নারীর কাছে চাঁদা দাবি করলেন বিএনপি নেতা, কল রেকর্ড ভাইরাল

জুমবাংলা ডেস্ক : গোপালগঞ্জে মামলার ভয় দেখিয়ে অসহায় নারীর কাছে আড়াই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে কাশিয়ানী উপজেলা বিএনপির সহ-যুব-বিষয়ক সম্পাদক নিয়ামুল হোসেন মিলনের বিরুদ্ধে। চাঁদা দাবি করা পাঁচ মিনিটের কল রেকর্ড ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। তিনি উপজেলা মহেশপুর ইউনিয়নের বাথানডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা।

BNP

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে ওই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে কাশিয়ানী থানায় একটি মামলা করেছেন ভুক্তভোগী নারী।

ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডে ওই বিএনপি নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘দারোগার কাছে আমি আপনার ছেলেসহ দুজনের কথা বলছি। আড়াই লাখ টাকা লাগবে। বিষয়টি ওসি-এসপি স্যারের নাকি নজরে গেছে। তারা অ্যাকশনে যাইতে বলছে। তিনজনকে আড়াই লাখ টাকা ছাড়া ছেড়ে দেয়া হবে না। আজকে সকাল ১০ টার ভেতর না দিলে তোমার ছেলের নামেও মামলা হয়ে যাবে।’

এসময় অপর প্রান্ত থেকে মাহাবুর মিয়ার মা শিল্পী বেগমকে বলতে শোনা যায়, ‘কাকা আমার ছেলে তো নির্দোষ। আমি আড়াই লাখ টাকা কোহানে পাবো। আমার ভিটাবাড়ি বেচলেও লাখ টাকা হবে না। তুমি আমার ছেলের একার বিষয়টি দেখো। আমি একলাখ টাকা দিতে পারবো।’

এসময় ওই বিএনপি নেতা বলেন, মোবাইল এত কথা না বলে আপনি আমার বাড়ি আসেন।

স্থানীয়রা জানায়, গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের বাথানডাঙ্গা-রামপুর গ্রামের মৃত জাকির মিয়ার ছেলে ইজিবাইকচালক মাহাবুর মিয়ার বাসার সামনে থেকে একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়। ওই বিএনপি নেতা নিজে পুলিশের সঙ্গে থেকে প্রাইভেটকারটির মাহাবুর মিয়ার বাসার সামনে থেকে উদ্ধার করে। পরে প্রাইভেটকারের মালিক খুঁজে না পাওয়ায় পুলিশ নিয়মানুযায়ী আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে প্রাইভেটকারটি জব্দ দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। তবে কারো বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। উদ্ধারের পর জানা যায় প্রাইভেটকারটির মাহাবুর মিয়ার কাছে নিয়ে এসেছিল তার এক বন্ধু। এ ঘটনার পর থেকে ভয়ে পলাতক রয়েছে ইজিবাইক চালক মাহাবুর মিয়া।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) চাঁদাবাজির অভিযোগ কাশিয়ানী উপজেলা বিএনপির সহ-যুব-বিষয়ক সম্পাদক নিয়ামুল হোসেন মিলনের বিরুদ্ধে কাশিয়ানী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী নারী শিল্পী বেগম।

মাহাবুর মিয়ার চাচা সৈয়দ মিয়ার বলেন, নিয়ামুল হোসেন মিলন রাজনীতি করে আমরা জানি। প্রাইভেটকার উদ্ধারের সময় তিনি পুলিশের সঙ্গে ছিল। উদ্ধারের পর থেকে নিয়ামুল মাহাবুবের মাকে মামলা হবে বলে বিভিন্ন ভয় দেখিয়ে আসছেন।

বিষয়টি স্বীকার করে বিএনপি নেতা নিয়ামুল হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন ওই মহিলা আমার বাড়ি এসে কাঁদে। আমি কি করবো। পরে মানবিক কারণে তাদের জন্য সুপারিশ করতে গেছি। আমাকে দারোগা গৌতম বাবু বলছে- ওরা তো ওই সময় বলছিল তিন চার লাখ টাকা যা লাগুক তাই দিবে, মামলা যেন না হয়। সেইটা দিতে বলেন, মামলা তাদের নামে হবে না। আমাকে কাশিয়ানী থানার দারোগা গৌতম বাবু যা বলছে আমি তাই তাদের কাছে বলছি। আমি নিজের কথা বলিনি।’

এ বিষয়ে জানতে কোটালীপাড়ার থানার সাব-ইন্সপেক্টর (সাবেক কাশিয়ানী থানা) গৌতম কুমার সেন বলেন, ‘মিলন সাহেবকে আমি চিনি। তবে তার সঙ্গে মামলা সংক্রান্ত বিষয় বা টাকার কোনো বিষয় নিয়ে আমার কথা হয়নি। সে হয়ত নিজে ফেঁসে গিয়ে আমার ওপর দোষ চাপাচ্ছেন।’

বিষয়টি নিশ্চিত করে কাশিয়ানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শফিউদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার শিল্পী বেগম বাদি হয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে একটি মামলা করেছেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে একজনকে। আমাদের আইনানুগ প্রক্রিয়া চলমান। দ্রুতই আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো।

এ ঘটনায় নিয়ামুল হেসেন মিলনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. সেলিম বলেন, ‘মামলা যেহেতু হয়েছে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো এবং সাংগঠনিকভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বোবায় ধরা কী, কেন হয়, প্রতিকারে করণীয়

এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।