লাইফস্টাইল ডেস্ক : ডিজটাল দুনিয়ায় বদলে গেছে মানুষের জীবনধারা। মানুষের জীবন এখন গ্যাজেটের জালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গিয়েছে। আমাদের চারপাশে সারাক্ষণ যেসব গ্যাজেট থাকে, যেমন- মোবাইল, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, ট্যাব— এই সবকিছুর থেকেই নির্গত হয় ব্লু লাইট। এমনকি ঘরে যে এলইডি লাইড থেকে, সেই আলোও ত্বকের বারোটা বাজানোর জন্য যথেষ্ট।
মোবাইল, ল্যাপটপ, ইয়ারপ্লাগের মতো আধুনিক নানা যন্ত্রের সঙ্গে দিনের বেশির ভাগ সময় কাটাতে গিয়ে নিজের অজান্তে নীল আলো শরীরের ক্ষতি করছে।
ল্যাপটপ, মোবাইলের অত্যধিক ব্যবহার অকালবার্ধক্যের কারণ হতে পারে, জানাচ্ছে গবেষণা। দীর্ঘক্ষণ যন্ত্রের সংস্পর্শে থাকার ফলে মাথাব্যথা, মাইগ্রেনের মতো কিছু সমস্যা দেখা যায়। সম্প্রতি একটি গবেষণা বলছে, যন্ত্রের অতিরিক্ত ব্যবহার চেহারায় বয়সের ছাপ ফেলে দিতে পারে।
সম্প্রতি ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন এজিং’ মেডিকেল পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে, মোবাইল, ল্যাপটপের মতো যন্ত্রের, নীল আলো ডেকে আনতে পারে অকালবার্ধক্য।
আমেরিকার ‘ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটি’-র গবেষকরা জানিয়েছেন, টিভি, ল্যাপটপ এবং ফোনের মতো দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি থেকে আসা নীল আলো ত্বক এবং শরীরের বিভিন্ন কোষের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এমনকি, যন্ত্রের অত্যধিক ব্যবহারে তা পৌঁছে যায় স্নায়ু পর্যন্ত। ফলে ত্বকের প্রতিটি কোষ তার নিজস্ব সজীবতা হারাতে শুরু করে। স্নায়ুর কর্মক্ষমতাও ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
নীল আলোর সংস্পর্শে আসার ফলে শরীরে গ্লুটামেটের মাত্রা কমতে শুরু করে। যা অকালবার্ধক্যের একটি অন্যতম কারণ হতে পারে। এ ছাড়া সারাক্ষণই যন্ত্রপাতির মধ্যে থাকার ফলে শরীরে স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যায়। যা আরও দ্রুত বার্ধক্যের দিকে নিয়ে যায়। গবেষকরা আরও জানাচ্ছেন, মোবাইলের নীল আলো ত্বকের পুষ্টি মেলানিন উৎপাদনে বাধা দেয়।
চিকিৎসকের মতে, নীল আলোর মাধ্যমে রেটিনাল বিষাক্ততা সর্বজনীন। এটি যে কোনো ধরনের কোষ মেরে ফেলতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরের ক্যানসার কোষ, হৃৎপিণ্ডের কোষ আর নিউরনসহ বিভিন্ন কোষে নীল আলো দেওয়ার পর গবেষকরা দেখেন যে এগুলোও রেটিনাল বিষাক্ততার সঙ্গে মেলার ফলে মারা যায়। রেটিনাল ছাড়া শুধু নীল আলো বা নীল আলো ছাড়া রেটিনাল কোনো কোষে কোনো প্রভাব ফেলে না।
বিষাক্ত নীল আলো থেকে চোখ বাঁচাতে অতিবেগুনি রশ্মি ও নীল আলো ঠেকায় এমন চশমা পরতে ও অন্ধকারে সেলফোন বা ট্যাবলেটের দিকের না তাকানোর পরামর্শ দিয়েছেন এই গবেষক।
