জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশের প্রায় সমান ৫৬ হাজার ৮২৭ বর্গমাইল আয়তনের নেপাল তার প্রায় ৩ কোটি মানুষের খাবার জোগান দিতে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। হিমালয়কন্যা নেপালে বিস্তীর্ণ পাহাড়ই সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। মোট আয়তনের বড় অংশ পর্বত এবং পাহাড়ি উঁচু ভূমি। এ ছাড়া নিচু সমতল ভূমির পরিমাণ খুবই কম। এর মধ্যে নিচু সমতল ভূমি আবার বর্ষা মৌসুমে পাহাড় থেকে নেমে আসা পানিতে তলিয়ে যায় যখন তখন। ফলে নেপালে ২৮ শতাংশ কৃষিজমির মধ্যে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ মাত্র ২১ শতাংশ। এ প্রেক্ষাপটে নেপালের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে আঙিনা-কৃষির বিস্তার ঘটেছে।
প্রতিটি বাড়িতেই কয়েক ধরনের ফসল ও সবজির চাষাবাদ চোখে পড়ল। যেখানে যার যতটুকু জায়গা আছে সেটার সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে নেপালিরা। অন্যদিকে পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে পলিথিনের শেড দিয়ে কিংবা মালচিং পদ্ধতিতে নয়া কৃষিপ্রযুক্তিতে নেমে পড়েছেন কৃষকরা। পর্যটন নেপালের বড় শক্তি হলেও মূলত নেপালের অর্থনীতিতে কৃষির আধিপত্য রয়েছে। নেপালের ৮০ শতাংশের বেশি জনসংখ্যার জীবিকা কৃষি, যদিও মোট চাষযোগ্য জমির মাত্র ২১ শতাংশ। বন্যা, খরা, তাপ এবং ঠান্ডাসহিষ্ণু স্মার্ট জাত রোপণ বা চাষাবাদের মাধ্যমে ন্যূনতম ভূমিতে অতিরিক্ত উৎপাদন বাড়িয়েছে নেপাল। পাহাড়ি উঁচু স্থানে বেড ও মাচা তৈরি করা, পলিথিন নিয়ে বেড, মাচা ঢেকে দেওয়া, আগাম কৃষি আবহাওয়ার সার্বিক তথ্য আগেই কৃষকদের জানিয়ে দেওয়া, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আগে বিভিন্ন ধরনের খাবার সংগ্রহ করে রাখছেন কৃষকরা।
কারণ, মানবসৃষ্ট সমস্যার পাশাপাশি নেপালের কৃষিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগও অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সময়মতো বৃষ্টিপাত না হওয়া, অতিবৃষ্টি, বন্যা, জমির উর্বরতা কমে যাওয়া, নিম্নমানের বীজের সরবরাহ এবং সর্বোপরি পোকার উপদ্রব দেশটির কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় ছোট ছোট জায়গায় ধান ও ভুট্টার আবাদ করতে দেখা গেল। যদিও ধানের চারা সবে লাগানো হয়েছে, তবে ভুট্টার ফসল তোলা হয়েছে। এখন শুধু নিচের ডাঁটাটা আছে দেখার মতো। ঘরের মাচায়, দেয়ালের কার্নিশে ভুট্টার পাকা মোচা ঝুলিয়ে রাখা আছে শুকানোর জন্য। নেপালিদের কষ্টকর এ উৎপাদন-প্রচেষ্টা দেখলে সত্যিই অন্যরকম প্রশান্তি পাওয়া যায়। করোনার সময় অন্য দেশের মতো নেপালের পর্যটনও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তখন কৃষিই বাঁচিয়ে রেখেছিল নেপালের অর্থনীতি। সরকার তখন কৃষি উপকরণ নিশ্চিতে জোর দিয়েছিল। ২০২১ সালের শুরুতে ১১০ কোটি টাকায় বাংলাদেশ থেকে ৫০ হাজার টন সার কেনে নেপাল।
সাধারণত বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর হয়ে তৃতীয় দেশ থেকে সার আমদানি করে নেপাল। করোনার সময় অনেক দেশই স্বাভাবিক সহযোগিতা করার পর্যায়ে ছিল না। নেপালের মানুষ প্রধানতঃ উদ্ভিজ্য আমিষের ওপর নির্ভরশীল। মাংসের মধ্যে মুরগি ও ডিম। মাছের উৎপাদন ও ব্যবহার খুবই কম। নালা, ছড়া কিংবা খরস্রোতা নদীগুলোতে যে মাছ পাওয়া যায় তা খুবই ব্যয়বহুল। এসব মাছ চলে যায় স্থানীয় হোটেলগুলোয়, পর্যটক পরিষেবায়। স্থানীয় যে কয়জনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে, তারা প্রায় সবাই ঠাট্টার ছলে বলেছে, ‘মছলিখোর বাঙালি।’ দীর্ঘদিন ধরে প্রধান খাদ্য চালসহ অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে নেপাল সরকার। কিন্তু বাস্তবে সেটা সম্ভব হয়নি।
মূলত পর্যাপ্ত চাষযোগ্য জমিই নেই তাদের। ফলে নেপালের প্রধান খাদ্য হিসেবে প্রতি বছরই চাল আমদানি করতে হয় প্রতিবেশী ভারত থেকে। তবে ভারত ছাড়াও ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকেও চাল আমদানি করে নেপাল। বছরে গড়ে আড়াই হাজার কোটি রুপির চাল আমদানি করতে হয় তাদের। নেপালের কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশটিতে আবাদি জমি দিনে দিনে কমে যাওয়ায় ধানের চাষও কমে আসছে। কেবল গত দশকেই দেশটিতে ধানের আবাদ কমেছে ১ লাখ হেক্টরের মতো। যেখানে প্রতি হেক্টরে গড়ে প্রায় ৩ দশমিক ৮ টন ধান উৎপাদন হতো।
ফলে দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে দেশটিতে আবাদি জমির পরিমাণ কমে আসছে, যা পরোক্ষভাবে দেশটিকে আমদানির ওপর নির্ভরশীল করে তুলছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, কৃষি হলো নেপালের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের খাদ্য, আয় এবং কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস। এটি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৩৩ শতাংশ সংস্থান করে। স্মার্ট কৃষিপ্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃষিপণ্যে বৈচিত্র্য আনার মধ্য দিয়ে ঘাটতি মোকাবিলার চেষ্টায় আছে নেপাল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।