জুমবাংলা ডেস্ক : বর্তমান সরকারের রেলপথ উন্নয়নের ফলে নতুন নতুন জেলা যুক্ত হচ্ছে রেল নেটওয়ার্কে। রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সারাদেশের ৫৫টি জেলায় যুক্ত হবে রেলপথ। নতুন করে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, নড়াইল, কক্সবাজার, বাগেরহাট, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি ও মাগুরা এই ১১টি জেলায় যুক্ত হচ্ছে রেলপথ।
তবুও পিরোজপুর, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, শেরপুর, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, সুনামগঞ্জ ও মেহেরপুর এই ৯টি জেলা এখনো রেল নেটওয়ার্কের পরিকল্পনার বাইরে রয়েছে। সারাদেশে নেটওয়ার্ক বৃদ্ধির জন্য ২০১৪ সালে রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করে রেলওয়েকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু গত ১০ বছরেও প্রধানমন্ত্রীর সেই ঘোষণা বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, বর্তমানে সারাদেশে মোট রেলপথ ৩,৫৫৩ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে রয়েছে ১৭৪২ দশমিক ১৯ কিলোমিটার। এ ছাড়া পশ্চিমাঞ্চলে রয়েছে ১৮১১ দশমিক ৫৯ কিলোমিটার। সারাদেশে ডুয়েল গেজ রেলপথ রয়েছে মাত্র ৮৪২ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার। মিটার গেজ রেলপথ রয়েছে ১৭০২ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এর আগে সারাদেশে রেলপথ ছিল ২ হাজার ৮৭৭ কিলোমিটার দশমিক ১০ কিলোমিটার। এ পর্যন্ত ৬৭৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটারের নতুন রেল রুট নির্মাণ করা হয়েছে বলে রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান।
পদ্মারেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা-ভাঙ্গা-যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের ফলে নতুন করে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল এই চারটি জেলা যুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে নতুন করে কক্সবাজার এবং খুলনা থেকে মংলা পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের মাধ্যমে বাগেরহাট জেলা নতুন করে যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি ভাঙ্গা-বরিশাল-পায়রা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নতুন করে বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠিসহ আরও ৪টি জেলা যুক্ত হবে রেল নেটওয়ার্কে। এ ছাড়া ফরিদপুরের মধুখালী থেকে মাগুরা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নতুন করে মাগুরা জেলা রেলপথ নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে বলে রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান।
এ বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহদাত আলী বলেন, ‘নতুন রেলপথ চালু হওয়া ও চলমান রেলপথের কাজ শেষ হলে সারাদেশে ৫৫টি জেলা রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে। নতুন আরও ১১টি জেলা রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। এখনো পার্বত্য অঞ্চলসহ কিছু জেলা রেল নেটওয়ার্কের বাইরে।’ তবে পর্যায়ক্রমে সবগুলো জেলা রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, আগে ৪৪টি জেলা যুক্ত ছিল রেল নেটওয়ার্কে। বর্তমানে ৫০টি জেলায় আছে রেলপথ। পদ্মারেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা-ভাঙ্গা-যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথ গত বছর অক্টোবরে চালু হয়েছে। যশোর পর্যন্ত বাকি অংশ চলতি বছরের জুনে খুলে দেওয়া হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন করে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল চারটি জেলায় যুক্ত হয়েছে রেলপথ।
এ ছাড়া চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের মাধ্যমে নতুন করে কক্সবাজার এবং খুলনা থেকে মংলা পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের মাধ্যমে বাগেরহাট জেলা নতুন করে যুক্ত হয়েছে রেল নেটওয়ার্কে। এই রেলপথ দু’টি গত বছর সেপ্টেম্বরে চালু করা হয়। পাশাপাশি ভাঙ্গা-বরিশাল-পায়রা পর্যন্ত ২০৫ কিলোমিটার রেলপথ ও ফরিদপুরের মধুখালী থেকে মাগুরা পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৯ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। এর ফলে নতুন করে মাগুরা, রবিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠিসহ আরও ৫টি জেলায় যুক্ত হবে রেল নেটওয়ার্ক। এই দু’টি রেলপথ চালু হলে সারাদেশের ৫৫টি জেলা রেল নেটওয়ার্কে আওতায় আসবে।
