আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। স্থানীয় সময় আজ বুধবার (১৭ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো, ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইরান। জবাবে ইসরায়েলও প্রতিশোধ নেয়ার উপায় খুঁজছে, সাজাচ্ছে নানা পরিকল্পনা। এরইমধ্যে নতুন করে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে- সপ্তাহান্তে ইসরায়েলের ওপর ইরানের হামলার পর তারা এখন ইরানের বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের দিকে নজর দিচ্ছে।
এদিকে, ইসরায়েল ইতোমধ্যেই তার মিত্রদের প্রতি তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে। মূলত ইরানের এই ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ গত বছরের অক্টোবরে শেষ হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞাগুলো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার জন্য একটি বিস্তৃত চুক্তির সাথে যুক্ত ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ এবং যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নিষেধাজ্ঞা বজায় রেখেছে এবং বিভিন্ন সময়ে নতুন নিষেধাজ্ঞাও যুক্ত করেছে।
প্রসঙ্গত, সিরিয়ার রাজধানীতে তেহরানের কনস্যুলেটে সাম্প্রতিক হামলার জবাবে স্থানীয় সময় গত শনিবার গভীর রাতে তিন শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে ইরান হামলা চালায়।
পরবর্তীতে স্থানীয় সময় সোমবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি বলেছেন, ইরানের হামলার জবাব দেয়া হবে।
মূলত গত ১ এপ্রিল সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে হামলার প্রতিক্রিয়া হিসাবে ইসরায়েলে রাতারাতি ৩০০টিরও বেশি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার কথা জানিয়েছে তেহরান। এর বেশিরভাগই ইরানের অভ্যন্তর থেকে নিক্ষেপ করা হয়। তবে লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্রই ভূপাতিত করে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্রবাহিনী।
নজিরবিহীন সেই হামলার জবাবে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল শুধুমাত্র কূটনৈতিক ভাবে আক্রমণ চালিয়েই পাল্টা জবাব দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ৩০টিরও বেশি দেশকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন।
এছাড়া ইরানের প্রধান সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি – ইসলামী বিপ্লবী গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-কে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে মনোনীত করার আহ্বানও জানিয়েছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই আইআরজিসিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে মনোনীত করলেও যুক্তরাজ্য এখনও তা করেনি।
এমন অবস্থায় মঙ্গলবার বক্তৃতাকালে মার্কিন অর্থমন্ত্রী ইয়েলেন বলেছেন: ‘নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে, আমি পুরোপুরি আশা করি, আমরা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ইরানের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞার ব্যবস্থা নেব।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আগে থেকে বলি না। তবে ইরানের সন্ত্রাসী অর্থায়ন ব্যাহত করার সমস্ত বিকল্পই আমার টেবিলে রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ইরানের তেল রপ্তানি এমন ‘একটি সম্ভাব্য ক্ষেত্র যা আমরা টার্গেট করতে পারি’। তার ভাষায়: ‘স্পষ্টতই, ইরান এখনও কিছু পরিমাণ তেল রপ্তানি চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা হয়তো আরও কিছু করতে পারি।’
ইয়েলেন বলেন, ইরানকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই আর্থিক নিষেধাজ্ঞাগুলোকে ব্যবহার করছে। পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি এবং সংস্থাকে লক্ষ্য করে আরোপিত এই নিষেধাজ্ঞা প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোকে অর্থায়ন করার এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধকে সমর্থন করার ক্ষমতাকে ব্যাহত করার কাজ করছে।
ইরানের ওপর বিদ্যমান মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ইতোমধ্যে দেশটির সাথে প্রায় সমস্ত আমেরিকান বাণিজ্য নিষিদ্ধ করেছে।
এদিকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো ‘ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন কর্মসূচির’ পাশাপাশি বিপ্লবী গার্ড এবং ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে লক্ষ্যবস্তু করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি, আমাদের মিত্র এবং অংশীদাররা শিগগিরই তাদের নিজস্ব নিষেধাজ্ঞাগুলো আরোপ করবে।’
অন্যদিকে ইইউর শীর্ষ কূটনীতিক জোসেফ বোরেল বলেছেন, কিছু সদস্য দেশ ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়ানোর জন্য বলেছে। তিনি বলেন, তিনি ‘নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করার জন্য’ ইইউয়ের কূটনৈতিক পরিষেবার কাছে অনুরোধ পাঠাবেন।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ দেয়া এক পোস্টে ‘নিষেধাজ্ঞা আরোপের এই ইতিবাচক প্রবণতাকে’ স্বাগত জানিয়েছেন।
এদিকে ইসরায়েলে ইরানের সর্বশেষ হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের উত্তেজনা এড়াতে বিশ্বনেতারা সংযমের আহ্বান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একটি ফোন কলে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে চলমান পরিস্থিতিতে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধির বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন।
কেরিয়ারের ৩৭ বছর অতিক্রান্ত, এবার তেলুগু সিনেমায় পা রাখছেন অক্ষয়
ডাউনিং স্ট্রিটের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘তিনি (সুনাক) জোর দিয়ে বলেছেন, উত্তেজনার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি কারও স্বার্থে ভালো কিছু নয় এবং এটি মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তাহীনতাকে আরও গভীরে নিয়ে যাবে। জয়ের জন্য মাথা ঠান্ডা রাখার সময় এখন।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।