জুমবাংলা ডেস্ক : মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশের দিন নাটোরের লালপুরে যুবলীগ নেতা খাইরুল ইসলামকে (৩৭) নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে আদালত ১৩ জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন।
রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহা. মহিদুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডিত আসামিরা হলেন- লালপুর উপজেলার পুকুরপাড়া চিলান গ্রামের কুদ্দুস প্রামানিকের ছেলে সানা প্রামানিক, সেকেন্দারের ছেলে করিম ও খলিল; মো. বানুর ছেলে মতি সরদার, তৈয়ব আলীর ছেলে মকলেছ সরদার, মকলেছের ছেলে মহসিন, রুস্তম আলী প্রামানিকের ছেলে রানা, ফরজের ছেলে আনিসুর, লুৎফর প্রামানিকের ছেলে রাজ্জাক, শাহজাহানের ছেলে জার্জিস, কদিম চিলান গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে আবুল কালাম আজাদ প্রিন্স, আন্দারুর ছেলে মো. কালাম ও মাজদারের ছেলে মিজানুর রহমান। তারা সবাই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে।
অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় রায়ে আদালত ৫৪ জনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন।
আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহত খাইরুল লালপুর উপজেলার কদিমচিলান ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। খাইরুলকে খুনের ঘটনায় তার ভাই শাহীনুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেছিলেন।
আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু জানান, আদালত ১৩ আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন। জরিমানার অর্থ অনাদায়ে আরও তিনমাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়। এই রায়ের পর আসামিরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কদিমচিলান বাজারের বাসস্ট্যান্ডের কাছে মিছিল বের করে। আসামিরা গুলিবর্ষণ করে এবং ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে তারা পুকুরপাড়া চিলান গ্রামে নিহত যুবলীগ নেতা খাইরুল ইসলামের চাচা আবদুল জলিলের বাড়িতে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের আক্রমণ করে। তারা বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। বাড়িতে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও মূল্যবান মালামাল লুট করে। জলিলের স্ত্রী মাজেদা বেগম বাধা দিতে গেলে আসামিরা তাকে কুপিয়ে জখম করে। পরে জলিলের বাড়ি পুড়িয়েয়ে দেয়। এ সময় জলিল ও তার স্ত্রী মাজেদার চিৎকারে যুবলীগ নেতা খাইরুল ইসলাম এগিয়ে আসলে আসামিরা তাকে কুপিয়ে জখম করে। এরপর খাইরুলের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাকে পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই খাইরুলের মৃত্যু হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
এ নিয়ে সেদিনই নিহত খাইরুলের ভাই শাহীনুর রহমান লালপুর থানায় ৬০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। পরে পুলিশ তদন্ত করে ৬৭ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এ মামলায় ১৩ জনের সাজা হলো আজ। অন্য সবাই বেকসুর খালাস পেলেন। যদিও রায় ঘোষণার সময় কোন আসামি আদালতে হাজির ছিলেন না।
তবে আদালতে ছিলেন নিহত খাইরুলের আত্মীয়-স্বজন। রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে নিহত খাইরুল ইসলামের ছেলে জুবায়ের ইসলাম বলেন, ‘মামলাটি হাইকোর্টে নিয়ে দীর্ঘদিন এর বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে রাখা হয়েছিলো। একপর্যায়ে নথিপত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। আমরা বহু কষ্টে নথি জোগাড় করে আবার মামলাটি সক্রিয় করি। দীর্ঘদিন পর রায় হলো, কিন্তু সবার সাজা হলো না। অথচ দিনদুপুরে সবার চোখের সামনেই আমার বাবাকে ৬০-৭০ জন আসামি কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে। তাই এ রায়ে আমরা খুশি নই। উচ্চ আদালতে আপিল করবো।
রায়ের বিষয়ে আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু বলেন, ‘আদালত ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছেন। আমি আগে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি তুলবো। সেটা পর্যালোচনা করবো। তারপর মন্তব্য করবো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।