আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের গুজরাট রাজ্যের বাসিন্দা ২৪ বছরের ক্ষমা বিন্দু। সম্ভবত ক্ষমাই ভারতের প্রথম নারী যিনি ‘নিজগামিতা’ বা সোলোগ্যামি–র পথে হেঁটেছেন। কারণ তিনি পৃথিবীতে সব থেকে ভালবাসেন নিজেকে। হয়তো অনেকেই বাসে! কিন্তু এই সাহস প্রকাশ্যে দেখিয়েছেন ক্ষমা। মহারাজা সায়াজিরাও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিদ্যায় স্নাতক হন ক্ষমা। পড়াশোনার পাশাপাশি মডেল হিসেবেও কাজ করতেন তিনি।
পড়াশোনার পাট চুকিয়ে ইচ্ছে হয় চাকরি করবেন। সেই মতো এক বেসরকারি সংস্থাতে প্রবেশ। তবে মডেলিংয়ের কাজ বন্ধ করেননি তিনি। তার আসল নাম সৌম্যসরিতা দুবে। চাকরি আর মডেলিংয়ের পাশাপাশি আরও একটি কাজ নিশ্চুপভাবে করে চলেছিলেন তিনি। দেশে কোনও নারী এর আগে নিজেকে বিয়ে করেছেন কি না, তা নিয়ে নেটমাধ্যমে খোঁজ চালাচ্ছিলেন ক্ষমা। কিন্তু অনেক খুঁজেও এ রকম কাউকে তিনি খুঁজে পাননি।
ক্ষমা উভকামী। পুরুষ এবং নারী, উভয়ের প্রতিই তার সমান আকর্ষণ। তবে অন্যের প্রেমে নয়, নিজেরই প্রেমে পড়ে যান ক্ষমা। যৌন এবং মানসিক আকর্ষণ অনুভব করেন নিজের প্রতিই। ক্ষমা বুঝেছিলেন তিনিই হতে পারেন দেশের প্রথম মহিলা, যিনি নিজেই নিজেকে বিয়ে করছেন। অর্থাৎ, পথে প্রচুর বাধা আসতে পারে, এ-ও বুঝে গিয়েছিলেন। তবে হাল ছাড়েননি ক্ষমা। রাতের পর রাত জেগে দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা বাবা এবং আহমেদাবাদে থাকা মাকে রাজি করানোর চেষ্টা করে যান তিনি। প্রথমে রাজি না থাকলেও অবশেষে তারা রাজি হন। অনেকটাই চাপমুক্ত হন তিনি।
এর পরের যাত্রাও খুব একটা সহজ ছিল না। বিয়ে করবেন বললে তো আর বিয়ে করা যায় না। বিয়ের সরঞ্জাম থেকে শুরু করে পুরোহিত, সব জোগাড় করতে কালঘাম ছোটে ক্ষমার। কারণ নিজেকে বিয়ে করবেন শুনেই নাক সিঁটকোচ্ছেন অনেকে। তবে হাল ছাড়েননি ক্ষমা। অবশেষে জোগাড় হয় পুরোহিতও। বিয়ের তারিখ ঠিক হয় ১১ জুন। ঠিক করেন গুজরাতের গোত্রীর এক মন্দিরে বিয়ে করবেন নিজেকে। বিয়ে হবে বৈদিক আচার-অনুষ্ঠান মেনে। তবে তত দিনে তার নিজেকে বিয়ে করতে চলার খবর রাষ্ট্র হয়েছে। কিছু বাহবা, কিছু ব্যক্তির বাঁকা নজর, রোষ— সব কিছুই পেতে শুরু করেন ক্ষমা। এমনকি হিন্দুত্ববাদীদের কাছ থেকে হুমকিও আসে ক্ষমার কাছে।
হঠাৎই বিয়ের দিন দু’দিন এগিয়ে ৮ জুনই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন ক্ষমা। কারণ? অতি কষ্টে জোগাড় করা পুরোহিতও জানিয়ে দেন যে, তিনি বিয়ে দিতে আসবেন না। সম্ভবত এর কারণ, হিন্দুত্ববাদীদের রোষের মুখে পড়ার ভয়। বন্ধুদের উপস্থিতিতে বুধবার সন্ধ্যায় নিজের সিঁথিতে সিঁদুরদান করেন ক্ষমা। ক্ষমা ইনস্টাগ্রামে গায়ে হলুদ এবং মেহেন্দি অনুষ্ঠান-সহ বিভিন্ন আচারের ছবি শেয়ার করেছেন। ক্ষমার পরিবার এবং বন্ধুদেরকেও তাল মিলিয়ে আনন্দ করতে দেখা গিয়েছে এই সব ছবিতে। একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, যজ্ঞের আগুনের চারপাশে ঘুরে নিজের সঙ্গেই সাত পাকে বাঁধা পড়ছেন ক্ষমা।
বিয়ে শেষে ক্ষমা জানান, কোনও বিতর্ক এড়াতেই তিনি বিয়ে এগিয়ে আনেন। বলেন, এই বিয়েতে বর এবং পুরোহিত ছাড়া বাকি সব কিছুই ছিল। নিয়ম অনুযায়ী, তিনি পূজা করে নিজের গলায় মালা পরান। এমনকি নিজের জন্য লেখা সাতটি ব্রতও পাঠ করেন। তার দীর্ঘ দিনের স্বপ্নপূরণ হল বলেও জানিয়েছেন ক্ষমা। বিয়ের পর মধুচন্দ্রিমাতেও যাবেন ক্ষমা। নিজের সঙ্গেই। তিনি জানিয়েছেন, মধুচন্দ্রিমা যাপন করতে খুব শীঘ্রই দু’সপ্তাহের জন্য গোয়া যাচ্ছেন তিনি। সমস্ত আচারবিধি মেনে নিজেকে বিয়ে করলেও তার বিয়ে কোনও আইনি বৈধতা পাবে না। তাই আইনি জটিলতাও নেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।