জুমবাংলা ডেস্ক : ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক রঞ্জন বসু তার লেখায় বলেছেন গত মাসখানেকের ভেতরে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বাইডেন প্রশাসনকে এ বিষয়ে একাধিক ডিপ্লোম্যাটিক নোট বা কূটনৈতিক বার্তা পাঠানো হয়েছে বলে দিল্লিতে এই প্রতিবেদককে আভাস দেওয়া হয়েছে।
তা ছাড়া দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনাতেও প্রসঙ্গটি ভারতের দিক থেকে বারবার উত্থাপন করা হয়েছে। আর এর সবগুলোই হয়েছে জুনের তৃতীয় সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী মোদির বহুল আলোচিত যুক্তরাষ্ট্র সফরের পর, কারণ দিল্লি চায়নি তার আগে বাংলাদেশের প্রসঙ্গটি ওই সফরে ছায়া ফেলুক। ঢাকা ট্রিবিউন/বাংলা ট্রিবিউন
ওই সব নোটে ও আলোচনায় ভারতের পক্ষ থেকে যা বলা হয়েছে, তার সারমর্ম ৪টি পয়েন্টে তুলে ধরেছেন তিনি।
১. যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভারতও চায় বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হোক। কিন্তু আগাম ভিসা খারিজের হুঁশিয়ারি সেই লক্ষ্য অর্জনে কিছুতেই সহায়ক হতে পারে না। বরং এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা ও তার টাইমিং থেকে এটাই মনে হচ্ছে যে এই পদক্ষেপ বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে—যিনি ১৫ বছর ধরে সে দেশে একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও স্থিতিশীল সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন—সুস্থিতিকে অযথা বিচলিত করতে পারে।
২. হাতের কাছেই রয়েছে মিয়ানমারের উদাহরণ, যেখানে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কোনও কাজে তো আসেইনি, বরং সে দেশে গণতন্ত্রকে আরও বিপন্ন করে তুলেছে। এমন একটা ধারণাও আছে যে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইং ও আরও তিন সিনিয়র সেনা কমান্ডারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশনই সে দেশে সামরিক অভ্যুত্থানকে ট্রিগার করেছিল। কারণ তারা ধরেই নিয়েছিল তাদের নতুন করে হারানোর কিছু নেই। শুধু তা-ই নয়, ওই নিষেধাজ্ঞা মিয়ানমারকে আরও বেশি করে ঠেলে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বৈরী দেশ চীনের দিকে। মিয়ানমারে এই বিরূপ অভিজ্ঞতার পরও যুক্তরাষ্ট্র কেন বাংলাদেশেও একই ধরনের এক্সপেরিমেন্টের পথে হাঁটছে, ভারতের পক্ষ থেকে সে প্রশ্নও তোলা হয়েছে।
৩. এমনকি পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা টেনেও বলা হয়েছে, ভারতের পূর্ব ও পশ্চিমের দুই প্রতিবেশীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের দুই রকম মাপকাঠি প্রয়োগ করছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে। পাকিস্তানে যেখানে গুম, নির্যাতন বা গণগ্রেফতারি যথেচ্ছভাবে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র একটি শব্দও খরচ করছে না। অথচ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তারা অতি-সক্রিয়তা দেখাচ্ছে। এই দ্বিচারিতা বাংলাদেশের ভেতরেও যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে কোনও ভালো ছবি তুলে ধরবে না বলেই ভারত মনে করছে।
৪. ভয় দেখিয়ে বা জোর করে কোনও দেশে গণতন্ত্রের প্রসার সম্ভব নয়, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে ভারতের এই বিশ্বাসের কথাও যুক্তরাষ্ট্রকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশেও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে গেলে তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে এবং তাতে সে দেশে মার্কিন স্বার্থের ক্ষতি ছাড়া কোনও লাভ হবে না। বরং যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার অন টেররে (সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ) এবং এশিয়া-প্যাসিফিকের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ যে কত গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হয়ে উঠতে পারে, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়াই ভারত বেশি সমীচীন মনে করছে।
১৫ হাজার টাকার কমে ৫০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার ৫টি ফোন দেখে নিন
তবে একবার মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর তা নির্বাচনের আগে তুলে নেওয়া হবে, সেটা যে সম্ভব নয়, ভারতও তা জানে। কিন্তু ঘনিষ্ঠ বন্ধুদেশ নিয়ে ভারতের মনোভাব জানার পর ওয়াশিংটন সেই নীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে শিথিল ও সংযত হবে, এটাই আপাতত দিল্লির প্রত্যাশা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।