শফিকুল ইসলাম : কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা এবং তাদের কাজে উৎসাহ দিতে সরকার সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খানকে চেয়ারম্যান করে জাতীয় পে-কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপনে নতুন পে-কমিশনকে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এটিকে ঘিরে কর্মচারীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ ও প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। তাদের বিশ্বাস, কমিশন তাদের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে, একটি বাস্তবসম্মত বেতন কাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে। একাধিক সরকারি কর্মচারী আলাপকালে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ২০১৫ সালের পে-স্কেল অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। গত ২৪ জুলাই অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন পে- কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলা উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাওয়ায় নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণের জন্য এই পে-কমিশন গঠন করা হয়েছে। এটি সরকারি কর্মচারীদের জন্য নবম পে-কমিশন।
সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কর্মরত একাধিক কর্মচারীর সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, নতুন পে-কমিশনের কাছে সরকারি কর্মচারীদের প্রত্যাশা হচ্ছে—দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, বিশেষ করে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য এটি তাদের প্রথম চাওয়া। এছাড়া, চিকিৎসা ভাতা, আবাসন ভাতা, পরিবহন ভাতা ইত্যাদি ২০১৫ সালের অষ্টম পে-স্কেল জারির পর আর পুনর্নির্ধারণ করা হয়নি। এগুলো বাড়ানো এখন সময়ের দাবি বলেও মনে করেন তারা।
পে-কমিশনে কারা আছেন
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৭ জুলাই ২২ সদস্যের পে-কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান, সরকারি মঞ্জুরিপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণে ২২ সদস্যের পে-কমিশন গঠন করেছে সরকার। কমিশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ থেকে ৬ মাসের মধ্যে সরকারের কাছে এই সুপারিশমালা জমা দিতে হবে। এছাড়া কমিশন বিদ্যমান বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পর্যালোচনা করে সুপারিশমালা জমা দেবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ধারা ১৫-এ দেওয়া ক্ষমতাবলে জাতীয় বেতন স্কেলের আওতাভুক্ত প্রজাতন্ত্রের সব শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫ গঠন করা হয়েছে। সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খানকে সভাপতি করে তিন সদস্যের কমিশনের পূর্ণকালীন সদস্য করা হয়েছে সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ আলী খান, সাবেক হিসাব মহানিয়ন্ত্রক মো. মোসলেম উদ্দীন এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত ফজলুল করিমকে।
১৮ সদস্যের কমিশনের খণ্ডকালীন সদস্যরা হলেন— সাবেক মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক আহমেদ আতাউল হাকিম, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জাহিদ হোসাইন, সাবেক সচিব ড. জিশান আরা আরাফুন্নেসা, মেজর জেনারেল (অব.) এ আই এম মোস্তফা রেজা নূর, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো হাবিবুর রহমান, সাবেক গ্রেড-১ কর্মকর্তা মিজু তহমিনা বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মাকছুদুর রহমান সরকার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানিমেল ব্রিডিং অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সামছুল আলম ভূঁঞা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. একেএম. মাসুদ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ. কে. এনামুল হক, সশস্ত্র বাহিনীর একজন প্রতিনিধি (প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত), আইন ও বিচার বিভাগের একজন প্রতিনিধি- আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় (আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক মনোনীত), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি (জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত), জননিরাপত্তা বিভাগের একজন প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (জননিরাপত্তা বিভাগ কর্তৃক মনোনীত), ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ-এর প্রেসিডেন্ট, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রবিধি, বাস্তবায়ন, আইন ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান)।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কমিশনের সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন—সরকারের একজন সচিব অথবা অতিরিক্ত সচিব। যিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। কমিশন প্রয়োজনে খণ্ডকালীন সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবেন।
পে-কমিশনের কর্মপরিধি
প্রজ্ঞাপনে কমিশনের কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে— সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান, সরকারি মঞ্জুরিপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিদ্যমান বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পর্যালোচনা করে কমিশন কী কী বিষয়ে সুপারিশ করছে তা প্রজ্ঞাপনে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে—কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য একটি সময়োপযোগী ও যথোপযুক্ত বেতন কাঠামো নির্ধারণ। বিশেষায়িত চাকরিধারীদের বেতন কাঠামো নির্ধারণ। বেতন-ভাতার ওপর আরোপযোগ্য কর (আয়কর) জাতীয় বেতন স্কেলের আওতাভুক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্তৃক সরাসরি পরিশোধ করার ক্ষেত্রে বেতন কাঠামো স্থিরীকরণ। বেতন-বহির্ভূত অন্যান্য সুবিধা: যেমন- বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা, যাতায়াত, আপ্যায়ন, প্রেষণ, কার্যভার, মহার্ঘ, উৎসব এবং শ্রান্তিবিনোদন ইত্যাদি ভাতা নিরূপণ। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন সমন্বয়ের পদ্ধতি নিরূপণ।
