বিনোদন ডেস্ক : পাঁচ বছর বয়স থেকে তাঁর রোল-ক্যামেরা-অ্যাকশনের সঙ্গে ভাব। স্কুলে পড়াশোনা করার সময় থেকেই অভিনেত্রী দিতিপ্রিয়া রায়কে চিনতে শুরু করেন দর্শক। ‘দুর্গা’,‘অপরাজিত’, ‘তোমায় আমায় মিলে’-সহ বেশ কিছু সিরিয়ালে অভিনয় করেছিলেন তিনি। তবে ২০১৭ সালে ‘করুণাময়ী রানি রাসমণি’ সিরিয়ালের মাধ্যমেই টালিগঞ্জে জমি শক্ত হয় তাঁর। এই মুহূর্তে স্নাতকের তৃতীয় বর্ষ। সিরিয়াল শেষ হওয়ার পর এখন তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি মন দিয়েছেন ওয়েব সিরিজ় এবং সিনেমায়। এত বছরে ইন্ডাস্ট্রিতে থাকার দৌলতে শিশুশিল্পী দিতিপ্রিয়া থেকে তিনি এখন নায়িকা দিতিপ্রিয়া। তাঁর নতুন সিরিজ় ‘রাজনীতি’ মুক্তির পর আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন তাঁর নায়িকা হয়ে ওঠার গল্প।
প্রশ্ন: চুলের নতুন কায়দা, পায়ে হিল জুতো, লিনেন ট্রাউজ়ারের সঙ্গে মানানসই শার্ট— ‘নায়িকা’ হওয়ার কি কোনও বিশেষ প্রস্তুতি নিচ্ছেন?
দিতিপ্রিয়া: এই রে! আমি এত কিছু তো বুঝি না। আমি নায়িকাসুলভ হয়ে উঠেছি কি না, তা দর্শক বলবেন। আমি তো শুধু মন দিয়ে অভিনয় করে যেতে চাই। নায়িকা হওয়ার জন্য আলাদা করে কিছু করছি না। তবে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগে হয়তো একসঙ্গে অনেকগুলো প্রজেক্টে রাজি হয়ে যেতাম। এখন অনেকটা পরিণত হয়েছি। তাই সব কাজেই ‘হ্যাঁ’ করে দিই না। একটা কাজ নিয়েই অনেক ভাবনাচিন্তা করার চেষ্টা করছি।
প্রশ্ন: আপনি কোন কাজ করবেন অথবা করবেন না সেই সিদ্ধান্ত কে নেন?
দিতিপ্রিয়া: ছোটবেলায় তো সব সিদ্ধান্ত মা নিত। এখন আমি অনেকটা বড় হয়েছি। তাই কেউ কাজের কথা বললে প্রথমেই গল্পের সারমর্ম চেয়ে নিই। যদি সেটা পড়ে ভাল লাগে, তখনই এগোই। না হলে নয়। তবে এখন সব সিদ্ধান্তই আমার নেওয়া।
প্রশ্ন: সিরিয়াল শেষ হওয়ার পর অনেকগুলো সিরিজ়ে অভিনয় করে ফেললেন। সিনেমা করেছেন একটা। ‘আয় খুকু আয়’ তেমন ভাবে সাফল্য পেল না বলে কি সিরিজ়ের পাল্লা ভারী?
দিতিপ্রিয়া: সিরিজ়ে অভিনয়ের একটা মজা আছে। সিরিয়ালের মতো বড় হয় না। আবার সিনেমার মতো ছোট হয় না। আমি নিজে যে হেতু সিরিজ় দেখতে পছন্দ করি, তাই সেই কাজটা করতেও ভাল লাগে। আমি অভিনেতা। সব মাধ্যমে কাজ করতেই ভাল লাগে। তবে এখনও পর্যন্ত ওয়েব প্ল্যাটফর্মের জন্য যা যা গল্প পেয়েছি, তা আমার অন্য কোনও মাধ্যমের প্রস্তাবের চেয়ে বেশি পছন্দ হচ্ছে। তাই হয়তো এই মাধ্যমে একটু বেশি মনোযোগ দিচ্ছি। আর যে ছবিগুলোর প্রস্তাব এসেছিল তার একটারও গল্প আমার ভাল লাগেনি।
প্রশ্ন: যে হেতু অনেক কম বয়স থেকে অভিনয় করছেন, এখনও আপনাকে তাই সবাই ছোট বলেই ধরে নেন। সে ক্ষেত্রে ‘না’ বলতে সমস্যা হয় না?
