জুমবাংলা ডেস্ক : আদালতের নির্দেশে একটি ভূমি রেকর্ড সংশোধন ও নামজারি করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে নান্দাইলের সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ টি এম আরিফের কাছে যান এক ব্যক্তি। এসিল্যান্ড আরিফ তার একজন দালালের মাধ্যমে ওই সেবা প্রার্থীর কাছে একলক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করেন। দরিদ্র পরিবারের অতি সাধারণ ওই ব্যক্তি নিরুপায় হয়ে ৬০ হাজার টাকা দিবে বলে স্বীকার করেন। সেই টাকার টাকার প্রথম কিস্তি হিসেবে বিশ হাজার টাকা দেওয়ার সময় পকেটে থাকা মোবাইল দিয়ে তিনি এই ভিডিও করেন তিনি। নান্দাইলের সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ টি এম আরিফের ঘুষ নেওয়ার এই ভিডিওটি দৈনিক দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
ভিডিওতে জনৈক সেবা প্রার্থীকে বলতে শোনা যায়, স্যার কি করতাম! কষ্টে আছি ষাট হাজার টাকা বাও করতাছি, এইহান বিশ হাজার টাকা আছে। তখন এ টি এম আরিফকে বলতে শুনা যায় বাকিটা? সেবা প্রার্থী বলেন, খারিজের সময় দিয়াম (দিব) স্যার। তখন এটিএম আরিফ বলেন খারিজ ফ্রি করে দিব। এ সময় উপস্থিত অফিসের কর্মচারী আ: সাত্তারকে বলতে শোনা যায়, খারিজের সময় মানে?
এ টি এম আরিফ ২০২২ সালের ১৩ জুলাই থেকে ২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২৬ তারিখ পর্যন্ত এই উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্ব পালনকালে নাজির হাসমতউল্লাহ, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী আ: সাত্তার, মাষ্টাররোল কর্মচারী শাহরিয়ারসহ একাধিক অফিস স্টাফদের নিয়ে একটি চক্র গড়ে তোলে ব্যাপক দুর্নীতির রাজ্য কায়েম করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলার মুসুল্লি ইউনিয়নের তারঘাট এলাকার বাসিন্দা মাজহারুল ইসলাম রাজন বলেন, একটি চক্র আমাদের প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার সম্পত্তির জাল দলিল করে আমাদের অজান্তে নামজারি (খারিজ) মূলে অন্যত্র বিক্রি করে দেয়। আমাদের সকল অরিজিনাল কাগজপত্র সংযুক্ত করে সহকারী কমিশনার ভূমি নান্দাইল বরাবর একটি মিস কেইস আবেদন করি। কাগজপত্রগুলো নিয়ে তৎকালীন এসিল্যান্ড এ টি এম আরিফের কাছে যাই, তিনি সকল কাগজপত্র দেখে মিস কেইসের মাধ্যমে পূর্বের (নামজারি) খারিজটি বাতিল করা সম্ভব বলে জানান। কিছুক্ষণ পর অফিসের একজন কর্মচারী আমাকে ভূমি অফিসের মায়াবন পার্কে ডেকে নিয়ে দেড় লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করে। আমি তাদের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে চলে আসি। কিছুদিন পর জানতে পারি আমাদের মিসকেস আবেদনটি বাতিল হয়ে গেছে। অফিসে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি মিস কেইসের শুনানির নোটিশে আমাদের স্বাক্ষর জাল করে এক তরফা শুনানি অনুষ্ঠিত করে আবেদনটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দিলে কিছু দিনের মধ্যে তার বদলি হয়ে যায়। তার এমন অনিয়মের কারণে আমরা এখন পর্যন্ত হয়রানির শিকার হচ্ছি। আদালত পর্যন্ত আমাদের দৌড়াতে হচ্ছে। এমন অফিসারের শাস্তি দাবি করেন তিনি।
এসিল্যান্ডের কাছে হেনস্তার শিকার হয়েছেন উপজেলার ভোরের কাগজ পত্রিকার প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া বিভিন্ন দাগের সম্পত্তি নিয়ে স্বজনদের সাথে আদালতে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় প্রায় ১০ লক্ষ টাকা মূল্যের আমাদের ৬৩ শতাংশ জমি রাজগাতী ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) শরীফ মোল্লার যোগসাজশে মামলার বিষয়টি গোপন রেখে ওয়ারিশানদের কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই আমাদের প্রতিপক্ষ এক ব্যক্তির নামে অবৈধ ভাবে নামজারি (খারিজ) করে দেন এ টি এম আরিফ। পরে জানতে পারি একাজের জন্য শরিফ মোল্লা ও এসিল্যান্ড ৭০ হাজার টাকার ঘুষ নিয়েছেন। এ বিষয়ে তার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করলে আইনজীবীর কাছ থেকে বন্টননামা ফরাইজি করে আনার পরামর্শ দেন। আইনজীবীর কাছ থেকে ফরাইজি আনার পরও কোন প্রকার সমাধান না করেই তিনি হঠাৎ নান্দাইল থেকে বদলি হয়ে যান। তার এহেন কর্মকাণ্ডে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, এমনকি প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সহকারী কমিশনার এ টি এম আরিফের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘুষ নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, না না, এমন তো হওয়ার কথা না। সূত্র : দেশ রূপান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।