ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার রায়ের ২৬ বছর পর নির্বাহী বিভাগের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণমুক্ত হলো বিচার বিভাগ। একইসঙ্গে বিচার বিভাগের জন্য কাঙ্ক্ষিত পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জারি করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ। এই অধ্যাদেশ জারির পর শিগগিরই প্রতিষ্ঠা পাবে বিচার বিভাগের জন্য স্বতন্ত্র পৃথক সচিবালয়। যা সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় নামে অভিহিত হবে।

এই সচিবালয়ের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ থাকবে প্রধান বিচারপতির হাতে। সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধস্তন আদালত ও প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সকল প্রশাসনিক ও সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া বিচারিক কর্মে নিয়োজিত জুডিসিয়াল সার্ভিস (বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা) সদস্যদের পদায়ন, পদোন্নতি, বদলি, শৃঙ্খলা ও ছুটি সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় সম্পন্ন করবে এই সচিবালয়। সরকারের মন্ত্রণালয়গুলো যে ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম গ্রহণ করার অধিকারী ঠিক সেইরূপ প্রশাসনিক কার্যক্রম গ্রহণ করার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের থাকবে-এমন ক্ষমতা দিয়ে অধ্যাদেশ জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
রোববার (৩০ নভেম্বর) অধ্যাদেশ জারির পর তা গেজেট আকারে প্রকাশ করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মাসদার হোসেন মামলায় ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথককরনে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ওই রায়ের পর ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পহেলা নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ১৫ বছরেও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সরকার পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়নি।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নেয়। সেই উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় গত ২০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার অধ্যাদেশ অনুমোদন দেয় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। দশদিন পর রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করলেন। এর ফলে নিম্ন আদালতের বিচারকদের ওপর আর সরকার কিংবা আইন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ থাকছে না।
সচিবালয় প্রতিষ্ঠার কাজ সম্পন্ন হলে বিচারকাজে যুক্ত অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, পদায়ন, ছুটি, নিয়োগের শর্তাবলী নির্ধারণ ও শৃঙ্খলাবিষয়ক সব ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের হাতে থাকবে। উচ্চ আদালত সচিবালয়ের মাধ্যমে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। তবে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত বিচারকদের বিষয়গুলো আইন মন্ত্রণালয়ের হাতেই থাকছে।
এদিকে জারিকৃত অধ্যাদেশ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় কমিশন নামে একটি কমিশন থাকবে। প্রধান বিচারপতি এর সভাপতি হবেন। আইন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী/উপদেষ্টা, আপিল বিভাগের একজন বিচারক, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, অ্যাটর্নি জেনারেল কমিশনের সদস্য থাকবেন। কমিশন দেশের বিচার প্রশাসনের উন্নয়ন এবং বিচার বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করবেন। বিচার বিভাগীয় সদস্যদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রণীত বিধি ও প্রযোজ্য আদেশ দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



