বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারে ছোট ফেনী নদীর পানি প্রবেশ করে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি ও সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
শনিবার (২৬ জুলাই) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট উচ্চতায় নদীর পানি প্রবেশ করে নদী তীরবর্তী সায়েদপুর, চর ইঞ্জুমান, মাদরাসাপাড়া, আমতলী, ইতালি মার্কেট, রহমতপুর, তেল্লার ঘাট, কাজীরহাটসহ আশপাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সাহেদ সাব্বির বলেন, মুছাপুর রেগুলেটর না থাকায় প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এলাকার মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়ছে। ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি, মাছের ঘের সবকিছুই বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কিন্তু শনিবারের জোয়ার ছিল অস্বাভাবিক। এমন উচ্চতার পানি আগে কখনো দেখিনি। আমরা এ অবস্থার দ্রুত সমাধান চাই। একটি টেকসই রেগুলেটর নির্মাণ না হলে এ জনপদে ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে।
মোহাম্মদ মোস্তফা নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই অনিশ্চয়তার মধ্যে বসবাস করছি। প্রায় সময় জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। অথচ আমরা বহুবার স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
এদিকে জোয়ারের লোনা পানিতে হুমকিতে পড়েছে এসব এলাকার কৃষিজমি ও মৎস্য ঘের। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এসব এলাকার প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমি ক্ষতির মুখে পড়েছে।
স্থানীয় মৎস্যচাষী সজিব রায়হান বলেন, প্রতিদিন জোয়ারের লোনাপানি ঢুকে মৎস্যখাতে বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। বর্ষায় পানি আরও বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় মাছের ঘের বা ফসলি জমিতে বিনিয়োগ করলে লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি।
আবু সায়েদ রুবেল নামে এক কৃষি উদ্যোক্তা বলেন, জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমি ক্ষতির মুখে পড়েছে। এসব অঞ্চলের অনেকেই এখন আর নতুন করে চাষাবাদে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন আহমেদ সোহাগ বলেন, জোয়ারের পানি নদী হয়ে খালে প্রবেশ করে চরদরবেশ, চরচান্দিয়া, বগাদানা ও চরমজলিশপুর এলাকার কৃষিজমি প্লাবিত হয়েছে।
আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি এসব এলাকায় চাষাবাদ না করে উঁচু জমিতে ফসল আবাদ করতে। জেলা কৃষি বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি সমাধানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানিয়েছেন।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৪ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে রোববারও জেলাজুড়ে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পুর) মো. আবু মুসা রকি বলেন, আমরা সুইস গেটসহ প্লাবিত অঞ্চলগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। সেখানে পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশমিক ১৪৬ মিটার।
অমাবস্যায় এমনিতেই পানি বাড়ে, তারমধ্যে রেগুলেটর না থাকায় সাগরের পানি সরাসরি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এজন্য নিম্নাঞ্চলের যেসব বাড়িঘর রয়েছে সেগুলোতে পানি জমেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।