জুমবাংলা ডেস্ক : বিশাল বাগানের ভিতরে এক-দেড় হাত উঁচু সারি সারি বড়ই গাছ। গাছের ঢালপালা ছড়িয়ে মাটির সাথে মিশে আছে। পাতার ফাঁকে ফাঁকে সবুজ রংয়ের ছোট ছোট বড়ই। বাগানের দুই পাশের সীমানায় কলা গাছ। অপর দুই পাশে লেবু গাছ। বাগানের একটি অংশে দেড়-দুই হাত উঁচু পেয়ারা গাছ। গাছে গাছে ঝুলছে বড়ই, পেয়ারা, লেবু, কলা। উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের ছয়ঘড়িয়া গ্রামে ৬ বিঘা জমিতে মিশ্র ফলের এ বাগান গড়ে তুলেছেন প্রবাস ফেরত নয়ন খাদেম। বাগানে বিভিন্ন জাতের ৫ ’শ বড়ই গাছ, ২ শতাধিক লেবু গাছ, দুই শতাধিক পেয়ারা গাছ, একশ কলা গাছ, রয়েছে মাল্টা গাছও। নয়ন জুড়িয়ে যায় নয়নের ফল বাগান দেখে। নয়ন খাদেম আখাউড়া পৌরশহরের খড়মপুর এলাকার বাসিন্দা।
উদ্যোক্তা নয়ন খাদেমের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি প্রায় ১৬ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। ২০২০ সালে সারা বিশে^ করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে তার কোম্পানীর উৎপাদন কমে যায়। তারও উপার্জন কমে আসে। এক পর্যায়ে ২০২০ সালের মাঝামাঝি দেশে ফিরে আসেন তিনি। দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের অবস্থাও তখন ভালো ছিল না। কি করবেন সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। এভাবে কিছু দিন কেটে যায়। তারপর সিদ্ধান্ত নিলেন ফলের বাগান করবেন। ছোট বেলায় নানার বাড়িতে (আজমপুর) প্রচুর সবজি-ফলের গাছ দেখেছেন। গাছ থেকে পাকা ফল পেড়ে মজা করে খেয়েছেন। গাছ-গাছালির প্রতি ভালোবাসাটা তখন থেকেই ছিল। সেই ভালোবাসা আর নিজের আত্মবিশ^াসের জোরে দেড় বছর আগে ছয়ঘড়িয়া গ্রামে ৬ বিঘা জমি ভাড়া নিয়ে শুরু করেন মিশ্র ফলের বাগান।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত নয়ন খাদেম। দুজন শ্রমিক আগাছা পরিস্কার করছেন। বিশাল বাগান জুড়ে বড়ই, লেবু, পেয়ারা, কলা, মাল্টা গাছ। এক-দেড় হাত লম্বা গাছের ঢালপালা ছড়িয়ে মাটির সাথে মিশে আছে। গাছে গাছে ঝুলছে পেয়ারা, লেবু, কলা, মাল্টা। চার জাতের বড়ই আছে বাগানে। এগুলো হলো ভারত সুন্দরী, বল সুন্দরী, কাষ্মীরি ও টক কূল আছে। এছাড়া কিছু মাল্টা গাছ, কয়েকটি ড্রাগন গাছ আছে। কিছু সবজিও রয়েছে। নয়ন খাদেম বলেন, সৎভাবে উপার্জন করার চিন্তা থেকেই ফলের বাগান করার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু বাগানের জন্য যে পরিমান জায়গার দরকার তা পাচ্ছিলাম না। অবশেষে ছয়ঘড়িয়া গ্রামের লোকজন আমাকে জায়গাটি ব্যবস্থা করে দেয়। জায়গাটিও আমার খুব পছন্দ হয়। চুয়াডাঙ্গা গিয়ে ৪ দিন থেকে একটি নার্সারীতে সব কিছু দেখে বুঝে গাছের চারা সংগ্রহ করি। চারার সাইজ ছিল ৮/৯ ইঞ্চি।
নয়নের সহজ সরল স্বীকারোক্তি কৃষি কাজে পূর্বে কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। ছোট বেলায় দাদাকে কৃষি কাজ করতে দেখেছি। নানার বাড়িতে প্রচুর ফলের গাছ ছিল। সেটাও সাহস জুগিয়েছে। মনে হয়েছে এটা করলে ভালো হবে। তাছাড়া মানুষের বাগান দেখে দেখে শিখেছি। পাশাপাশি ইউটিউবে বাগান দেখে মনে জোর আসে। নিজের মনের ইচ্ছা থেকেই বাগান শুরু করি। নিয়মিত গাছের যত্ন নিতে হয়। পোকা মাকড় দমনে কীটনাশক ঔষধ দিতে হয়। সার দিতে হয়।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এখনও পুঁজি বিনিয়োগ করছি। এবছর ফল বিক্রি করলে আয় ব্যয়ের হিসাব করতে পারবো। ডিসেম্বরের শেষ থেকে ফল বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান তিনি। ফুল আসার পর থেকে বড়ই পাকা পর্যন্ত ৩ মাস সময় লাগে বলে তিনি জানান। দীর্ঘ দিন বিদেশ থেকে এসে এই পরিশ্রমের কাজ বেছে নেওয়া প্রসঙ্গে নয়ন খাদেম বলেন, বিদেশেও আরাম নাই। সেখানেও পরিশ্রম করতে হয়। সব কাজেই পরিশ্রম আছে। গাছ গাছালি করতে আমার ভালো লাগে। পরিশ্রম হলেও কষ্ট লাগে না। হাতের আঙ্গুল দেখিয়ে তিনি বলেন, এই যে দেখেন বড়ই কাঁটা লেগে আঙ্গুল থেকে রক্ত ঝড়ছে। কষ্ট হলেও আমার কষ্ট লাগছে না। কারণ এখন এসব নিয়েই আমার জগত। খুব আশা ভরসা নিয়া বাগানটা করেছি। আল্লাহর রহমতে ভালো ফলন হয়েছে। এলাকার লোকজনও আমাকে সহযোগিতা করে।
ছয়ঘড়িয়া আলহাজ শাহআলম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জিয়াউল হক ভূইয়া বলেন, কৃষি আমাদের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে। অনেকে বিদেশ থেকে এসে কৃষি কাজ করতে লজ্জাবোধ করে। পরিশ্রমের কাজ করতে আগ্রহী হয় না। কিন্তু নয়ন খাদেম যে উদ্যোগ নিয়েছেন এটি সত্যি প্রশংসনীয়। উপজেলা কৃষি অফিসার তানিয়া তাবাসসু বলেন, আমরা চাই নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হোক। বিষয়টি আমার অবগত ছিল না। আজকে জানলাম। আমাদের উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তাকে পাঠাবো ওই বাগানে রোগ বালাই বা পোকা মাকড় বিষয়ে কোন পরামর্শের প্রয়োজন হয় তা করবো। আমি নিজেও গিয়ে দেখবো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।