উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার ফলাফলে নওগাঁ জেলাজুড়ে দেখা দিয়েছে হতাশাজনক চিত্র। জেলার পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীই উত্তীর্ণ হতে পারেননি। এতে শিক্ষার মান নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে অভিভাবক ও সচেতন মহলে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলার ৮৬টি কলেজ থেকে মোট ১৪ হাজার ৫৭৮ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ৪৩৯ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। গতবারের তুলনায় এবার জেলাজুড়ে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও পাসের হার উভয়ই কমেছে।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, বদলগাছী উপজেলার বালুভরা আর.বি. হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের চারজন পরীক্ষার্থী, মান্দা উপজেলার এস.সি. পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের নয়জন এবং ভারশো হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের একমাত্র পরীক্ষার্থী— সবাই ফেল করেছেন। একইভাবে আত্রাই উপজেলার সাহেবগঞ্জ টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের চারজন পরীক্ষার্থীর মধ্যে দুইজন অনুপস্থিত ছিলেন, আর উপস্থিত দুইজনই অকৃতকার্য হন। এছাড়া নিয়ামতপুর উপজেলার শাংসইল আদিবাসী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন অনুপস্থিত এবং বাকি ২০ জনই ফেল করেছেন।
নওগাঁ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, “একাধিক প্রতিষ্ঠানে শতভাগ ফেল অত্যন্ত অগ্রহণযোগ্য ও দুঃখজনক। আমরা বিষয়টি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করছি। কোনো প্রতিষ্ঠান কেন এমন ফল করেছে, তা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “যেসব প্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে খারাপ ফল হচ্ছে, সেখানে শিক্ষকদের উপস্থিতি, পাঠদানের মান ও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিবেশ নিয়ে তদন্ত করা হবে। প্রয়োজনে এসব প্রতিষ্ঠানে বিশেষ তদারকি কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে।”
মান্দা উপজেলার গণেশপুর গ্রামের অভিভাবক গোলাম মোস্তফা বলেন, “স্কুলে নিয়মিত ক্লাস হয় না, শিক্ষকও অনেক সময় থাকেন না। আবার শিক্ষার্থীরা কোচিং ও প্রাইভেটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এতে মূল শিক্ষাব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আরও পিছিয়ে পড়বে।”
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম সরোয়ার স্বপন বলেন, “নওগাঁসহ অনেক জেলাতেই শিক্ষার মান ক্রমে নিচের দিকে যাচ্ছে। কেবল পরীক্ষার ফল নয়, শেখার সক্ষমতা ও অনুপ্রেরণাও কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ, নিয়মিত প্রশিক্ষণ, একাডেমিক তদারকি এবং শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করলেই এই পরিস্থিতি বদলানো সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “এখন শিক্ষার মান উন্নয়নে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রশাসনিক পদক্ষেপ জরুরি। শিক্ষাকে আর পরীক্ষার নম্বরে সীমাবদ্ধ না রেখে শেখার সংস্কৃতি গড়ে তোলা দরকার।”
শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকরা মনে করছেন, জেলার শিক্ষাব্যবস্থায় কার্যকর সংস্কার ও নিরবচ্ছিন্ন তদারকি না হলে আগামী বছরগুলোতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। তাদের মতে, শিক্ষা প্রশাসন, শিক্ষক সমাজ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বিত উদ্যোগেই কেবল শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।