নখের রং, আকার-আকৃতি কেবল সাজসজ্জার অঙ্গ নয়, বরং তা দেহের অভ্যন্তরীণ অবস্থার ইঙ্গিত দিতে পারে। তাই পা এবং হাতের নখের দিকে নজর রাখা দরকার। কোনও রকমের পরিবর্তন দেখলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে চোখ খোলা রাখা উচিত। বিশেষ করে যাঁদের নেল ক্লাবিংয়ের মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
কী এই ‘নেল ক্লাবিং’?
এই অবস্থায় নখের ডগা ফুলে গিয়ে চওড়া হয়ে যায়। নখ নীচের দিক বেঁকে গিয়ে উল্টো চামচের মতো আকৃতি ধারণ করে। নখ বা নখের আশপাশে কিছু স্পষ্ট পরিবর্তন দেখা যায়, যেমন—
১. নখ চওড়া ও বৃত্তাকার হয়ে যাওয়া
২. নখ ও ত্বকের মধ্যে ফাঁক বেড়ে যাওয়া
৩. নখ নীচের দিকে বেঁকে যাওয়া
৪. নখের নীচের মাংসল অংশ থেকে নখ বেরিয়ে এসেছে বলে মনে হওয়া
৫. নখের চারপাশ নরম হয়ে আসা
৬. আঙুলের ডগা ফুলে যাওয়া, সায়ানোসিস (ত্বকের রং বদলে নীলচে হয়ে যায়) দেখা দেওয়া
নখের ক্লাবিংয়ের কারণ কী?
কেন হয়?
হাত বা পায়ের আঙুলের নখে ক্লাবিং অনেক সময় গুরুতর রোগের ইঙ্গিত হতে পারে। হার্টের চিকিৎসক বিয়াস সামন্ত বলছেন, ‘‘শিশুদেরও নখে ক্লাবিং দেখা যায়। তা ছাড়া আগে এই পরিস্থিতি আরও বেশি পরিমাণে নজরে আসত। কারণ ক্লাবিংয়ের নেপথ্যে যা যা রোগ রয়েছে, সেগুলি চট করে ধরা পড়ত না। এখনও গ্রামের দিকে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন না বলে নখের ক্লাবিং থেকে রোগ শনাক্তকরণে দেরি হয়ে যায়।’’
মধুমেহ চিকিৎসক অভিজ্ঞান মাঝি জানাচ্ছেন, ‘নেল ক্লাবিং’য়ের ‘ক্লাবিং’ শব্দটি দিয়ে অ্যাক্রোনিম তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ, ইংরেজি অক্ষর ‘সি’, ‘এল’, ‘ইউ’, ‘বি’, ‘বি’, ‘আই’, ‘এন’, ‘জি’-র সঙ্গে রোগের নাম যুক্ত করা হয়েছে। যার ফলে সহজেই নখের এই অবস্থার নেপথ্য কারণগুলি জেনে নেওয়া যায়।
দুই চিকিৎসক নখের ক্লাবিংয়ের কারণ হিসেবে যে রোগগুলির নাম বলেছেন, তা দেওয়া হল নীচে—
সি- সায়ানোটিক হার্ট ডিজ়িজ় অর্থাৎ নানা ধরনের হার্টের অসুখ হতে পারে। এ ছাড়া মূলত শিশুদের শরীরে দেখা যায়, সিস্টিক ফাইব্রোসিস। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জিনগত কারণেই এই রোগ দেখা যায়, যা প্রাথমিক ভাবে শ্বাসযন্ত্র এবং পাচনতন্ত্রকে প্রভাবিত করে।
এল- লাং অর্থাৎ ফুসফুসের ক্যানসার ছাড়াও ফুসফুসে দীর্ঘস্থায়ী অক্সিজেনের ঘাটতি, দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ বা সংক্রমণ ধরা পড়লে নখের ক্লাবিং দেখা যায়।
ইউ- আলসারেটিভ কোলাইটিসের মতো পাচনতন্ত্রের রোগ, দীর্ঘ প্রদাহজনিত সমস্যার আভাস দিতে পারে এটি।
বি- ব্রঙ্কিয়েকটাসিসের মতো ফুসফুসের সমস্যার উপসর্গ হতে পারে নখের ক্লাবিং।
বি- বিনাইন মেসোথেলিওমা রোগেও আক্রান্ত হতে পারেন। এটি এক ধরনের টিউমার, যেটিতে ক্যানসারের ঝুঁকি নেই।
আই- হার্টের ভাল্ভের প্রদাহ অর্থাৎ ইনফেক্টিভ এন্ডোকার্ডাইটিসের উপসর্গ হতে পারে নখের এই বদল। এ ছাড়া ইডিওপ্যাথিক পালমোনারি ফাইব্রোসিসও হতে পারে কারও। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগ।
এন- নিউরোজেনিক টিউমারের উপসর্গও হতে পারে এটি। স্নায়ুতন্ত্রের কোষ থেকে উৎপন্ন হয় এই টিউমার। স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন অংশ থেকে তা উদ্ভূত হতে পারে।
জি- গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ডিজ়িজ় বা পাচনতন্ত্রের প্রদাহজনিত দীর্ঘকালীন সমস্যার আভাস দিতে পারে এটি।
তা ছাড়া রক্তের কোনও সমস্যা এবং বংশগত রোগেরও ইঙ্গিত দিতে পারে নখের এই পরিবর্তন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।