বিনোদন ডেস্ক : আশি এবং নব্বইয়ের দশকে বলিউডের অভিনেতাদের মধ্যে সাফল্যের চূড়ায় উঠেছিলেন গোবিন্দ অরুণ আহুজা ওরফে গোবিন্দ। দর্শকের কাছে অভিনয় দক্ষতার জন্য ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছেন। টানা ১৪-১৫ বছর চুটিয়ে কাজ করার পরেও তিনি ধীরে ধীরে ইন্ডাস্ট্রি থেকে হারিয়ে যান।
এর জন্য নাকি দায়ী গোবিন্দ নিজেই। এমনটাই মনে করেন বলিপাড়ার বহু তারকা। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা তিনু বর্মা গোবিন্দের ‘অপেশাদার’ আচরণ নিয়ে মুখ খোলেন। কথা প্রসঙ্গে ‘অচানক’ ছবির শুটিংয়ের কথা উল্লেখ করেন তিনু।
১৯৯৮ সালে এই ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। গোবিন্দের বিপরীতে ‘অচানক’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল মনীষা কৈরালাকে। তিনুও এই ছবির কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে, শুটিংয়ে কখনও সঠিক সময়ে আসতেন না গোবিন্দ।
তিনুর দাবি, ‘অচানক’ ছবির প্রযোজক বিজয় গালানিও গোবিন্দের এমন আচরণে বিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন। গোবিন্দ ব্যাপারটি আঁচ করে নিজে থেকেই কথা দেন যে, পরের দিন সঠিক সময়ে ফ্লোরে আসবেন। তার জন্য কাউকে অপেক্ষা করতে হবে না।
গোবিন্দের কথামতো হোটেলে একটি ঘর বুক করেন প্রযোজক বিজয়। বিজয় ভেবেছিলেন, হোটেলের ঘরে আগের দিন রাতে অভিনেতা বিশ্রাম নিয়ে সেখান থেকেই শুটিংয়ের উদ্দেশে রওনা দেবেন।
পরের দিন সকালে শুটিং ফ্লোরে সবাই তৈরি হয়ে অপেক্ষা করছেন। গোবিন্দ আসার আগেই তারা পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও গোবিন্দের দেখা মিলল না। বার বার ফোনে যোগাযোগ করেও পাওয়া গেল না অভিনেতাকে।
হোটেলে খোঁজ নিয়ে প্রযোজক বিজয় জানতে পারলেন যে, গোবিন্দ আগের দিন হোটেলে আসেনইনি। তাহলে তিনি গেলেন কোথায়?
তিনুর বক্তব্য, সকাল গড়িয়ে দুপুর পেরিয়ে গিয়েছিল। তবুও গোবিন্দের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। মাঝখানে অভিনেতার এক সহকারী ফোনে জানালেন যে, গোবিন্দ শুটের জন্য ১২টার সময় রওনা হয়েছেন। তা শুনে ফ্লোরের সকলে তৎপর হলেও সব আয়োজন বৃথা যায়।
গোবিন্দের অপেক্ষায় আর বসে না থেকে সে দিনের মতো শুটিং বাতিল করে দেন প্রযোজক বিজয়। তারপর তিনুর সঙ্গে গাড়িতে বাড়ির পথে যাত্রা শুরু করেন তিনি। রাস্তায় একটি দুধের দোকান দেখে গাড়ি দাঁড় করান তিনু।
দোকানের সামনে একটি কলেজ ছিল। কলেজের চারদিকে ভিড় জমা হয়েছে দেখে দোকানদারকে জমায়েতের কারণ জিজ্ঞাসা করেন তিনু। দোকানদার জানান, কলেজের ভেতর ছবির শুটিং চলছে। এই কথা শুনে তিনুর কৌতূহল জাগে।
তিনুর দাবি, কলেজের দেওয়ালে চড়ে তিনি যা দেখলেন তাতে অবাক হয়ে যান। তার চোখের সামনে তখন গোবিন্দ। নাচের দৃশ্যে অভিনয় করছেন তিনি। তিনুর সঙ্গে চোখাচোখি হওয়ায় সামনে থেকে সরে যান গোবিন্দ।
তিনু বহুক্ষণ শুটিংয়ের এলাকায় দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু গোবিন্দকে তিনি আর দেখতেই পাননি। তিনুর দাবি, এরপর গোবিন্দ তার মেক আপ আর্টিস্টকে শুটিং ফ্লোরে পাঠিয়েছিলেন তিনু সেখানে রয়েছেন কিনা তা দেখার জন্য।
