জুমবাংলা ডেস্ক : নামজারির ফি নিয়ে দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এবার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। জনস্বার্থে জারি করা নতুন পরিপত্রে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, নির্ধারিত ফি ছাড়া অতিরিক্ত এক টাকাও নেওয়া যাবে না। এ নির্দেশনা সর্বক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে প্রযোজ্য হবে।
নির্ধারিত ফি নির্ধারণ ও অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতি
পরিপত্র অনুযায়ী, নামজারির আবেদন করতে গিয়ে প্রথমেই আবেদনকারীকেই কোর্ট ফি বাবদ ২০ টাকা ও নোটিশ জারি বাবদ ৫০ টাকা মিলিয়ে মোট ৭০ টাকা অনলাইনে প্রদান করতে হবে। এই টাকা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস যেমন বিকাশ কিংবা নগদের মাধ্যমে পরিশোধযোগ্য।
জমির যাবতীয় দলিল যেমন হস্তান্তর দলিল, দাতার বায়া দলিল, এবং হালনাগাদ খতিয়ান আবেদনকারী সংগ্রহ করে সরাসরি এসিল্যান্ড অফিসে যেতে পারবেন। এসিল্যান্ড অফিসের আওতাধীন আউটসোর্সিং কম্পিউটার অপারেটরদের সাহায্যেও এসব আবেদন করা যাবে, তবে এতে নির্ধারিত সার্ভিস চার্জ আলাদাভাবে দিতে হবে।
আবেদনের পরবর্তী ধাপ ও অনুমোদনের ফি
নামজারির অনুমোদন প্রাপ্তির পর এসিল্যান্ড অফিস থেকে মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে নির্দিষ্ট তারিখে হাজির হতে বলা হবে। এরপর রেকর্ড সংশোধন ও হালনাগাদকরণ বাবদ আবেদনকারীকে ১০০০ টাকা জমা দিতে হবে। রেকর্ড সংশোধন বলতে পূর্ববর্তী মালিকের নামে থাকা রেকর্ডকে কর্তন করে বর্তমান মালিকের নামে হালনাগাদ করাকেই বোঝানো হয়েছে।
এছাড়াও নামজারীকৃত খতিয়ান সরবরাহ বাবদ প্রতি কপির জন্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ আবেদনকারীকে সর্বমোট ১১৭০ টাকা অনলাইনে জমা দিতে হবে, যা ছাড়া এক টাকাও বেশি নেওয়া যাবে না বলে পরিপত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।
ডিসিআরের বৈধতা ও গ্রহণযোগ্যতা
অনেক আবেদনকারী অনলাইনে পাওয়া কাগজপত্রের বৈধতা নিয়ে সন্দিহান থাকেন। এ বিষয়ে পরিপত্রে পরিষ্কার বলা হয়েছে, অনলাইন ডিসিআর-এর কিউআর কোড যুক্ত কপি পুরোপুরি বৈধ ও আইনসম্মত। ডিসিআরের সমপর্যায়ে এর গ্রহণযোগ্যতা থাকবে এবং সেটি অগ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে না।
দালালদের থেকে সাবধান থাকার নির্দেশনা
ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, নামজারি করতে গিয়ে যদি নির্ধারিত ফি’র বেশি কেউ দাবি করে, সে ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। এসিল্যান্ড অফিস ব্যতীত অন্য কোনো দালাল, মহুরি বা উকিল নামজারি করার আইনগত এখতিয়ার রাখে না। তারা ‘অননুমোদিত ব্যক্তি’ হিসেবে বিবেচিত হবে।
সাধারণত আউটসোর্সিং সেবা নিতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা অতিরিক্ত খরচ হতে পারে, তবে মোট ১১৭০ টাকার বাইরে এর কোনো অতিরিক্ত খরচ সরকারি পর্যায়ে অনুমোদিত নয়। কিন্তু দালালের মাধ্যমে আবেদন করলে অনেক সময় ৮০০০ থেকে ১০০০০ টাকা পর্যন্ত দাবি করা হয়।
চিঠি কার্যকর এবং সবার জন্য বাধ্যতামূলক
এই আদেশ ইতোমধ্যেই কার্যকর হয়েছে এবং মন্ত্রিপরিষদের সচিব পর্যায় থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগ পর্যন্ত তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত জনস্বার্থে জারি করেছে এবং তা মেনে চলা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ভূমি অফিসে হয়রানি ও অতিরিক্ত খরচ বন্ধে ভূমি মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তির বার্তা। নির্ধারিত ১১৭০ টাকার বাইরে কেউ অর্থ দাবি করলে এখনই অভিযোগ জানিয়ে নেওয়া যাবে আইনগত ব্যবস্থা। ভূমি সংক্রান্ত দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অবসানে এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।