জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) সাফল্যের ঝুড়িতে যোগ হলো আরো একটি অর্জন। প্রতিষ্ঠানটির ফল গবেষণা বিভাগের বিজ্ঞানীরা কাঁঠালের নতুন একটি জাত উদ্ভাবন করেছেন, যেটির চারা রোপণের মাত্র দেড় বছরে মিলবে ফল। জাতটির নাম দেওয়া হয়েছে বারি কাঁঠাল-৬। এটি একটি উচ্চ ফলনশীল বারোমাসি জাত।
গত জুন মাসে জাতটি অবমুক্ত করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় বীজ বোর্ড। জাতটি অল্প সময়ে ফলন দেওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে জাতীয় ফল কাঁঠাল চাষে নতুন পথ খুলে গেল।
বারির উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ফল বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আনারুল ইসলাম জানান, আম, লিচু, পেয়ারা, লটকন, মাল্টাসহ জনপ্রিয় অনেক ফলের চারা সহজে কলম পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়। ফলন আসে দু-এক বছরের মধ্যে।
ফলের জাত, স্বাদ, মিষ্টতা ও ঘ্রাণ থাকে অটুট। এসব কারণে চাষিরা দিন দিন ওই সব ফল চাষে ঝুঁকছেন। সহজ চাষাবাদ ও ব্যাপক বাজার সৃষ্টি হওয়ায় কয়েক দশক ধরে ফলের বাজারে একক আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে আম। উল্টো চিত্র কাঁঠালের ক্ষেত্রে।
জাতীয় ফল হলেও কাঁঠাল চাষ প্রসারে এত দিন অন্যতম বড় বাধা ছিল ‘উন্নত চারা’। কারণ প্রাচীনকাল থেকে কাঁঠালের চাষ হয়ে আসছে প্রচলিত পদ্ধতিতে বীজ থেকে তৈরি চারা দিয়ে। এ পদ্ধতিতে চারা লাগানোর সাত-আট বছর পর গাছে ফলন আসে। তা ছাড়া প্রচলিত পদ্ধতিতে জাত, স্বাদ, মিষ্টতা ও ঘ্রাণ কখনো ঠিক থাকে না। এসব কারণে বাণিজ্যিকভাবে কাঁঠাল চাষে আগ্রহী ছিলেন না চাষিরা। তাই কাঁঠালের কলম ও উচ্চ ফলনশীল নতুন জাত উদ্ভাবনের জন্য শুরু হয় গবেষণা।
বারি কাঁঠাল-৬-এর উদ্ভাবনে জড়িত বারির ফল বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে উন্নত আগাম জাতের কাঁঠালের মাতৃজাত সংগ্রহ করে কলম চারা তৈরিতে তাঁরা প্রথম সফল হন ২০০৯ সালে। এতে আশার আলো দেখতে পান তাঁরা। পরে ২০১৮ সালে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডশেনের অর্থায়নে উচ্চ ফলনশীল বারোমাসি কাঁঠালের কলম চারা তৈরিতে শুরু হয় ব্যাপক গবেষণা। সফলতা আসে ২০২১ সালে। ১৫টি চারা প্রদর্শনী মাঠে রোপণ করে মাত্র দেড় বছরে (২০২৩ সালের মে-জুন মাসে) ফলন পান ১৩টিতে।
তিনি আরো বলেন, উদ্ভাবিত বারি-৬ জাতটির গাছ বিস্তৃত ডালপালাবিশিষ্ট সতেজ ও সবুজ। বেশির ভাগ গাছ দেড় বছরের মাথায় ফলন দিতে সক্ষম হলেও দুই বছর পর সব গাছেই ফল আসে। ফলের গড় ওজন ৩.৯৩ কেজি। ফলের ওপরের পৃষ্ঠ দেখতে হলুদাভ সবুজ। পাল্প (শাঁস) শক্ত, উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের ও আঠাবিহীন। এর মিষ্টতা (টিএসএস) ২৪.৮ শতাংশ। গড় ফলন হেক্টরে ১০.৬ টন। জাতটি উদ্ভাবনের ফলে চারা রোপণের অল্প সময়ে ফলন আসায় কাঁঠাল চাষে বিপ্লব বয়ে আনবে।
বারির মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকার বলেন, নতুন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট একের পর এক সাফল্য অর্জন করে চলেছে, যার সর্বশেষ অর্জন বারি কাঁঠাল-৬। এটির স্বাদ, মিষ্টতা ও ঘ্রাণ চমৎকার। জাতটি উদ্ভাবনের ফলে দেশে কাঁঠাল চাষে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।