আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চলতি বছর প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছতে যাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় জ্বালানি পণ্যটির দাম আরো বাড়তে পারে। খবর নিক্কেইএশিয়া।
লন্ডন স্টক এক্সেচেঞ্জের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিচে নেমে গিয়েছিল। কিন্তু ১৪ জুন এশিয়ার সাপ্তাহিক স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম প্রতি এমএমবিটিইউ ১২ ডলার ৬০ সেন্টে পৌঁছায়, যা মার্চের দামের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি।
ডাচ টিটিএফ মার্কেটে প্রাকৃতিক গ্যাসের জুনে সরবরাহ চুক্তিমূল্য প্রতি মেগাওয়াট আওয়ারে ৩৮ ইউরো বা ৪০ ডলারে পৌঁছে, যা এ বছরের সর্বোচ্চ দাম। একই সময়ে হেনরি হাব মার্কেটে প্রতি মিলিয়ন এমএমবিটিইউ গ্যাস পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩ ডলার ১০ সেন্ট চুক্তিমূল্যে বেচাকেনা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দাম বৃদ্ধির পেছনে বৈশ্বিক উচ্চ তাপমাত্রা প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করছে।
চীন বিশ্বের শীর্ষ এলএনজি আমদানিকারক। দেশটি এ বছর ১৯৬১ সালের পর সবচেয়ে গরম বসন্তকাল পার করেছে। চলতি মাসেও রাজধানী বেইজিংসহ সানডং ও হেবেই প্রদেশের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
এদিকে বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধান এলএনজি আমদানিকারক দেশ জাপানেও বছরজুড়ে উচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গত মাসে দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তর জুন-আগস্টে ৫০-৭০ শতাংশ দিনে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে।
অধিক তাপমাত্রার কারণে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদাও বেড়েছে। কয়লা বা পারমাণবিক বিদ্যুতের চেয়ে এর দাম বেশি। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এটি বেশি সাশ্রয়ী। ফলে শীত কিংবা গ্রীষ্মকালে কৃত্রিমভাবে উষ্ণ বা ঠাণ্ডা পরিবেশ তৈরিতে প্রাকৃতিক গ্যাস ভালো বিকল্প।
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) পূর্বাভাস অনুসারে, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে চলতি বছর ৯৩ হাজার ৭০০ কোটি কিউবিক মিটার প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হবে, যা ২০২০ সালের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। এটি বৈশ্বিক প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের প্রায় ২০ শতাংশ।
একটি বাণিজ্য সূত্র বলছে, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে তাপমাত্রা আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন দাম আরো বাড়তে পারে। এক্ষেত্রে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দুশ্চিন্তা আরো বাড়াচ্ছে।
পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার জবাবে ২০২২ সালের গ্রীষ্মকালে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ফলে গ্যাসের দামও বাড়তে শুরু করে। এ কারণে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ জার্মান জ্বালানি কোম্পানি ইউনিপার ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। শেষ পর্যন্ত কোম্পানিটি রাষ্ট্রায়ত্ত হয়ে গেছে। সম্প্রতি সুইডেনের একটি আদালত ইউনিপারকে ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে গ্যাজপ্রমকে নির্দেশ দিয়েছে।
এদিকে গ্যাসের বৈশ্বিক মজুদও স্থিতিশীল। গ্যাস ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইউরোপের তথ্যানুযায়ী, গত সপ্তাহ পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট মজুদ সক্ষমতার ৭৪ শতাংশই পূর্ণ আছে, যা ২০২৩ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের গড়ের তুলনায় ১০ শতাংশীয় পয়েন্টের বেশি। যুক্তরাষ্ট্রেও পাঁচ বছরের গড়ের তুলনায় ২৩ শতাংশ মজুদ বেশি রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।