দিতিপ্রিয়া: ছোট হই আর বড় হই, ‘না’ বলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মন থেকে যে কাজটা করতে পারব না সেটায় রাজি না হওয়াই ভাল। এখনও পর্যন্ত যাঁদের আমি না বলেছি, তাঁদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক কিন্তু খারাপ হয়ে যায়নি। তখন আমায় অফার করা চরিত্রটা হয়তো ভাল লাগেনি। আগামী দিনে ভাল কোনও সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই কাজ করব।
প্রশ্ন: ইদানীং আপনার অভিনীত ‘রাশি’ চরিত্রটি নিয়েও চর্চা হচ্ছে…।
দিতিপ্রিয়া: আজকাল অনেকে ফোন করে বলছেন, “আমি কি রাশি ব্যানার্জির সঙ্গে কথা বলতে পারি?” সত্যি বলছি, এই জনপ্রিয়তা ‘রানি রাসমণি’ সিরিয়ালটি করার পর এই প্রথম পেলাম। এত বছর পর আমার অভিনীত চরিত্র যে এত চর্চিত হচ্ছে, সেটা শুনতে ভাল লাগছে। আর কৌশিকদার (গঙ্গোপাধ্যায়, পরিচালক) সঙ্গে কাজ করা তো এমনিই আমার স্বপ্ন ছিল। ‘রাজনীতি’-তে এত ভাল অভিনেতাদের ভিড়েও যে সবাই আমায় আলাদা করে প্রশংসা করছেন, সেটা শুনেই ভাল লাগছে।
প্রশ্ন: রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তৈরি এই সিরিজ়। গল্পের দৌলতে কয়েক দিন এমন একটা চরিত্রযাপন করে কী উপলব্ধি করলেন?
দিতিপ্রিয়া: আমি যদি অভিনেত্রী না হতাম, তা হলে হয়তো আমি রাজনীতিক হতে চাইতাম। কিন্তু যে হেতু এই পেশায় আছি, বিভিন্ন চরিত্রকে কাছ থেকে দেখতে পাচ্ছি। তা দেখে আমার মনে হয়েছে রাজনীতি থেকে দূরে থাকাই ভাল।
প্রশ্ন: প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রেই কিন্তু রাজনীতি হয়। ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার সুবাদে তেমন আঁচ কখনও পেয়েছেন?
দিতিপ্রিয়া: প্রত্যক্ষ ভাবে হয়তো কিছু হয়নি। তাই সে ভাবে কিছু বলতে পারব না। আমরা সিরিজ়ে বলছি যে, আমরা হয় রাজনীতির শিকার কিংবা শিকারি। যদি পরোক্ষ ভাবে কেউ যদি আমার সঙ্গে রাজনীতি করে থাকে, সেটা বোধহয় বুঝতে পারিনি। তারা হয়তো এতটাই ভাল রাজনীতিবিদ, আমায় বুঝতে দেয়নি।
প্রশ্ন: আপনার বয়স এখন প্রায় ২১। আপনার বয়সি বাকি মেয়েদের তুলনায় আপনার ঝুলিতে প্রাপ্তির পরিমাণ অনেক বেশি। এখনও কোন জিনিসটা পেয়ে বা দেখলে আপনার উত্তেজিত লাগে?
