তপন কুমার ঘোষ : জানুয়ারি থেকে বেড়েছে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার। এ হার কমবেশি ১ শতাংশ বেড়েছে। ট্রেজারি বন্ডের গড় সুদের হারের সঙ্গে সংগতি রেখে জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোর মুনাফার হার বাড়িয়েছে সরকার। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে মুনাফার হার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, যা ১ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে কার্যকর হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার ছয় মাস পর মুনাফার হার পুনর্নির্ধারণ করা হবে। তবে যে মেয়াদের জন্য সঞ্চয়পত্র ইস্যু করা হবে, সে মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত মুনাফার হার অপরিবর্তিত থাকবে।
মুনাফার নতুন ধাপ :
নতুন নিয়মে বিনিয়োগের শ্রেণিসীমার ভিত্তিতে মুনাফার দুটি সø্যাব বা ধাপ রাখা হয়েছে। প্রথম ধাপে সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার হবে এক রকম। আর দ্বিতীয় ধাপে সাড়ে সাত লাখ টাকার ঊর্ধ্বে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভিন্ন হার প্রযোজ্য হবে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ সূত্র হচ্ছে, কম টাকা বিনিয়োগ করা হলে বেশি হারে মুনাফা পাওয়া যাবে, আর বেশি টাকা বিনিয়োগ করা হলে মুনাফার হার কম হবে। প্রসঙ্গত এর আগে মুনাফার তিনটি ধাপ ছিল।
মুনাফার পুনর্র্নির্ধারিত হার :চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ/পুনর্বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার নতুন হার প্রযোজ্য হবে। তবে ১ জানুয়ারি ২০২৫-এর আগে যাঁরা সঞ্চয়পত্রে টাকা খাটিয়েছেন, তাঁরা আগের হারে মুনাফা পাবেন। সঞ্চয়পত্রের ধরন ও মেয়াদ অনুযায়ী মুনাফার হারে তারতম্য আছে। আগের বিনিয়োগসহ ক্রমপুঞ্জীভূত বিনিয়োগ (এক বা একাধিক স্কিমে মোট বিনিয়োগের যোগফল) বিবেচনাপূর্বক উল্লিখিত ধাপ অনুযায়ী প্রযোজ্য হারে মুনাফা প্রদান করা হবে। প্রসঙ্গত সব সঞ্চয় স্কিমের মুনাফা সরল হারে প্রদেয়। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন করে নিট মুনাফা প্রদান করা হয়। তবে সঞ্চয়পত্রে পুঞ্জীভূত বিনিয়োগের পরিমাণ ৫ লাখ টাকা অতিক্রম না করলে এই হার হবে ৫ শতাংশ। এবার একনজরে দেখে নেওয়া যাক বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রের ধাপভিত্তিক মুনাফার হার। পরিবার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জীভূত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মেয়াদপূর্তি পর্যন্ত (পাঁচ বছর) মুনাফার হার হবে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর সাড়ে ৭ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে ক্রমপুঞ্জীভূত বিনিয়োগের পরিমাণের ওপর মুনাফার হার হবে কিছুটা কম, ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা প্রতি মাসে প্রদান করা হয়। পক্ষান্তরে পেনশনার সঞ্চয়পত্রে প্রথম ধাপ অর্থাৎ সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জীভূত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মেয়াদ পর্যন্ত (পাঁচ বছর) মুনাফার হার হবে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর দ্বিতীয় ধাপে সাড়ে ৭ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে ক্রমপুঞ্জীভূত বিনিয়োগের পরিমাণের ওপর এ হার হবে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী তিন মাস অন্তর নয়, ডিসেম্বর ২০২৪ হতে পেনশন সঞ্চয়পত্রের মুনাফা মিলছে প্রতি মাসে। এদিকে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে মেয়াদপূর্তি (তিন বছর) পর্যন্ত প্রথম ধাপে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ হারে এবং দ্বিতীয় ধাপে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে মুনাফা প্রাপ্য হবে। অন্যদিকে, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জীভূত বিনিয়োগের ওপর মেয়াদান্তে মুনাফা পাওয়া যাবে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ হারে। আর সাড়ে ৭ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে ক্রমপুঞ্জীভূত বিনিয়োগের পরিমাণের ওপর এ হার হবে কিছুটা কম, ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। নিট মুনাফা মেয়াদান্তে এককালীন প্রদান করা হয়। এ ছাড়া ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক মেয়াদি হিসাবে মেয়াদান্তে (তিন বছর) উল্লিখিত ধাপ অনুযায়ী প্রথম ধাপে মুনাফার হার হবে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ধাপে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ। নিট মুনাফার টাকা মেয়াদান্তে এককালীন পাওয়া যায়। উল্লেখ্য মেয়াদপূর্তির আগে সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করা হলে বছরভিত্তিক কম হারে মুনাফা প্রাপ্য হবে। কোনো বছরের ভগ্নাংশের জন্য মুনাফা পাওয়া যাবে না।
Lava Yuva Smart: বড় ডিসপ্লে সঙ্গে শক্তিশালী ব্যাটারির সেরা স্মার্টফোন
পুনর্বিনিয়োগ সুবিধা :
গত নভেম্বর মাসে সঞ্চয়পত্রের নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে, যা ১ ডিসেম্বর ২০২৪ হতে কার্যকর হয়েছে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ৩ নভেম্বর ২০২৪ তারিখের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী একজন বিনিয়োগকারী বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা মেনে আমৃত্যু সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের পুনর্বিনিয়োগ সুবিধা নিতে পারবেন। তবে প্রতিবার পুনর্বিনিয়োগের জন্য অনলাইনে অথবা ইস্যুকারী অফিসে সশরীরে হাজির হয়ে গ্রাহককে লিখিত সম্মতি প্রদান করতে হবে। ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে বিনিয়োগকারী অনলাইনে পুনর্বিনিয়োগের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ঊর্ধ্বসীমার অতিরিক্ত অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে জমা হবে। পুনর্বিনিয়োগের সময় পুনর্বিনিয়োগের তারিখের মুনাফার হার ও ধাপ প্রযোজ্য হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, বিনিয়োগকারীকে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণক জমা দিতে হবে। মৃত ব্যক্তির নমিনি অথবা উত্তরাধিকারী পুনর্বিনিয়োগ সুবিধা পাবেন না। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে নিট মুনাফাসহ আসল টাকা পুনর্বিনিয়োগ করা যাবে। সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের অংশ হিসেবে সঞ্চয়পত্রের স্কিমগুলোকে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগসংক্রান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো ন্যায্য ও যৌক্তিক বলেই সব মহলে প্রশংসিত হয়েছে।
লেখক : সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, জনতা ব্যাংক পিএলসি।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।