জুমবাংলা ডেস্ক : প্রেমের পর মো. নাহিদের সঙ্গে ডালিয়া আক্তারের বিয়ে হয় মাত্র ছয় মাস আগে। এখনো নাহিদা আক্তারের হাতের মেহেদি শুকায়নি। মেহেদি দিয়ে তার হাতে লেখা ‘আই লাভ ইউ নাহিদ’। কে জানতে মাত্র ছয় মাসেই নির্মম পরিণতি মেনে নিতে হবে ডালিয়াকে। নাহিদের পরিবারই বা এখন চলবে কার ভরসায়?
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষে নিহত নাহিদ হাসান (১৮) ছিলেন পরিবারের অন্যতম ভরসা। বাবা মো. নাদিম একটি বেসরকারী প্রাতিষ্ঠানে স্বল্প বেতনে চাকরি করেন। পাঁচ সদস্যের সংসারে অভাব লেগেই থাকতো। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ছিলেন নাহিদ।
বাবাকে সাহায্যের জন্য পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর কাজ শুরু করেন নাহিদ। সর্বশেষ বাটা সিগন্যালে একটি কুরিয়ার কোম্পানিতে ডেলিভারি ম্যানের চাকরি করতেন নাহিদ। মাসে ১০ হাজার টাকা বেতন পেতেন তিনি।
মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর কামরাঙ্গীর চরের বাসা থেকে বের হন। ঢাকা কলেজের সামনে ছাত্র ও ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের মধ্যে পরে গুরুতর আহত হন নাহিদ। পরে মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মেডিকেলে তার মৃত্যু হয়।
তার সুরতহাল প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করা হয়, মাথায় পাশাপাশি চার জায়গায় কাটা জখম রয়েছে। কপালের ডান পাশে, নাকের বাম পাশে, দুই হাতে বিভিন্ন জায়গায় ও পিঠে পাশাপাশি তিনটি কাটা জখম। এ ছাড়া বাম পায়ে গোড়ালির নিচেসহ দুই পায়েই জখম রয়েছে।
এদিকে স্বামীকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল স্ত্রী ডালিয়া আক্তার। প্রেমের সম্পর্কের পর ছয় মাসের সংসার জীবনে যাকে সবচেয়ে আপন করে নিয়েছিলেন, সেই নাহিদ তাকে ছেড়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
মর্গে বসেই মোবাইল ফোনে স্বামীর ছবি বের করে বারবার দেখছিলেন তিনি। তার সরল জিজ্ঞাসা, ‘আমারে রাইখা ক্যান চইলা গেল, আমি এখন কার কাছে থাকব’।
বুধবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয় নাহিদের মরদেহের।
এ সময় নিহত নাহিদের বাবা মো. নাদিম বলেন, আমার ছেলে কাজের জন্য গেছে, ও তো কারো পক্ষে মারামারি করতে যায় নাই। ওরে কেন মারল? এখন আমি কার নামে মামলা করুম, কার কাছে বিচার চামু? এই দুঃখ-কষ্ট কারে বলুম আমি? কী বলব, আর কিছু বলার কিছু নাই।
তিনি জানান, সংসারে অভাব-অনটনের কারণে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়ে পড়ালেখা বাদ দেয় নাহিদ। ৮/৯ বছর আগে কিছুদিন নিউমার্কেটে কাজ করেছে সে। এরপর থেকে বিভিন্ন দোকানে কাজ করে আসছিলো। সবশেষ এ্যালিফেন্ট রোডে কাজ করছিল।
তার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. ফারহানা ইয়াসমিন।
স্বজনরা জানান, মৃতদেহটি প্রথমে নিয়ে যাওয়া হবে কামরাঙ্গীরচরের বাসায়। পরে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।