জুমবাংলা ডেস্ক : গ্রাম বাংলা ঐতিহ্যবাহী পাতা খেলা। যা আজ বিলুপ্তির পথে।
স্থানীয় সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদের উদ্যোগে শুক্রবার (৭ জুন) বিকালে নওগাঁ সদর উপজেলার লখাইজানি গ্রামের মাঠে এ খেলাটির আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে বিভিন্ন বয়সী হাজারো নারী-পুরুষ এ খেলা উপভোগ করে। তবে হারিয়ে যাওয়া গ্রাম-বাংলার খেলা ফিরিয়ে আনার দাবী এলাকাবাসীর। সুস্থধারার গ্রামীণ এসব খেলার মাধ্যমে ধর্মবর্ণ বিনিশেষে সম্প্রতির বন্ধন অটুট থাকবে এমন প্রত্যাশা স্থানীয়দের।
মাঠের মাঝে পুতে রাখা হয়েছে আস্ত কলা গাছ। গাছের গোড়ায় মাটির ঘটিতে আমের পাতা ও পানি। আর পাশেই আরেকটি বাটিতে মন্ত্র পড়া দুধ-কলা। কলার গাছ থেকে নির্দিষ্ট দুরুত্বে খেলোয়াড়দের খেলার জন্য চক্রাকারে দঁড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। যেনো অন্যরা প্রবেশ করতে না পারে। আর ঘটির পানিতে হাত ভিজিয়ে খেলোয়াড়রা অবস্থান নিয়ে মাটিতে হাত রেখে শুরু হলো মন্ত্র পড়া। এ খেলাটির নাম তন্ত্র-মন্ত্রে ‘পাতা খেলা’।
খেলায় ওঝা বা তান্ত্রিক এবং পাতা বা সন্ন্যাসী অন্তত ২০ জন অংশ নেয়। বাদ্যের তালে তালে সন্ন্যাসীরা শারীরিক কসরত প্রদর্শন করে। মন্ত্রে মুগ্ধ হয়ে সন্ন্যাসীরা কেউ লাফিয়ে কলা গাছে উঠার চেষ্টা করে। আবার কেউ বা সাপের মতো ফণা তুলে কলা গাছে আঘাত করছে। কেউ চক্রাকারের ভেতর থেকে মন্ত্রের টানে বেরিয়ে যায়। আবারও তাকে ধরে নিয়ে আসা হয়। এভাবে প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় মুগ্ধ হয়ে সন্ন্যাসীরা কলাগাছটি ভেঙে ফেলে। এভাবে শেষ হয় পাতা খেলা। আর মুগ্ধ হয়ে সন্ন্যাসীদের মন্ত্রের মাধ্যমে সুস্থ করেন তান্ত্রিকরা।
তবে খেলা শুরুর আগে একপশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। এতে খেলার মাঠে পানি জমে অন্য রকম এক আমেজ বিরাজ করছিল। আবহাওয়া অনেকটা শীতলতা বিরাজ করছিল। খেলোয়াড় ও দর্শকরা খেলা দেখেও তৃপ্তি পেয়েছিল। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী গ্রাম-বাংলার এই পাতা খেলা দেখে উচ্ছ্বসিত এলাকাবাসী। পরিবার-পরিজন নিয়ে বিভিন্ন বয়সীরা খেলা উপভোগ করেন।
খেলা দেখতে আসা গৃহবধূ আফরোজ বেগম বলেন- এ খেলা দেখে অন্য রকম এক অনুভূতি পাওয়া যায়। মন্ত্রে মুগ্ধ হয়ে পাতা বা সন্ন্যাসী যাদের বলে তাদের নাচ দেখা হয়। আবার কেউ কলা গাছে উঠার চেষ্টা করে পিছলে পড়ে যায়। আবার ওঝারা ঝাঁড় ফু করে।
খেলোয়াড় আব্দুল আজিজ বলেন- মাঠের মাঝে কলা গাছ পুতে রাখা হয়। গাছের গোড়ায় ঘটিতে পানি ও বাটিতে দুধ কলা রাখা হয়। খেলায় যারা অংশ নিবে (পাতা/সন্ন্যাসী) তাদের মন্ত্র তারা মুগ্ধ করা হয়। এরপর তারা ঢোল বা বাদ্যের তালে তালে শারীরিক কসরত ও নাচ করে। আবার ওঝারা মন্ত্র পড়ে পাতাদের আকৃষ্ট করে কলা গাছের এলাকা থেকে দুরে নিয়ে যায়। আবারও পাতা ছুটে চলে আসে গাছের কাছে। এক সময় পাতার কলা গাছে উঠে ভেঙে ফেলে। এরপর খেলা শেষ হয়। আমরা বছরের পর বছর এসব খেলা করে আসছি এলাকাবাসীদের আনন্দ দেয়ার জন্য।
খেলার আয়োজক ও সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি অ্যাডভোকেট ডিএম আব্দুল বারী বলেন- শত বছরের ঐতিহ্য পাতা খেলা। সুস্থ ধারার বিনোদন হিসেবে এলাকাবাসীদের আনন্দ দিতে এমন খেলার আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি হারিয়ে যাওয়া অন্য যেসব খেলা রয়েছে সেগুলো আগামীতে এমন ধারা অবহৃত থাকবে বলে জানান তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।