা। রমজানের রোজা ফরজ হওয়া আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর সে রোজার বিধান নফলে পরিণত হয়েছে।
মহররম মাসের ১০ তারিখ আশুরার রোজার ক্ষেত্রে তার আগে বা পরে এক দিন মিলিয়ে দুটি রোজা রাখার কথা নবী সা. বলেছেন।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, রমজানের পর সবচেয়ে উত্তম রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররম মাসের রোজা অর্থাৎ আশুরার রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাজ। (মুসলিম, হাদিস : ২৮১২)
শাবান মাসের রোজা
উপরে উল্লিখিত রোজাগুলো ছাড়াও মাসকেন্দ্রিক বিশেষ নফল রোজা হলো শাবান মাসের রোজা। এ মাসটি রমজানের আগে আগমন করে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে অনেক বেশি রোজা রাখতেন।
আয়েশা রা. বলেন, নবীজি সা. শাবান মাসের চেয়ে কোনো মাসে বেশি রোজা পালন করেননি। তিনি প্রায় পুরো শাবান মাসই রোজা পালন করতেন। (বুখারি, হাদিস : ১৮৬৯; মুসলিম, হাদিস : ২৭৭৯)
শবে বরাতের রোজা
এ ছাড়া মধ্য শাবানের রোজার বিষয়ে হাদিসে এসেছে—আলী বিন আবি তালিব রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন, যখন শাবানের পঞ্চদশ রাত তোমাদের সম্মুখে এসে যায় তখন তোমরা তাতে নামাজ পড়ো এবং পরবর্তী দিনটিতে রোজা রাখো। (ইবনু মাজাহ, হাদিস : ১৩৮৮)
একদিন পর পর রোজা
যারা রোজা রাখতে পছন্দ করেন। তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আমল হতে পারে একদিন পর পর নফল রোজা রাখার আমলটি। এক দিন পর পর রোজা রাখাকে সওমে দাউদ বলে। দাউদ আ.)এভাবে রোজা রাখতেন।
নবী সা. এটিক সর্বোত্তম রোজা বলেছেন এবং বেশি রোজা রাখতে আগ্রহীদের এভাবে রোজা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আল-আস রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা. আমাকে বলেন, তুমি কি সব সময় রোজা রাখো আর রাতভর নামাজ আদায় করে থাকো? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলেন, এরূপ করলে তোমার চোখ বসে যাবে এবং শরীর দুর্বল হয়ে যাবে। যে বছরজুড়ে রোজা রাখল সে যেন রোজাই রাখল না।
প্রতি মাসে তিন দিন করে রোজা রাখাই বছরজুড়ে রোজা রাখা। তিনি বলেন, আমি এর চেয়ে বেশি সামর্থ্য রাখি। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, তাহলে তুমি দাউদ আ.-এর রোজা রাখো। তিনি এক দিন রোজা রাখতেন আর এক দিন রোজা ছেড়ে দিতেন। তিনি শত্রুর সম্মুখিন হলে পলায়ন করতেন না। (বুখারি, হাদিস : ১৮৭৮; মুসলিম, হাদিস : ২৭৯৩)
প্রতি সপ্তাহের রোজা
সপ্তাহের প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা রাসূল সা. পছন্দ করেছেন।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার (বান্দার) আমল (আল্লাহর কাছে) উপস্থাপিত হয়। আমি পছন্দ করি যে রোজা অবস্থায় আমার আমল উপস্থাপন হোক। (তিরমিজি, হাদিস : ৭৪৭)
আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা.-কে সোমবারের রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, সেদিন আমি জন্মেছি এবং সেদিন আমার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। (মুসলিম, হাদিস : ২৮০৭)
প্রতি মাসের রোজা
প্রতি আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজাকে আইয়ামে বিজের রোজা বলে। নিয়মিতভাবে এই তিন দিনের রোজা সারা বছর রোজা রাখার সমতুল্য।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, আমার বন্ধু নবী সা. আমাকে তিনটি অসিয়ত করেছেন। ১. প্রতি মাসে তিন দিন করে রোজা রাখা, ২. চাশতের দুই রাকাত নামাজ পড়া এবং ৩. ঘুমানোর আগে বিতর নামাজ আদায় করা। (বুখারি, হাদিস : ১৮৮০)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।