কখনো কি ভেবে দেখেছেন নারীরা কেন পুরুষবিহীন পরিবেশে গেলে এক অদ্ভুত স্বস্তি বোধ করেন? এর কারণ শুধু পুরুষের অনুপস্থিতি নয়, বরং সেখানে তাদের সবসময় সচেতন বা ‘জাজড’ হওয়ার ভয় থাকে না। পরিবার বা কর্মক্ষেত্রে নারীদের প্রায়ই নানা সামাজিক দায়িত্ব ও আচরণের অদৃশ্য গণ্ডির মধ্যে থাকতে হয়।

কিন্তু এমন এক জায়গায় এসে তারা সেই চাপ থেকে মুক্ত হতে পারেন, যেখানে নিজের ইচ্ছেমতো হাসা, কথা বলা কিংবা স্রেফ চুপচাপ বসে থাকার মাঝেও খুঁজে পাওয়া যায় অনাবিল প্রশান্তি। এই স্বস্তির এক জাদুকরী ঠিকানা তৈরি করে দিয়েছে চীনের ঝেজিয়াং প্রদেশের লিনান গ্রামে গড়ে ওঠা ‘কেকের ইমাজিনেটিভ স্পেস’।
পাহাড়ঘেরা শান্ত এই গ্রামে পুরুষদের প্রবেশাধিকার নেই বললেই চলে। এখানকার রান্নাঘরে কেবল ভাপা পিঠার সুগন্ধ, চারপাশে নির্ভার হাসি আর স্বাভাবিক ব্যস্ততা—সব মিলিয়ে জায়গাটি হয়ে উঠেছে নারীদের এক নিরাপদ ও স্নিগ্ধ আশ্রয়।
নারীদের জন্য বিশেষায়িত এই স্থানটি গড়ে তুলেছেন চেন ইয়ানি, যিনি পরিচিত মহলে ‘কেকে’ নামেই বেশি পরিচিত। দীর্ঘদিনের কর্পোরেট জীবনের ক্লান্তি আর কাজের চাপ থেকে কেকে অনুভব করেছিলেন, নারীদের এমন একটি একান্ত জায়গা দরকার যেখানে কাউকে নিজের যোগ্যতা প্রমাণের লড়াই করতে হবে না। সেই ভাবনা থেকেই লিনানের পাহাড়ি পরিবেশে এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের জন্ম।
এখানে যারা থাকতে আসছেন, তাদের ভাষ্যমতে—একে অপরকে চেনেন না, অথচ অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের মধ্যে এক গভীর আত্মিক টান তৈরি হয়। একসঙ্গে রান্না করা, প্রাণ খুলে গল্প, বোর্ড গেম খেলা কিংবা পাহাড়ের নির্জনতায় নিঃশব্দে সময় কাটানো—সবকিছুর মধ্যেই এক ধরনের স্বতঃস্ফূর্ততা থাকে।
এই অনন্য ধারণাটি এখন শুধু লিনানেই সীমাবদ্ধ নেই। ঝেজিয়াংয়ের হাংঝৌতে গড়ে উঠেছে ‘হার স্পেস’ এবং বেইজিংয়ে ‘হাফ দ্য স্কাই’-এর মতো আরও অনেক নারী-নির্ভর কমিউনিটি।
এসব উদ্যোগের পেছনের কারিগররা বলছেন, এমন জায়গাগুলো নারীদের মানসিক শক্তি জোগায়। এখানে নারীরা তাদের জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো নির্ভয়ে ভাগাভাগি করতে পারেন, যা অনেক সময় তাদের নতুন কোনো কাজ বা জীবনের নতুন পথের দিশাও দেয়।
চীনে নারীদের শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। এর ফলে নিজেদের মানসিক সুস্থতা এবং ব্যক্তিগত সময়ের প্রয়োজন বোঝার সচেতনতাও আগের চেয়ে অনেক বেশি। সেই সচেতনতা থেকেই জন্ম নিচ্ছে এই ধরনের পুরুষবিহীন, চাপমুক্ত নতুন সামাজিক বলয়। যেখানে নিরাপত্তা, স্বাধীনতা এবং নিজের মতো করে বেঁচে থাকার সুযোগটাই নারীদের কাছে এখন সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।