গোবিন্দের এরকম আচরণ দেখে শুটিং ফ্লোর থেকে সরে যান তিনু। দোকানে এসে বিজয়কে পুরো বিষয়টি জানান। তিনুর দাবি, ‘এক দিনে তিন তিনটি ছবির শুটিং করবেন বলে কথা দিয়ে রাখতেন গোবিন্দ।’
কিন্তু গোবিন্দ নিজের দেওয়া কথা রাখতে পারতেন না। শুটিংয়ের জন্য সঠিক সময়ে আসতে পারতেন না তিনি। অভিনেতার এই আচরণ বলিউড জগতের প্রযোজক এবং পরিচালকদের নজরে পড়তে শুরু করে।
গোবিন্দকে ‘অপেশাদার’ বলে দাগিয়ে ফেলেন বলিপাড়ার একাংশ। এই আচরণ নিয়ে কাজ করা সম্ভব নয় বলেই অভিনেতার কাছে কাজের সুযোগও কম আসতে শুরু করে। তিনুর দাবি, এই কারণেই ইন্ডাস্ট্রি থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছেন। না হলে গোবিন্দ আজও বলেউড কাঁপাতেন।
শুধু তিনু একাই নন, গোবিন্দের অপেশাদারিত্ব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন ডেভিড ধাওয়ানের মতো পরিচালকও। বাদ পড়েননি অনুরাগ বসুও। বলিপাড়ায় কানাঘুষা শোনা যায় যে, ‘জগ্গা জাসুস’ ছবিতে একটি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য গোবিন্দকে বেছে নিয়েছিলেন অনুরাগ। কিন্তু গোবিন্দ সেটে সঠিক সময়ে আসতেন না বলে কাজ শুরু করার পরেও মাঝপথে থামিয়ে দিতে হয়।
গোবিন্দের চরিত্র নিয়েও বলিপাড়ায় কম বিতর্ক হয়নি। বলি ইন্ডাস্ট্রির একাংশের দাবি, গোবিন্দ যে সহ অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করতেন, তার সঙ্গেই পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তেন অভিনেতা। নীলম কোঠারি এবং রানি মুখার্জীর সঙ্গে সম্পর্কের কথা প্রায়ই শোনা যায়। অধিকাংশের দাবি, অভিনেত্রীদের সঙ্গে বড় পর্দার আড়ালেও দেখা করতেন গোবিন্দ।
কানাঘুষা শোনা যায়, রানির সঙ্গে একটি বিলাসবহুল হোটেল থেকে বেরোতে দেখা গিয়েছিল গোবিন্দকে। বিয়ে হওয়ার পরেও রানির সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে রয়েছেন তা নিয়ে গোবিন্দকে কটু কথাও শুনতে হয়েছে। এমনকি, তার স্ত্রী সুনীতার সঙ্গে সম্পর্কে টান পড়েছিল গোবিন্দর।
গোবিন্দের ‘অপেশাদার’ আচরণের জন্য যে তাকে কোনো পরিচালক কাজ দিচ্ছেন না এই প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মুখ খুলেছিলেন গোবিন্দ নিজেই। অভিনেতার বক্তব্য, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ বদলায়, তাদের মতও বদলায়। এ ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। গোবিন্দের দাবি, বহু বছর কাজ করে কেউ সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেলে অনেকেই চান অন্ধকারে টেনে নিয়ে যেতে।
এক সময় তিনি যাদের কাছের মানুষ মনে করেছিলেন, তারাই অভিনেতার নামে গুজব ছড়াচ্ছেন বলে জানান গোবিন্দ। তিনি নিজের চেষ্টায় এত বছর কাজ করে এসেছেন কিন্তু কেউ তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি বলেও মন্তব্য করেছিলেন অভিনেতা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।