এছাড়া যথোপযুক্ত বা সময়োপযোগী পেনশনসহ অবসর সুবিধাদি নির্ধারণ। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের মান নিরূপণ, মূল্যায়নপূর্বক বেতন-ভাতা কাঠামোয় প্রতিফলন। সরাসরি সেবা (টেলিফোন, গাড়ি, মোবাইল ফোন ইত্যাদি) সংক্রান্ত প্রাধিকারগুলো আর্থিক সুবিধায় নগদায়ন এবং রেশন সুবিধা যৌক্তিকীকরণ। উচ্চতর গ্রেড ও ইনক্রিমেন্ট প্রাপ্তিতে বেতনক্রম নিরীক্ষাক্রমে কোনও অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে তা দূরীকরণের সুপারিশ প্রণয়ন।
সুপারিশ প্রণয়নে কমিশনের বিবেচ্য বিষয়
সুপারিশ প্রণয়নে কমিশন যেসব বিষয় বিবেচনা করবেন সেগুলো হলো—পিতা-মাতাসহ অনূর্ধ্ব ছয় জনের একটি পরিবারের জীবনযাত্রার ব্যয়। অনূর্ধ্ব দুই সন্তানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সরকারের সম্পদ পরিস্থিতি, প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য সম্পদের প্রয়োজনীয়তা। সংশ্লিষ্ট সংস্থা, প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের অবস্থা। দারিদ্র্য নিরসনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় সম্পদ জোগান ও ক্রমান্বয়ে স্বনির্ভরতা অর্জনের উপায়। জনপ্রশাসনে মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা ও কর্মোদ্যোগ বাড়িয়ে সেবার মান উন্নয়ন।
সূত্র জানায়, একটি সঠিক পে-স্কেল কর্মীদের সন্তুষ্টি বাড়াতে সাহায্য করে। কারণ তারা জানে যে তাদের কাজের জন্য একটি নির্দিষ্ট বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। পে-স্কেল কর্মীদের তাদের কাজের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দিতে উৎসাহিত করে, কারণ তারা জানে তাদের কাজের মূল্যায়ন করা হবে এবং সে অনুযায়ী তাদের বেতনও বাড়বে। পে-স্কেল কর্মীদের জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহে সহায়তা করে। মূল্যস্ফীতি এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক বিষয় বিবেচনা করে পে-স্কেল নির্ধারণ করা হয়, যা কর্মীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়তা করে।
সরকারি চাকরিজীবীদের দাবিগুলো কী
ইতোমধ্যে সরকারি চাকরিজীবীরা বিভিন্ন উপায়ে তাদের দাবিগুলো উপস্থাপন করেছেন—যেসব দাবিতে এতদিন আন্দোলন- সংগ্রাম করলেও তা পূরণ হয়নি। তাদের দাবিগুলো হচ্ছে—গঠিত পে-কমিশনের সুপারিশ যেন স্বল্পতম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়। এর আগে অন্তর্বর্তী কর্মচারীদের জন্য ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা প্রদান করত হবে। সরকার চাপের মুখে পড়ে ১০-১৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা দিয়েছে— যা কর্মচারীদের বৈষম্য বাড়িয়েছে। ১০ ধাপে বেতন স্কেল নির্ধারণসহ পে-কমিশনে কর্মচারী প্রতিনিধি রাখতে হবে। সচিবালয়ের মতো সব দফতর, অধিদফতরের পদ-নাম পরিবর্তনসহ দশম গ্রেডে উন্নীত করা এবং এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রণয়ন করতে হবে। টাইম স্কেল সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালসহ বেতন জ্যেষ্ঠতা পুনর্বহাল, বিদ্যমান গ্রাচুইটি/আনুতোষিকের হার ৯০ শতাংশের বদলে ১০০ শতাংশ নির্ধারণ ও পেনশন গ্রাচুইটি ১ টাকার সমান ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের আপিল বিভাগের রায় বাস্তবায়নসহ সহকারী শিক্ষকদের বেতন নিয়োগবিধি ২০১৯-এর ভিত্তিতে দশম গ্রেডে উন্নীতকরণ ও অধস্তন আদালতের কর্মচারীদের বিচার বিভাগীয় সহায়ক কর্মচারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আউটসোর্সিং পদ্ধতি বাতিলপূর্বক উক্ত পদ্ধতিতে নিয়োগকৃত ও উন্নয়ন খাতের কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে। ব্লক পোস্টে কর্মরত কর্মচারীসহ সব পদে কর্মরতদের পদোন্নতি বা ৫ বছর পর পর বেতন স্কেলের উচ্চতর গ্রেড প্রদান করতে হবে। বাজার মূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক সব ধরনের ভাতা পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর ও অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর নির্ধারণ করতে হবে।
সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের নেতার বক্তব্য
জানতে চাইলে সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের নেতা নিজাম উদ্দিন বলেন, অবশ্যই এবারের পে-কমিশন কর্মচারীবান্ধব হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ সরকার একটি নতুন পে-কমিশন গঠন করেছে, যারা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কাঠামো পর্যালোচনা করবে এবং প্রয়োজনে নতুন বেতন কাঠামো সুপারিশ করবে। এই পে-কমিশন গঠনের মূল উদ্দেশ্য হলো— দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পর্যালোচনা করা এবং তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সহায়তা করবে।
কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্য
নতুন পে-কমিশনের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান বলেন, সবেমাত্র দায়িত্ব পেলাম। সবাই মিলে পূর্ণাঙ্গ কমিশনের বৈঠক করে প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কাজ শুরু করবো। অবশ্যই আমরা ভালো কিছুর চেষ্টা করবো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।