বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্মে নিরাপত্তা ব্যবস্থার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ আপডেট আনল গুগল। এটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারকারীদের জন্য বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে। এই নিরাপত্তা আপডেটের মাধ্যমে গুগল যে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন এনেছে, তা পুরোনো ফোনগুলোতে নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে এবং ব্যবহারকারীদের নতুন ফোন কেনার জন্য বাধ্য করবে।
গুগল জানিয়েছে, কোম্পানিটি এখন ‘অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহারকারীদের প্রতারণা বা ম্যালওয়্যার ছড়ানোর চেষ্টা করা অপরাধীদের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে লড়াই করছে এবং ব্যবহারকারীদের এই ধরনের অপব্যবহার প্রতিরোধে টুল প্রদান করছে।’ গুগলের প্লে ইনটিগ্রিটি এপিআই ব্যবহার করে, অ্যাপ ডেভেলপাররা এখন নিশ্চিত করতে পারবেন যে, ব্যবহারকারীরা অ্যান্ড্রয়েড ফোনে তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ স্টোর বা অ-অফিশিয়াল উৎস থেকে অ্যাপ ইনস্টল বা আপডেট না করেন। এতে ম্যালওয়্যার এবং ক্ষতিকর অ্যাপ থেকে ফোন সুরক্ষিত থাকবে। তবে এই নতুন নিরাপত্তা ফিচারটি অ্যান্ড্রয়েড ১৩ বা তার পরবর্তী সংস্করণে পাওয়া যাবে, যার মানে পুরোনো সংস্করণের ডিভাইসে এটি কার্যকর হবে না।
নতুন নিরাপত্তা ফিচারটির মাধ্যমে ফোনগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করেছে গুগল। তবে এটি পুরোনো ফোন ব্যবহারকারীদের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ অ্যান্ড্রয়েড ১৩ বা তার পরবর্তী সংস্করণে এই ফিচার কাজ করবে। পুরোনো ফোনগুলো নতুন নিরাপত্তা আপডেট পাবে না। ফলে এই ফোনগুলোতে নতুন নিরাপত্তা ফিচার বা উচ্চ নিরাপত্তা সংবলিত অ্যাপ চালানো সম্ভব হবে না। বিশেষত, ব্যাংকিং বা সংবেদনশীল তথ্য সংক্রান্ত অ্যাপস এর জন্য এটি একটি বড় সমস্যা, যার কারণে পুরোনো ফোন ব্যবহারকারীদের নতুন মডেলের ফোন কিনতে বাধ্য করা হবে।
গুগল জানায়, ‘প্লে ইনটিগ্রিটি’ ফিচারটি ব্যবহারকারীকে অনুমোদনহীন বা ক্ষতিকর অ্যাপ ইনস্টল করতে বাধা দেয়, যার ফলে ফোনের নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায় এবং ম্যালওয়্যার বা অন্য ধরনের বিপজ্জনক সফটওয়্যার ইনস্টল হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। এই ফিচার ব্যবহারে করার অ্যাপগুলো অন্যান্য অ্যাপের তুলনায় ৮০ শতাংশ কম অননুমোদিত সফটওয়্যার বা তৃতীয় পক্ষের অবৈধ অ্যাপস ইনস্টল করে।
নতুন আপডেটের মাধ্যমে, এটি ‘হার্ডওয়্যার-বাকড সিকিউরিটি সিগন্যাল’ প্রযুক্তি ব্যবহার করবে, হ্যাকারদের সুরক্ষা ব্যবস্থা ভাঙা আরও কঠিন এবং ব্যয়বহুল করে তুলবে। এই সিগন্যালগুলো ডিভাইসের নিরাপত্তা শক্তি পরীক্ষা করবে এবং নিশ্চিত করবে যে, ফোনটি সাম্প্রতিক নিরাপত্তা আপডেট পেয়েছে কিনা। বিশেষ করে ব্যাংকিং এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত অ্যাপস, সরকারি অ্যাপস এবং এন্টারপ্রাইজ অ্যাপস এর জন্য এটি আরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
গুগল এই আপডেটের মাধ্যমে পুরোনো এবং নতুন ফোনগুলোর মধ্যে একটি স্পষ্ট বিভাজন তৈরি করেছে। অ্যান্ড্রয়েড ১২ বা তার নিচের অপারেটিং সংস্করণে চালিত পুরোনো ডিভাইসগুলো এই শক্তিশালী নিরাপত্তা ফিচার পাবে না।
বর্তমানে প্রায় ৫৫ শতাংশ অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস অ্যান্ড্রয়েড ১৩ বা তার পরবর্তী সংস্করণে চলছে। তবে অবশিষ্ট এক থেকে দুই বিলিয়ন সক্রিয় অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস এখনো পুরোনো সংস্করণে চলছে। এই বিষয়টি অ্যান্ড্রয়েডের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে।
জিম্পেরিয়ামের ‘গ্লোবাল মোবাইল থ্রেট’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৪ শতাংশ অ্যান্ড্রয়েড ফোন যেগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেগুলো আপডেট করা যাবে না এবং ফলে সেগুলো সাইবার হামলার শিকার হতে পারে আইফোনের ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ১ শতাংশ।
ভাকিয়া ভিত্তিক সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানি ইসেটের বিশেষজ্ঞ জেক মুর বলেছেন, ‘যখন ফোন এবং ট্যাবলেটগুলো প্যাচ ম্যানেজমেন্টের বাইরে চলে যায়, তখন তারা সকল নিরাপত্তা আপডেট পায় না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডিভাইসগুলো নতুন ভ্যালিড প্যাচ আপডেট না পেলে সহজেই সাইবার আক্রমণের শিকার হতে পারে।’
এদিকে, জিম্পেরিয়ামের প্রধান বিজ্ঞানী নিকো চিয়ারাভিগ্লিও বলেন, ‘অ্যান্ড্রয়েডের ওপেন ইকোসিস্টেমের কারণে ডিভাইসগুলো নিরাপত্তার উদ্বেগ তৈরি করে। অন্যদিকে আইওএস-এর কড়া অ্যাপ নিরাপত্তাও অনেক সময় ম্যালওয়্যার শনাক্ত করতে পারে না।
গুগল নিশ্চিত করেছে যে, নতুন প্লে ইনটিগ্রিটি এপিআই এখন থেকে অ্যাপ ডেভেলপারদের জন্য উপলব্ধ এবং ২০২৫ সালে মে থেকে এটি বাধ্যতামূলক হবে। বিশেষত ব্যাংকিং এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত অ্যাপগুলো দ্রুত ফিচারটি গ্রহণ করবে। ফলে পুরোনো ডিভাইসগুলোতে আপডেট না পেলে সেগুলো ব্যবহারে আরও বেশি সমস্যা তৈরি হবে।
এটি স্পষ্ট যে,২ ০২৫ সালের মধ্যে পুরোনো অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন ফোন কেনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। কারণ নতুন নিরাপত্তা আপডেটগুলো পুরোনো ডিভাইসে ঠিকভাবে কাজ করবে না।
তথ্যসূত্র: ফোর্বস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।