জুমবাংলা ডেস্ক : এ দেশের রাজা বা জমিদারদের কারও যেমন বাঘ শিকার বা হাতি পোষার শখ ছিল, তেমনি কারও আবার ছিল গাছপালা সংগ্রহের শখ। নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ভান্ডারপুরের জমিদার বিনোদ কুমার লাহিড়ীর ছিল ভ্রমণ আর গাছপালা সংগ্রহের শখ। প্রতিবছর তিনি সপরিবার যেতেন তীর্থ ভ্রমণে।
আর ফেরার সময় ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে আনতেন বিভিন্ন ফল, বিশেষ করে বিভিন্ন জাতের আমের চারা। সেগুলো রোপণ করতেন তাঁর নিজস্ব বাগানে। এভাবেই বিনোদ কুমার লাহিড়ী নিজের শখের বাগানে লাগিয়েছিলেন কাশি ফজলি, বোম্বে ফজলি, দেবীভোগ, মালদা ফজলি নামের সুস্বাদু আম।
জানা যায়, ইংরেজ গভর্নর লর্ড লিটনের (১৯২২-১৯২৭) আমলে বিনোদ কুমার লাহিড়ী মুর্শিদাবাদের নবাবদের বাগান থেকে সংগ্রহ করেছিলেন উৎকৃষ্ট স্বাদের নাক ফজলির চারা। লাগিয়েছিলেন নিজের বাগানে। এর পর থেকে নওগাঁয় ছড়িয়ে পড়ে এ আম। এই আমের নিচের দিকে নাকের মতো আছে বলে এর নাম নাক ফজলি—এমনটাই অনুমান স্থানীয় লোকজনের।
ল্যাংড়া, গোপালভোগ, আম্রপালি, ক্ষীরশাপাতি, বারি-৪, গুটি জাতের আমের পাশাপাশি সম্প্রতি নওগাঁ জেলা খ্যাতি পেয়েছে বদলগাছীর নাক ফজলি আমের জন্য। নওগাঁর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও স্থানীয় আমচাষিরা জানিয়েছেন, জোড় কলমের মাধ্যমে এ আমের চারা তৈরি করা যায়। চারা রোপণের ১-২ বছরের মধ্যে গাছে মুকুল আসে।
স্থানীয় আমচাষি রাঙা চৌধুরী জানান, নাক ফজলি আম খুব মিষ্টি এবং পাকা অবস্থায় দেখতে কাঁঠালি রঙের হয়ে থাকে। এ আমের চামড়া পাতলা এবং আঁটি খুব চিকন ও মাংস বেশি হয়। গাছ থেকে আম পাড়ার পর ৫ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত স্বাভাবিক অবস্থায় ভালো থাকে। ফ্রিজে ভালো থাকে ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত। স্বাভাবিক অবস্থায় পরিপক্ব নাক ফজলি আম পচে কম।
ফজলি আমের জিআই পেল রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ দুই জেলাইফজলি আমের জিআই পেল রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ দুই জেলাই নওগাঁর বদলগাছী, ধামুইরহাট, সদর, রানীনগর ও মহাদেবপুর উপজেলায় এখন নাক ফজলি আমের চাষ হচ্ছে ব্যাপকভাবে। বদলগাছী উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই বাড়ির আশপাশে ও উঁচু ভিটেমাটিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য নাক ফজলি আমের বাগান।
ভান্ডারপুর গ্রামের মান্নান জানান, ১৯৪৭ সালে বিনোদ কুমার লাহিড়ী সপরিবার ভারতে চলে যান। পারিবারিকভাবে বিনিময়ের ফলে জমিদারের সব জমি পান মান্নানের দাদা। তবে এখনো জমিদারের ৫ শতাংশ জমিতে বসবাস করেন জমিদারের নাতি শ্রী নিরঞ্জন লাহিড়ী।
নিরঞ্জন লাহিড়ী জানান, পরিপক্ব অবস্থায় নাক ফজলির ত্বকের রং কলাপাতা সবুজ। পাকার পর বোঁটার আশপাশে হালকা লাল রঙের পাশাপাশি অনেকটা অংশজুড়ে হলুদ রং ধারণ করে। লাল, হলুদ ও সবুজের মিশ্রণে বিচিত্র একটি বর্ণের সৃষ্টি হয় আমটিতে। ফলটির ত্বক মসৃণ, খোসা পাতলা, শাঁস আঁশবিহীন অত্যন্ত মোলায়েম। রসাল এই আমের শাঁসের রং কমলার মতো।
বদলগাছী কৃষি অফিসার কৃষিবিদ হাসান আলী জানান, নাক ফজলি আম লম্বায় প্রায় চার ইঞ্চি আর চওড়ায় দেড় ইঞ্চি হয়। এর ওজন ৩০০-৪০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রায় পুরো জুন মাস নাক ফজলি আমের মৌসুম। সূত্র : নওগাঁ দর্পন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।