সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই গেজেটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। এজন্য তহবিল বরাদ্দ দেওয়া হবে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে।
মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেছেন। তিনি বলেন, এই সরকারের মেয়াদেই নতুন পে স্কেলের বাস্তবায়ন করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা বলেন, আগামী বছরের মার্চ বা এপ্রিলে নতুন পে স্কেল যদি কার্যকর করতে হয়, তাহলে চলতি অর্থবছরের বাজেটেই সেজন্য অর্থবরাদ্দ দিতে হবে। বাজেট সংশোধন শুরু হবে ডিসেম্বরে, সেখানে নতুন পে স্কেল কার্যকর করার বিধান যুক্ত করা হবে।
সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করতে গত ২৪ জুলাই একটি পে কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খান সম্প্রতি বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই তারা সরকারের কাছে নিজেদের সুপারিশগুলো জমা দেবেন।
পে কমিশনের একজন সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, নতুন পে স্কেলের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গ্রেডের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া বিদ্যমান পে স্কেলের তুলনায় গড়ে কী হারে বাড়ানো হবে সেটাও চূড়ান্ত নয়।
বর্তমানে সর্বোচ্চ পদ (গ্রেড-১) ও সর্বনিম্ন পদ (গ্রেড-২০)-এর বেতনের অনুপাত প্রায় ১০:১। নতুন কাঠামোতেও এ অনুপাত ৮:১ থেকে ১০:১-এর মধ্যে থাকবে। প্রতিবেশী ভারতসহ অন্যান্য দেশে এ ধরনের অনুপাত বিদ্যমান রয়েছে বলে কমিশন পর্যালোচনায় পেয়েছে। ফলে বিদ্যমান ২০টি গ্রেড থেকে গ্রেডের সংখ্যা যদি কমানোও হয়, তারপরেও সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের ক্ষেত্রে একই অনুপাত বহাল রাখার সুপারিশ করবে কমিশন।
পে কমিশনের ওই সদস্য আরও জানান, চিকিৎসা ভাতাসহ কমিশন ইতোমধ্যে কয়েকটি ভাতা বাড়ানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমানে একজন সরকারি কর্মচারী চাকরির শুরু থেকে অবসরের পর পর্যন্ত মাসে ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। কমিশন এ ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব দেবে, যেখানে অবসরোত্তর সময়ে বাড়তি সুবিধা রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ ছাড়া কর্মচারীদের সন্তানদের শিক্ষা ভাতাও বাড়ানোর সুপারিশ করবে কমিশন।
২০১৫ সালে ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সুপারিশে সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বাতিল করে ১০ বছর পর স্বয়ংক্রিয় পদোন্নতির ব্যবস্থা চালু করা হয়। বর্তমান কমিশনও সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বাতিল করে পদোন্নতির প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করার প্রস্তাব দিতে পারে।
বর্তমানে জাতীয় বেতন কাঠামোর আওতায়, প্রায় ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন-ভাতা পান। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, বিদ্যুৎ কোম্পানি, সশস্ত্র বাহিনী ও বিচারকদের আলাদা বেতন কাঠামো রয়েছে। এগুলোতে জাতীয় কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকলেও বেতন-ভাতায় পার্থক্য আছে বলে উল্লেখ করেন কমিশনের এক সদস্য।
তিনি বলেন, এসব খাত আলাদা কাঠামোতেই থাকবে, তবে কমিশন এগুলোকে জাতীয় কাঠামোর সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার সুপারিশ করবে।
কমিশন মনে করছে, সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো বেসরকারি খাতের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। কারণ বর্তমানে বিনিয়োগের পরিস্থিতি দুর্বল। এজন্য আগামী অক্টোবর মাসে ব্যবসায়ী চেম্বার ও সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে কমিশন মতামত নেবে।
সরকার ইতোমধ্যে পোশাক শিল্পসহ ৪৫টি খাতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করেছে। কমিশন সুপারিশ করবে, এসব খাতের মজুরি জাতীয় বেতন কাঠামোর বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সমন্বয় করার।
এছাড়া পে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, গবেষণায় সম্পৃক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জন্য নতুন বেতন কাঠামোতে বিশেষ ভাতার সুপারিশ করা হবে। প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া এই ভাতা অন্য সামরিক বা বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে না।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের ৮২ হাজার ৯৭৭ কোটির তুলনায় বেশি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।