দিতিপ্রিয়া: কলকাতার রাস্তায় গাড়ি করে ঘুরতে ঘুরতে কেউ যদি আমায় বাবুঘাটে ছেড়ে দেয়, আমি এখনও উত্তেজিত হয়ে যাই। এক বার কেউ বললেই হল, ‘‘বাবুঘাট যাবি?’’ ওখানে ফুচকা খাওয়া, নৌকা চড়া— সবটাই দারুণ লাগে। উচ্চ মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশের পর মা আমায় বাবুঘাটে খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানেও অনেকে আমায় দেখে বলেছিলেন, ‘‘আরে, তোমার তো আজ রেজাল্ট বেরিয়েছে!’’ আমি সেগুলোও খুব উপভোগ করি। আমি কিন্তু বাকিদের মতো ছাপোষা জীবনই কাটাই।
প্রশ্ন: জীবনে এখনও কী কী পাওয়া বাকি আছে বলে মনে হয়?
দিতিপ্রিয়া: অনেক কিছু বাকি! প্রচুর পড়াশোনা করতে চাই। বাইরে থেকে একটা ডিগ্রি অর্জন করার ইচ্ছে আছে আমার। মাস্টার্স শুরু করব। এখনও পড়া বাকি।
প্রশ্ন: অভিনেতারা নিজেদের ভাবমূর্তি নিয়ে সব সময় সচেতন। অনেক ছোট থেকে ইন্ডাস্ট্রিতে আছেন। ভাবমূর্তি সামলে দুষ্টুমি করার সুযোগ পেয়েছেন?
দিতিপ্রিয়া: আসলে আমার বাড়িতে সবটাই খুব সহজ। তাই যে অর্থে দুষ্টুমি বলছেন, তা করলেও বকুনি খাওয়ার সুযোগ খুবই কম। আর তা ছাড়া আমি নিয়ম মেনে জীবন কাটাতেই ভালবাসি। তাই খুব বেশি এ দিক-ও দিক করিনি কখনও। তবে জীবনে পাগলামি করার ইচ্ছে আছে। অ্যাডভেঞ্চার আমার খুব পছন্দের। আমি এখনও প্র্যাঙ্ক কল করে থাকি।
প্রশ্ন: কলেজ শেষ হওয়ার পথে। তারকা তকমা থাকায় ছেলেরা কি মিশতে ভয় পান? আপনার কাউকে পছন্দ হলে সহজে বলতে পারেন?
দিতিপ্রিয়া: স্কুলে এ সব ছিল না। নির্দ্বিধায় এসে যে কেউ প্রোপোজ় করতে পারত। কিন্তু যত বড় হচ্ছি, আমার মুখটা কেমন গম্ভীর হয়ে যাচ্ছে। যদিও সেটা উপর উপর, তা-ও অনেকে হয়তো ভয় পায়।
আমার কাজ নিয়ে সমালোচনা হোক চাই, বললেন ‘নষ্টনীড়’ সিরিজ়ের পরিচালক অদিতি
প্রশ্ন: এই গাম্ভীর্যে কি কোনও উপকার হয়েছে?
দিতিপ্রিয়া: কিছু কিছু পরিস্থিতি এড়িয়ে যেতে এটা খুবই সাহায্য করে। আবার অনেক সময় বুঝতে পারি পাশের লোকটা আমায় পছন্দ করে। কিন্তু বলতে পারছে না। আর আমি নিজে থেকে হিন্ট দিতে পারি না। সেটা আমার সমস্যা।
প্রশ্ন: আপনার কাউকে পছন্দ হলে কী করেন?
দিতিপ্রিয়া: আমার কখনও প্রথম ঝলকে ভাল লাগা তৈরি হয়নি। আমি এখনও পর্যন্ত কখনও সম্পর্কে জড়াইনি। কারণ এক বার ঢুকে পড়লে বার হওয়া বেশ কঠিন। এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও মনের মানুষ পাইনি, কাউকে দেখে মনে হয়নি এই মানুষটাকে ছাড়া চলতে পারব না। যে দিন কোনও মানুষকে দেখে মনে হবে যে সে না থাকলে কষ্ট হবে, সে দিনই সম্পর্কে জড়াব। আর তা ছাড়া প্রেমে থাকতে হলে যে দায়িত্ববোধ থাকা দরকার, সেটা আমার এখনও তৈরি হয়নি। যে দিন সেই অনুভূতিটা আসবে, তখন আর কিছু ভাবব না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।