বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : ঘূর্ণিঝড় হামুন আঘাত হানার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বঙ্গোপসাগর উপকূলে। অথচ গত সপ্তাহেই প্রধান সারির মিডিয়াতে খবর হয়েছিল―বিদায় নিচ্ছে বর্ষা। তারা হয়তো ভুল বলেনি? দেরিতে শুরু হওয়া বর্ষা এ বছর পুরো শরৎকালটাকেই প্রায় ভাসিয়ে দিয়েছে। অতিবৃষ্টিতে জনজীবন যখন বিপর্যস্ত, তখন মিডিয়ার এ ধরনের খবরে স্বস্তিই এসেছিল জনজীবনে।
কিন্তু সপ্তাহ না ঘুরতেই হাজির নিম্নচাপ, হতে পারে ঘূর্ণিঝড়ও। আকাশের মুখ গোমড়া হয়ে আছে একটানা, কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি, কখনো ঝমঝম করে বৃষ্টি ঝরছে। কেন এমন হলো?
হিমালয়ের পাদদেশ আর বঙ্গোপসাগরে উপকূল—এ দুইয়ের মাঝখানে পড়া বাংলাদেশের আবহাওয়ার পূর্বাভাস করা সবচেয়ে কঠিন। কারণ আবহাওয়ার সঙ্গে জুড়ে থাকে কেওস বা বাটারফ্লাই ইফেক্ট।
পদার্থবিজ্ঞান আর পরিসংখ্যান মিলিয়ে গড়ে ওঠা সেই কঠিন তত্ত্ব বিশ্লেষণে আমরা যাব না। তার চেয়ে বরং ঘূর্ণিঝড় কেন হয়, কিভাবে হয়, তার বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান করা যেতে পারে।
হামুনকে ডেকে আনছে নিম্নচাপ। তার মানে নিম্নচাপের সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের সম্পর্ক আছে।
তাহলে নিম্নচাপ কী—সেটাই আগে জানতে হবে।
আমরা বাতাসের সমুদ্রে বাস করি। বাতাসের চাপ থাকে। দেখা যায় না বলেই হয়তো বাতাসের চাপের রকমফেরটা বুঝতে পারি না অমনভাবে। কিন্তু বাতাসের একটা চাপ আছে, সেটা কমবেশি হয়, বিশেষ কোনো জায়গায় বেশি, কোথাও বা কম।
কমবেশির ফারকটা যখন খুব বেশি হয়, তখনই আসে বিপদ।
আশপাশের এলাকার চেয়ে কোনো জায়গায় বায়ুচাপ যদি কমে যায়, তাহলে সেখানে লঘুচাপ অথবা নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়।
নিম্নচাপের একটা বড় কারণ হলো তাপমাত্রা। কোনো বস্তুর ঘনত্ব যত বেশি, তার তাপ ধারণক্ষমতা তত বেশি। অর্থাৎ সেই বস্তুর তাপমাত্রাও তত বেশি। মাটি, পানি আর বাতাস—এই তিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘনত্ব হলো মাটির। তাই সমান তাপে পানি আর বাতাসের চেয়ে মাটি বেশি উষ্ণ হয়। দিনের বেলা উষ্ণ মাটি বা ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে লাগোয়া বাতাসের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানি অতটা উষ্ণ নয়, তাই সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপরের বায়ুমণ্ডল ভূপৃষ্ঠের বায়ুমণ্ডলের সমান উষ্ণ হতে পারে না। সুতরাং ভূপৃষ্ঠের আর সমুদ্রপৃষ্ঠের বায়ুমণ্ডলের মধ্যে উষ্ণতার পার্থক্য তৈরি হয়।
যে বস্তু যত উষ্ণ তার তাপমাত্রা তত বাড়ে, এতে বস্তুগুলোর ভেতরের অণুদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। ফলে সে বস্তুর ঘনত্ব কমতে শুরু করে। ভূপৃষ্ঠের বায়ুমণ্ডল বেশি উত্তপ্ত হয় বলে এদের অণুগুলো পরস্পর থেকে দূরে সরে যায়, ফলে কমতে থাকে ভূপৃষ্ঠের বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব। বাতাস তখন এখানে অনেক হালকা হয়ে যায়। হালকা বাতাসকে তাই স্বাভাবিক নিয়মেই বায়ুমণ্ডলের ওপরের দিকে উঠে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। নিচের দিকে তখন অনেকটা ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়।
অন্যদিকে সমুদ্রপৃষ্ঠের বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বাড়ে না বলে ঘনত্ব চাপ একই থাকে। তাই ভূপৃষ্ঠ আর সমুদ্রপৃষ্ঠের চাপের মধ্যে পার্থক্য অনেক বেড়ে যায়। ভূপৃষ্ঠে তৈরি হয় নিম্নচাপ।
দিনের বেলা সমুদ্রপৃষ্ঠ তুলনামূলক শীতল, তাই সেখানকার বায়ুমণ্ডলের চাপ বেশি। স্বাভাবিকভাবেই একটা খোলা জায়গায় চাপ ও তাপের ভারসাম্য থাকবে, এটাই প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু যখন কোথাও চাপ কমে যায়, বাতাসের ভেতর ফাঁকা জায়গা থাকে, সেখানে চাপের ভারসাম্যটা আর থাকে না। তখন বেশি চাপের অঞ্চল থেকে শীতল বায়ু দ্রুত গিয়ে সেই ফাঁকা জায়গার দখল নেয়। এভাবেই তৈরি হয় ভারসাম্য। আর এই ভারসাম্য তৈরি করতে গিয়ে দ্রুত সমুদ্রপৃষ্ঠের বায়মুণ্ডল ভূপৃষ্ঠের দিকে ধেয়ে আসে। ফলে তৈরি হয় ঝোড়ো হাওয়া।
দ্রুত যখন কোনো স্থানে শূন্যতা তৈরি হয়, হুড়াহুড়ি করে সেখানে বাতাস এসে শূন্যতা পূরণ করে, তখন সেখানে ঘূর্ণি তৈরি হয়। নিম্নচাপের জায়গায় চাপ যত কম, তত বেশি জায়গা ফাঁকা হয়, ছুটে আসা বাতাসের বেগ তত বেশি হয়। অর্থাৎ ঝড় তত শক্তিশালী হয়।
যে নিম্নচাপটি এখন বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে তার বেগ ৫০-৬০ কিলোমিটার। রাতে এর বেগ আরো বাড়তে পারে। সত্যিই যদি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয় এটা, তখন এর নাম হতে পারে হামুন।
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, ব্রিটানিকা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।