জুমবাংলা ডেস্ক : বৃহত্তর পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলা থেকে শুরু করে শাহজাদপুর অবধি নাগডেমড়া, পাথাইল হাট, সেলন্দা, হাড়িয়া, বিল চান্দো, কেনাই, রতনপুর, শাকপালা, চর ততুলিয়া, বহলবাড়ী প্রভৃতি এলাকার বিল অঞ্চলে দূর অতীত থেকেই অবারিত জলরাশি আর ভূ-খণ্ড ছিল।
গোয়াল ভরা গরু আর বিল ভরা মাছ সবসময়ই ছিল। তবে সর্বগ্রাসী বন্যা প্রায় বছরই হানা দেয়ায় ভাতের অভাব বরাবরই ছিল। মানুষের ভাতের অভাব হলেও এ অঞ্চলের কৃষকের গোয়াল ভরা গরুর খাদ্যের অভাব ছিলনা মোটেও। বিল পাড়ের আদিগন্ত সবুজে ছাওয়া বাথানই ছিল গো-চারণ ভূমি। এখনও ছোট-বড় মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক বাথান রয়েছে।
অগ্রহায়ণ থেকে জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় পর্যন্ত বাথানে গরু থাকে। এ কয়েক মাসে চারণ ভূমি সবুজ ঘাসে ভরা থাকে। বিশেষ করে আদিগন্ত লকলকে খেসারির ক্ষেত চোখে পড়ে। আর এসব ভরাট খেসারির ক্ষেতে রং-বেরং এর সুপুষ্ট ফ্রিজিয়ান, শাহীওয়াল, জার্সী, সিন্ধিসহ নানা রকম গাভী এবং ষাড় এর বিচরণ বেশ নয়ন মনোহর। মনের আনন্দে খাওয়া আর তাদের হাম্বা-হাম্বা ডাকের অনুরণন সে হৃদয়গ্রাহী পরিবেশকে আরো মায়াবি করে তোলে।
আর এসব বাথানে এক-দেড় লাখ উন্নত জাতের গরু প্রতিপালিত হয়। বাথানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিবারের সংখ্যাও ৮০-৯০ হাজার। বাথানকে ঘিরে তাদের সংসারের গতি প্রকৃতি নির্ধারিত। অধিকাংশ বাথানই যৌথ মালিকানায় গড়ে ওঠা। গ্রামের পাঁচ-দশ জন কৃষক মিলে একত্রে একটি বাথানে গরু রাখে। একটি বড় বাথানে পাঁচ-সাতশ পর্যন্ত গরু থাকে। যে সব লোকের নিজেরই শতাধিক গরু থাকে তারা একক ভাবেই বাথানে গরু রাখে।
বাথানে রাখা গরুর দেখভাল করে মূলত রাখালরা। পাঁচ-ছয় মাস তাদের মাঠেই কাটে। ‘ভাওড়’ বানিয়ে রাত যাপন করেন তারা। রাখাল আর গরুর সম্পর্ক কত নিবিড়, গরুর প্রতি মালিকের চেয়ে রাখালের দরদই যে বেশি তা বাথানে গেলেই স্পষ্ট টের পাওয়া যায়।
গরু মালিকেরা প্রতিদিন বাথানে গিয়ে ব্যবস্থাপকের ভূমিকা পালন করে থাকেন। গাভীর দুধ বিক্রির টাকা, খাবার কেনা,স্বাস্থ্যগত দিক, ইত্যাদি বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে থাকেন। অবশ্য ছোট রাখাল মালিকেরা নিজেরাও রাখালদের সঙ্গে থাকেন। অন্যান্য কৃষকের চেয়ে বাথানিদের রাখাল রাখতে টাকা একটু বেশিই লাগে।
রাখালদের কাজ গরুর যত্ন নেয়া, খাবার দেয়া, মাঠে চড়ানো, গোসল করানো, দুধ দোহন করা, এবং তা বিক্রয় কেন্দ্রে পৌছে দেয়া। অনেক সময় ঘোষরা বাথানে এসে দুধ নিয়ে যায়। বয়স্ক রাখালদের বাৎসরিক বেতন, খাওয়া দাওয়া, পোশাকসহ ৩৫-৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত। লোকালয় থেকে একটু দূরের পাথারে (বাথানের গহীন অংশকে পাথার বলে) রাখালিদের জীবন ধারায় কিছুটা ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য স্বভাবিক ভাবেই চলে আসে। সেই বৈশিষ্ট্যকে আরো বিশেষায়িত এবং বৈচিত্রময় করে গরুগুলোর বিচিত্র আচরণ। নাম ধরে ডাকলেই তারা কাছে চলে আসে।
মানুষের মতো বেলি ডান্স দিয়ে তাক লাগাল বিড়াল, রইল ভাইরাল ভিডিও
তারাচাঁদ, চিতামন, বগুড়া, জয়বাংলা, পূর্ণিমা, কালামানিক, মেঘনা, শাবানরা, আল্লাদি, মৌসুমি, সদাগর, ববিতা এরকম শত শত নামে তাদের ডাকা হয়। দুধ দোহন, গোসল বা খৈল ভূষি খাওয়ানোর সময় তাদের নাম ধরে ধরে ডেকে আনা হয়। নাম ধরে ডেকে পাওয়ার রহস্য সম্বন্ধে জানা গেল, বাছুর জন্মের পর গাভীকে কয়েকদিন যে নামে ডাকা হয় বাছুরটিও সে নামে পরিচিত হয়ে ওঠে এবং পরবর্তী সময়ে সাড়া দেয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।