দীর্ঘক্ষণ এই নীল আলো ত্বকের ওপর পড়লে স্কিন সেল বা ত্বকের কোষ নষ্ট হয়ে যায়। বয়সের আগেই মুখে দেখা দিতে পারে বলিরেখা।
নীল আলো এমন একপ্রকার রশ্মি যার রঙ নীল কিংবা বেগুনি ঘেঁষা। একে হাই এনার্জি ভিসিবল লাইটও বলা হয়। ব্লু লাইটের রেডিয়েশন দৈর্ঘ্য কম কিন্তু এর শক্তি অনেক বেশি। আমাদের আশপাশে থাকা সমস্ত ডিজিটাল ডিভাইস থেকেই এই নীল আলো নির্গত হয়। বিশেষ করে রাতের বেলা যখন কেউ ঘরের আলো বন্ধ করে মোবাইল স্ক্রল করেন, কিংবা ল্যাপটপে কাজ করেন, তখন এইসব ডিভাইস থেকে নির্গত ব্লু লাইট বয়স, ত্বক ও চোখের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। নীল আলো ডেকে আনতে পারে অকালবার্ধক্য।
ক্ষতির দিক বিবেচনা করলে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি ও ডিজিটাল ডিভাইসের নীল রশ্মি প্রায় একই কাজ করে। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০ মিনিট ভরদুপুরের চড়া রোদে থাকা আর আট ঘণ্টা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা সমান।
নীল রশ্মির জন্য হতে পারে হাইপারপিগমেন্টেশন, ইনফ্ল্যামেশন। সেই সঙ্গে ত্বকে খুব সহজেই পড়তে পারে বয়সের ছাপ। কারণ, কোন কোন ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যবিশিষ্ট উচ্চশক্তিসম্পন্ন নীল রশ্মি সূর্য থেকে নির্গত ইউভিএ রশ্মির চেয়ে দ্রুত ত্বকের উপরিভাগ দুর্বল করে কোলাজেনের গঠন ভেঙে ফেলে। ফল, অল্প বয়সে ত্বকে বলিরেখার আবির্ভাব। আবার অনিদ্রার জন্যও কিন্তু সমানভাবে দায়ী এই রশ্মি। ঘুম কম হওয়ার জন্য ত্বকের লাবণ্য কমে, বাড়ে ব্রণ আর চোখের কোণের কালচে ছোপ।প প্রভাব ফেলতে পারে।
অনেক স্মার্টফোনে নাইট টাইম মোড অপশন আছে। এটি নীলচে আলোর পরিবর্তে হলদে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটায়। নীল আলোর উগ্রতা থেকে বাঁচতে নাইট টাইম মোড ব্যবহার করুন। আর ল্যাপটপ বা মোবাইল ব্যবহার করার সময় একটি ন্যূনতম দূরত্ব বজায় রাখুন। পারলে টানা কাজ না করে ২০ মিনিট বা ৩০ মিনিট পরপর ৫ মিনিটের জন্য বিশ্রাম নিন। নীল আলো কিন্তু শরীরকে শুষ্ক করে দেয়। তাই প্রতিদিন প্রচুর পানি পান করুন। আর সেই সঙ্গে খাদ্যতালিকায় রাখুন অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ ফলমূল ও শাকসবজি।
বর্তমানে বাজারে কম্পিউটার বা ল্যাপটপে ব্যবহারের জন্য ব্লু লাইট প্রটেক্টর শিল্ড কিনতে পাওয়া যায়। এটি ব্যবহার করলে নীল আলোর বিচ্ছুরণ অনেকাংশে কমানো যায়। আর চোখের সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করতে পারেন ব্লু লাইট প্রটেক্টর গ্লাস বা সাধারণ রোদচশমা।
অন্ধকার ঘরে ডিজিটাল ডিভাইস ঘাঁটার অভ্যাস ত্যাগ করুন। রাতে ঘুমানোর সময় বিছানায় ফোন রাখবেন না। একান্তই যদি রাত জেগে কাজ করতে হয়, তাহলে ঘরের আলো জ্বালিয়ে কাজ করুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।