জুমবাংলা ডেস্ক : দেশে মূল্যস্ফীতির হার এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। এতে সীমিত আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। সরকারও প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় আগাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে টাকার সরবরাহ ৫ শতাংশ কমিয়ে ১১ শতাংশ নির্ধারণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় অর্ধেকের (জানুয়ারি-জুলাই) যা ছিল ১৬ শতাংশ। পাশাপাশি ব্যাংকের সুদহারের ওপর কড়া নজরদারি রাখতে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, এবারের মুদ্রানীতিতে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। সুদহারের সীমা তুলে ইন্টারেস্ট রেট করিডরে বেঞ্চমার্ক পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে।
বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেওয়া হলেও বেসরকারি ঋণের ওপর কড়া নজরদারি রাখতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের আর্থিক নীতির সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ ধরা হয়েছে। যদিও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদন অনুযায়ী গত মে মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
একইভাবে জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। এসব মুদ্রানীতিতে বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ ধরে লক্ষ্য অর্জনের মাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এ ছাড়া রিজার্ভের প্রকৃত হিসাবায়ন, অর্থাৎ রিজার্ভ থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া ঋণবাবদ অর্থ বাদ দিয়ে দেখানো হচ্ছে।
গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি, ডলার ও টাকার সংকট। এসবই এখন অর্থনীতির প্রধান তিন সমস্যা। আমানতের প্রবৃদ্ধি কমায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে টাকার সংকট মেটাবে। এতে ডলার-সংকট আরও বাড়বে। আগে বিদেশি মুদ্রার ওপর নির্ভর করে মুদ্রানীতি করা হতো। নানা ভুল নীতির কারণে এখন বিদেশি মুদ্রা দেশে আসা কমে গেছে। এখন টাকা ছাপিয়ে সরবরাহ করলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে, যা পুরো অর্থনীতিকে আরও চাপে ফেলবে। তবে এবারও যদি কম টাকা ছাপানো হয়, তবে মূল্যস্ফীতি কমবে না। এটা মন্দের জন্য ভালো বলা যেতে পারে। ঋণের সুদহারের সীমা পুরোপুরি তুলে দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা একটা ভালো দিক।’
সূত্র জানায়, রেপো সুদহারের গড়ের সঙ্গে একটা হার যোগ করে তিন মাস পর পর সুদের হার নির্ধারণ করা হবে। এটা বাজারভিত্তিক হবে। বাজার ঠিক করবে, সুদের হার বাড়বে নাকি কমবে।
জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) সময়ের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকঋণের সুদহার, বাজারে টাকার সরবরাহ, ডলার-সংকট—এসব মুদ্রানীতির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার মজুত (রিজার্ভ), প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স), বিনিয়োগ, মূল্যস্ফীতি ইত্যাদি বিষয়ে মুদ্রানীতিতে পদক্ষেপ নিতে নানা সুপারিশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে টাকা ধার দেওয়া (রেপো) ও টাকা তুলে নেওয়ার (রিভার্স রেপো) সুদহারও বাজারভিত্তিক করা হচ্ছে। এ ব্যবস্থায় রেপোর সুদহার কলমানি সুদের সঙ্গে ওঠানামা করবে। উল্লেখ্য, এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকের কাছ থেকে যে সুদে টাকা ধার নেয়, সেটাই কলমানি সুদ। কলমানি সুদের হার বাজারভিত্তিক হলেও তা ৭ শতাংশের ওপরে উঠতে দেয় না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু সম্প্রতি তা ৯ শতাংশের কাছাকাছি ঠেক খেয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।