১০ বছরেও হয়নি চার অঞ্চল ভাগ ॥ রেলওয়ের নেটওয়ার্ক বৃদ্ধির ফলে জনবলের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে রেলওয়ে পরিচালনায় অনেক সমস্যা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। রেলওয়ের জনবল সংকট প্রকট। কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে রেলস্টেশন। অথচ নতুন করে চারটি বিভাগ ও ৮টি অঞ্চল ঘোষণা করা হলেও জনবল চাহিদা দেওয়া হচ্ছে কম। রেলওয়ের বর্তমানে জনবল চাহিদা রয়েছে ৬৮ হাজার। নতুন বিভাগ ও অঞ্চল জন্য জনবল চাহিদা দেওয়া হয় ৫৭ হাজার। বর্তমানে রেলওয়ে জনবল আছে ৪৭ হাজার ২৭৫ জন। বর্তমানে সারাদেশে ৩৫৫৩ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। ভবিষ্যতে তা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৪ হাজার ৭০০ কিলোমিটারে। কিন্তু নতুন প্রক্রিয়ায় ১১ হাজার জনবল কম ধরা হয়েছে। এই জনবল দিয়ে রেলবিভাগ পরিচালনা সম্ভব নয়। তাই জনবল কাঠামোর কারণে চার অঞ্চল ভাগ প্রক্রিয়া আটকে আছে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণার ১০ বছর পরও প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন হয়নি বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা জানান, ২০১৪ সালে ২৩ অক্টোবর রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলওয়েকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সারাদেশের প্রত্যেক জেলাকে রেলের নেটওয়ার্কে আনতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী রেলওয়েকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-সিলেট জেলাসমূহ নিয়ে পূর্বাঞ্চল, পাকশি ও লালমনিরহাট নিয়ে পশ্চিমাঞ্চল, ঢাকা-ময়মনসিংহ নিয়ে উত্তরাঞ্চল এবং রাজবাড়ী-খুলনা বিভাগ নিয়ে গঠিত হবে দক্ষিণাঞ্চল। এতে চট্টগ্রাম হবে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর, উত্তরাঞ্চলের ময়মনসিংহ, পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী এবং দক্ষিণাঞ্চলের সদরদপ্তর হবে ফরিদপুরে। বর্তমানে পূর্ব ও পশ্চিম নামে দু’টি অঞ্চলে পরিচালিত হচ্ছে। এতে চট্টগ্রাম, ঢাকা, পাকশি ও লালমনিরহাট বিভাগের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে।
রেলওয়ে চারটি অঞ্চলে ভাগ হলে সিলেট, ময়মনসিংহ, রাজবাড়ী ও খুলনা নতুন করে বিভাগীয় কার্যক্রম পরিচালিত হবে। বছর দুই আগে রেলওয়েকে চার অঞ্চলে ভাগ করার প্রক্রিয়া ও জনবল চাহিদা নিয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান খড়সা প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে রেলওয়ের জনবল চাহিদা দেওয়া হয়েছে ৫৭ হাজার। বর্তমানে রেলওয়ে জনবল আছে ৪৭ হাজার ২৭৫ জন। কিন্তু জনবল চাহিদা ৬৮ হাজার। নতুন প্রক্রিয়ায় ১১ হাজার জনবল কম ধরা হয়েছে। জনবল কাঠামোর কারণে ভাগ প্রক্রিয়ায় তেমন অগ্রগতি নেই। চার অঞ্চলের নাম ঘোষণা করা হলেও জনবল সংকটের কারণে গত ১০ বছরেও চূড়ান্ত প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়নি বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর রেলওয়েকে ৪টি বিভাগে ভাগ করতে রেল মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কমল কৃষ্ণকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। কমিটি বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও সিলেটের জেলাগুলো নিয়ে পূর্বাঞ্চল, পাকশি ও লালমনিরহাট নিয়ে পশ্চিমাঞ্চল, ঢাকা-ময়মনসিংহ নিয়ে উত্তরাঞ্চল এবং রাজবাড়ী-খুলনা নিয়ে দক্ষিণাঞ্চল গঠনের একটি প্রস্তাবনা দেয়। এতে চট্টগ্রাম হবে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর, উত্তরাঞ্চলের ময়মনসিংহ, পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী এবং দক্ষিণাঞ্চলের সদরদপ্তর হবে ফরিদপুরে। এর আগে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের সমন্বয়ে পূর্বাঞ্চল এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সমন্বয়ে পশ্চিমাঞ্চল পুনর্গঠনের সুপারিশ করা হয়।
এক্ষেত্রে পূর্বাঞ্চলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম এবং পশ্চিমাঞ্চলে পাকশী ও লালমনিরহাট বিভাগ বহাল রাখার সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি নবগঠিত ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের সমন্বয়ে উত্তরাঞ্চল এবং বরিশাল ও খুলনা বিভাগের সমন্বয়ে দক্ষিণাঞ্চল গঠনের সুপারিশ করা হয়। এক্ষেত্রে সিলেটে উত্তরাঞ্চলের হেড অফিস ও ময়মনসিংহ পরিচালন বিভাগ এবং ফরিদপুরে দক্ষিণাঞ্চলের হেড অফিস ও রাজবাড়ী, যশোর, বরিশালে তিনটি পরিচালন বিভাগ সৃষ্টি করার সুপারিশ করে মন্ত্রণালয়ের কমিটি। তবে এ নিয়ে রেলপথ ও রেল বিভাগ ভিন্ন ভিন্ন মত দেয়।
এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘রেলওয়েকে চার অঞ্চল ভাগ করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। ইতোমধ্যে অঞ্চল বিভক্তির বিষয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। এই প্রতিবেদনে চার অঞ্চলের জনবল চাহিদা ও অবকাঠামোসহ আনুষঙ্গিক বিষয় সুপারিশ করা হয়েছে। আশা করছি, চলতি বছরের মধ্যে অঞ্চল বিভক্তি বিষয়ে জনবল কাঠামো, বেতন ও অবকাঠামো নির্ধারণ করে প্রস্তাবটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।’ সূত্র : জনকণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।