বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : মহাবিশ্ব কীভাবে তৈরি হয়েছিল এবং কীভাবে নক্ষত্র, গ্রহ, এমনকি আমাদের অস্তিত্বের শুরু কীভাবে? এই বড় প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজতে, আমেরিকা এবং জাপানে বিজ্ঞানীদের দু’টি দল মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনের জন্য দৌড়ে চলেছেন। বিবিসির একটি প্রতিবেদন অনুসারে, উভয় দলই নিউট্রিনো নামক একটি ক্ষুদ্র কণা ব্যবহার করে সবকিছু কীভাবে শুরু হয়েছিল তার রহস্য সমাধানের চেষ্টা করছে। এই মুহূর্তে, জাপানের বিজ্ঞানী দল কয়েক বছর এগিয়ে, কিন্তু আমেরিকান বিজ্ঞানীরা দ্রুত তাদের ধরে ফেলছেন।
দক্ষিণ ডাকোটার কুয়াশাচ্ছন্ন বনের উপরে অবস্থিত একটি গবেষণাগারের গভীরে, আমেরিকান বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় ধাঁধাগুলির একটি সমাধান করার চেষ্টা করছেন, অর্থাৎ মহাবিশ্বের অস্তিত্ব কেন? প্রযুক্তির অগ্রগতি সত্ত্বেও, আমরা এখনও পুরোপুরি বুঝতে পারিনি যে মহাবিশ্ব তৈরি হল কীভাবে বা কেন ছায়াপথ, নক্ষত্র, গ্রহ এবং এমনকি জীবনের অস্তিত্ব। উত্তরের কাছাকাছি পৌঁছনোর জন্য, আমেরিকান এবং জাপানি উভয় দলই উন্নত ডিটেক্টর তৈরি করছে যা নিউট্রিনো অধ্যয়ন করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। একটি অদ্ভুত এবং ক্ষুদ্র উপ-পারমাণবিক কণা যার কাছেই রয়েছে মহাবিশ্বের অস্তিত্বের রহস্যের চাবিকাঠি।
সাউথ ডাকোটার সানফোর্ড আন্ডারগ্রাউন্ড রিসার্চ ফ্যাসিলিটি (SURF)-এর বিজ্ঞানীরা মাটির প্রায় দেড় কিমি নীচে তিনটি বিশাল সুড়ঙ্গ তৈরি করেছেন। এই সুড়ঙ্গগুলি গবেষণার জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ যে লোকেরা এগুলিকে ‘বিজ্ঞানের ক্যাথেড্রাল’ বলে ডাকে। কারণ, সেখানে ডিপ আন্ডারগ্রাউন্ড নিউট্রিনো এক্সপেরিমেন্ট (DUNE) নামে একটি বিশাল পরীক্ষা চলছে। ৩৫টি দেশের ১,৪০০ জনেরও বেশি বিজ্ঞানী এই প্রকল্পে একসঙ্গে কাজ করছেন।
প্রকল্পের পরিচালক ড. জ্যারেট হাইস-এর দাবি, তাঁরা একটি বিশেষ ডিটেক্টর তৈরি করছেন যা মহাবিশ্ব সম্পর্কে ধারণা সম্পূর্ণরূপে বদলে দিতে পারে। পরীক্ষার অংশ হিসেবে বিজ্ঞানীরা ইলিনয় থেকে প্রায় ৮০০ মাইল দূরে সাউথ ডাকোটাতে নিউট্রিনো এবং অ্যান্টিনিউট্রিনোর শক্তিশালী রশ্মি পাঠাবেন।
তাঁরা পর্যবেক্ষণ করতে চান, এই ক্ষুদ্র কণাগুলি যাত্রার সময় কীভাবে আচরণ করে। যদি নিউট্রিনো এবং অ্যান্টিনিউট্রিনো বিভিন্ন উপায়ে পরিবর্তিত হয়, তাহলে এটি বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় রহস্যগুলির মধ্যে একটি ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করতে পারে। বিগ ব্যাংয়ের পরে ম্যাটারেরই কেন শুধু অস্তিত্ব রয়েছে, অ্যান্টিম্যাটারের নেই কেন? এটি বুঝলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে, মহাবিশ্ব এবং জীবনের অস্তিত্ব তৈরি হল কীভাবে।
জাপানে বিজ্ঞানীরা হাইপার-কে নামে একটি নতুন নিউট্রিনো ডিটেক্টর তৈরি করছেন, যা তাদের বর্তমান ডিটেক্টর সুপার-কে-এর নতুন সংস্করণ। এই নতুন গবেষণাগার দেখতে একটি উজ্জ্বল সোনালী কাঠামোর মতো এবং প্রায়শই এটিকে ‘বিজ্ঞানের মন্দির’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়। জাপানি দলটি তিন বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তাদের নিউট্রিনো রশ্মি ছুঁড়তে নিজেদের প্রস্তুত করতে চায়। লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ ড. মার্ক স্কট জানিয়েছেন, হাইপার-কে ডিটেক্টরটি বড় হওয়ায় এটি দ্রুত এবং নির্ভুল ভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।
চূড়ান্ত উত্তর পেতে হয়তো আরও কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। কিন্তু এই বৈজ্ঞানিক দৌড় আমাদের মহাবিশ্বের গোপন রহস্য উন্মোচনের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।