বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : সাম্প্রতিক সময়ে সূর্যের অভ্যন্তরীণ তাপীয় বিক্রিয়া এতটাই সক্রিয় হয়ে উঠেছে যে, বিজ্ঞানীদের মধ্যে এটি নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সূর্যের বিশাল বিস্ফোরণসমূহকে বলা হয় এক্স-শ্রেণির সৌরশিখা (X-Class Solar Flare), যা সবচেয়ে শক্তিশালী সৌর বিস্ফোরণের মধ্যে পড়ে। এই শিখাগুলোর মূল উৎস হচ্ছে সূর্যের একটি বৃহৎ ও অতিসক্রিয় কালো দাগ (সানস্পট) AR4087, যা বর্তমানে পৃথিবীমুখী হয়ে অবস্থান করছে।
২০২৪ সালের ১৩ মে সকাল ১১টা ৩৮ মিনিটে সূর্য থেকে X-1.2 মাত্রার একটি সৌরশিখা নির্গত হয়। এর পরদিন একই স্থান থেকে আরও শক্তিশালী X-2.7 মাত্রার শিখা ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে রেডিও সংকেত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
সৌরঝড়ের প্রভাব ও সম্ভাব্য ঝুঁকি
এই ধরনের সৌর অগ্ন্যুৎপাত, যাকে করোনাল মাস নির্গমন (Coronal Mass Ejection বা CME) বলা হয়, যদি পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রে আঘাত হানে, তাহলে তা হতে পারে চরম বিপর্যয়কর। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর ফলে পৃথিবীতে হতে পারে নিচের ধরনের বড় ধরনের সমস্যা:
কৃত্রিম উপগ্রহ বিকল হয়ে যাওয়া বা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া
বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় বিপর্যয়, বিশেষ করে ট্রান্সফরমারে মারাত্মক ক্ষতি
মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া
বিমান, ট্রেন ও মেট্রোর চলাচলে বিঘ্ন
জ্বালানির সরবরাহে ব্যাঘাত এবং মূল্যবৃদ্ধি
আর্থিক লেনদেন ও ডিজিটাল সেবায় বড় ধরনের সমস্যা
সৌরঝড় মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের মহড়া
এই সম্ভাব্য বিপর্যয় মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২০২৪ সালের ৮ মে কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে আয়োজন করে একটি বিশেষ মহড়ার। এই মহড়ার নাম দেওয়া হয় মহাকাশ আবহাওয়া প্রস্তুতি মহড়া (Space Weather Tabletop Exercise)। এতে অংশ নেয় যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সংস্থা:
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান রক্ষী বাহিনী (Air National Guard)
১৪০তম উইং ও ২৩৩তম মহাকাশ দল
জাতীয় সমুদ্র ও বায়ুমণ্ডল সংস্থা (NOAA)
স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগ (Department of Homeland Security)
এই মহড়ায় এমন একটি কল্পিত পরিস্থিতির অনুশীলন করা হয়, যেখানে ২০২৮ সালের জানুয়ারিতে এক বিশাল সৌরঝড় পুরো যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ ক্ষতি সাধন করে। মহড়ার মূল লক্ষ্য ছিল: জাতীয় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে, ইন্টারনেট যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেলে এবং জরুরি সেবা বিচ্ছিন্ন হলে কিভাবে দ্রুত ও কার্যকরভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
বিজ্ঞানীদের সতর্ক বার্তা
বিজ্ঞানীরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, বাস্তবেও যদি এ ধরনের একটি সৌরঝড় পৃথিবীতে আঘাত হানে, তবে তা বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, পরিবহন ও অর্থনীতির প্রতিটি স্তরে ব্যাপক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। তাই এই ধরনের মহড়া ও প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগাম সচেতনতা ও সমন্বিত প্রস্তুতির মাধ্যমেই কেবল এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলা সম্ভব। সৌরঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন আর শুধু মহাকাশবিজ্ঞানীদের বিষয় নয়—এটি প্রতিটি দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু হয়ে উঠছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।