জুমবাংলা ডেস্ক : প্রায় দুই দশক ধরে নীরবে চিকিৎসার আলো ছড়িয়ে চলেছে ভাসমান হাসপাতাল ‘জীবন তরী’। দেশের বিভিন্ন নদী ঘুরে ভাসমান হাসপাতাল ‘জীবন তরী’ এখন গাজীপুরের কালীগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে।
কালীগঞ্জ পৌর এলাকার দড়িসোম গ্রামের খেয়াঘাট সংলগ্ন খাদ্য গুদামের সামনে স্থানীয় বাসিন্দাদের নাম মাত্র ফি-তে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে দাতব্য এই হাসপাতালটি। ইতোমধ্যে জীবন তরীর চিকিৎসা স্থানীয়দের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। স্বল্প খরচে মানসম্মত চিকিৎসা পেয়ে প্রান্তিক লোকজন সন্তুষ্ট।
হাসপাতালটি মাত্র ১২ শয্যার। এতে তিনজন চিকিৎসক নাক, কান, গলা ও চক্ষু চিকিৎসা দেন। বিশেষজ্ঞ সার্জন দিয়ে অস্ত্রোপচার এবং হাড়জোড়া, হাড়ভাঙা,পঙ্গু, জন্মগত ঠোঁটকাটা-তালুকাটা রোগীদের চিকিৎসা, প্লাস্টিক সার্জারিসহ অন্যান্য চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংস্থাটি ১৯৯৩ সালের ২৫ জুলাই ট্রাস্ট হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে। ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালের এপ্রিল মাসে ‘জীবন তরী’ নামে পরিচিত বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এ ধরনের একটি ভাসমান হাসপাতাল চালু করে।
দেশের প্রধান প্রধান নদীর ধারের মানুষ, যারা শহর বা নগরে খুব কমই যেতে পারে, তাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বেসরকারি সংস্থা ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের পরিচালনাধীন হাসপাতালটি শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নোঙর ফেলে চলতি মাসের গত ৬মে। চিকিৎসা সেবা শুরু করে ১০মে থেকে। সুচিকিৎসা প্রদান করে ইতোমধ্যে এলাকাবাসীর আস্থা অর্জন করেছে। সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে। এর আগেও ভাসমান এ হাসপাতাল জীবন তরী কালীগঞ্জের শীতলক্ষ্যা পাড়ে ২০১৩ ও ২০১৮ সালে দুইবার নোঙর করে স্থানীয়দের চিকিৎসা সেবা দিয়ে গেছে।
ভাসমান হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বলেন, মানুষ হাসপাতালে যায় চিকিৎসা নিতে কিন্তু হাসপাতাল রোগীর বাড়ির ঘাটে আসে, তা আগে দেখিনি। দেখলাম, চিকিৎসা নিলাম। সবকিছুই ভালো লেগেছে।
এই হাসপাতালে চোখের চিকিৎসা করানো কালীগঞ্জ পৌর এলাকার দুর্বাটি গ্রামের নাসির উদ্দিন বলেন, “আমার ডান চোখে ছানি ছিলো। বেশ কয়েক জায়গায় চিকিৎসা নিয়েছি। পুরোপুরি ভালো হয়নি। কিছুদিন আগে ভাসমান হাসপাতালে চোখে অস্ত্রোপচার করিয়েছি। এখন আর চোখে সমস্যা নেই।”
শুধু তিনিই নন তার মত অনেকেই এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সন্তুষ্ট।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভাসমান হাসপাতালে প্রতিদিনই ১৬০ থেকে ১৭০ জন দরিদ্র নারী-পুরুষ ও শিশু দূরদূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসেন। চিকিৎসক দল যত্নের সঙ্গে তাদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। চিকিৎসা নিতে আসা এসব সুবিধাবঞ্চিত রোগী চিকিৎসকদের সেবায় মুগ্ধ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, হাসপাতালটি ১২ শয্যার। চিকিৎসক তিনজন। এর মধ্যে একজন নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ; একজন চোখের এবং একজন অর্থোপেডিকসের। তিনজন নার্স, দুজন কর্মকর্তাসহ মোট ৩০ জন জনবল আছে হাসপাতালে। মুমূর্ষু রোগীদের আনা-নেওয়ার জন্য একটি স্পিডবোট ও একটি অ্যাম্বুলেন্স আছে।
এখানে নিয়মিত এক্স-রে, রক্তসহ নাক-কান-গলা, চোখ অর্থোপেডিকস রোগের যাবতীয় পরীক্ষা করার ব্যবস্থা আছে।
হাসপাতালটিতে স্বল্পমূল্যে চক্ষু রোগের চিকিৎসা করা হয়। লেন্স সংযোজনের মাধ্যমে চোখের ছানি অস্ত্রোপচার করা হয়। ভাসমান হাসপাতালে ফ্যাকো সার্জারিরও ব্যবস্থা আছে। পঙ্গু রোগীদের সহায়ক সামগ্রী দেওয়া হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাইরের একটি ঘর থেকে রোগীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ৫০ টাকা দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন। আবার সারিতে দাঁড়িয়ে ভাসমান হাসপাতালের সিঁড়ি দিয়ে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, অন্য হাসপাতালের মতো এখানে স্বল্প পরিসরে সবই আছে। অপারেশন থিয়েটার, পোস্ট অপারেটিভ রুম, রোগীদের শয্যাসহ অন্যান্য সুবিধা আছে।
হাসপাতালের প্রশাসক এ. কে. এম. শহিদুল হক বলেন, “এ পর্যন্ত ভাসমান হাসপাতালটিতে স্বল্পমূল্যে প্রতিদিন দেড় শাতাধিক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চক্ষুরোগ, ইএনটি, অর্থোপেডিক ও ঠোঁটকাটা রোগের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ভাসমান এই হাসপাতালে সরকারি ছুটি ও শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।”
সূত্র ও ছবি : রাইজিংবিডি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।