আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে বৃহস্পতিবার নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে যে খুনের আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, তার নাম কেনেথ স্মিথ। জানা গেছে, দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সময় থেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে তার সময় লেগেছিল প্রায় ২২ মিনিট। নাইট্রোজেন গ্যাস প্রয়োগের পরও কয়েক মিনিট পর্যন্ত তার জ্ঞান ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, দুই থেকে চার মিনিট পর্যন্ত তিনি পানি থেকে তোলা মাছের মতো স্ট্রেচারের ওপর গড়াগড়ি খেয়েছেন, এরপর আরো পাঁচ মিনিট ঘন ঘন নিশ্বাস নিয়েছেন।
সমালোচকরা বলছেন, অপরীক্ষিতভাবে কেনেথের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। আলাবামা কর্তৃপক্ষ তাকে ‘গিনিপিগ’ হিসেবে বেছে নিয়েছে।
এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গরাজ্যে নাইট্রোজেন গ্যাস প্রয়োগ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পদ্ধতিটি অনুমোদন পেয়েছে। তিনটি অঙ্গরাজ্য হলো— আলাবামা, ওকলাহোমা ও মিসিসিপি। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার আলাবামা অঙ্গরাজ্যের হোলম্যান কারাগারে প্রথম বারের মতো নাইট্রোজেন হাইপোক্সিয়া ব্যবহার করে এক আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও প্রথম ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাস ব্যবহার করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সবশেষ ঘটনা দেখা গিয়েছিল ১৯৯৯ সালে। তখন হাইড্রোজেন সায়ানাইড গ্যাস ব্যবহার করে এক হত্যাকারীর দণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত প্রাণঘাতী ইনজেকশন প্রয়োগ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
কীভাবে কাজ করে: নাইট্রোজেন হাইপোক্সিয়া পদ্ধতিতে ঐ ব্যক্তি তার শ্বাসের সঙ্গে শুধু নাইট্রোজেন গ্যাস নিতে বাধ্য হন। তিনি অক্সিজেন পান না। আসামির মুখে একটি রেস্পিরেটর মাস্ক পরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ঐ মাস্কের মাধ্যমে আসামির ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ না করে খাঁটি নাইট্রোজেন গ্যাস সরবরাহ করা হয়। স্মিথের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া দেখার জন্য পাঁচ সাংবাদিককে সুযোগ দেওয়া হয়। তারা কাচের দেওয়ালের অপর পাশ থেকে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেন। প্রত্যক্ষদর্শী ঐ সাংবাদিকরা বলেছেন, মাস্ক দিয়ে নাইট্রোজেন গ্যাসের সরবরাহ শুরুর আগে স্মিথ শেষ বারের মতো কিছু কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আলাবামা কর্তৃপক্ষ মানবিকতাকে এক ধাপ পেছনে নিয়ে গেল।’ ঘটনাস্থলে স্মিথের স্ত্রী ও অন্য স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের উদ্দেশে স্মিথ বলেন, ভালোবাসা, শান্তি আর জ্যোতি নিয়ে আমি পৃথিবী ছাড়ছি। তোমাদের সবার জন্য ভালোবাসা থাকল।’
সমালোচনা: মানবাধিকার আইনজীবীরা মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে এমন পদ্ধতি ব্যবহারের সমালোচনা করেছেন। জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয়ের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি গত সপ্তাহে নাইট্রোজেন গ্যাস দিয়ে স্মিথের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরিকল্পনা বাতিলের আহ্বান জানিয়েছিলেন। একে ‘অপরীক্ষিত’ পদ্ধতি বলে উল্লেখ করেন তিনি। কেনেথ স্মিথ নিজেও এ পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সিদ্ধান্ত বাতিল চেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। তবে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত সে আবেদন খারিজ করে দেন।
স্মিথের আইনজীবীরা আদালতে আশঙ্কা জানিয়েছিলেন, মাস্কটি হয়তো স্মিথের মুখে ঠিকমতো আটকাবে না। এতে নাইট্রোজেনের পাশাপাশি কিছু অক্সিজেনও ঢুকে যেতে পারে। আর তাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এ প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হবে এবং তাদের মক্কেলের কষ্ট হবে। তবে আলাবামা কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, নাইট্রোজেন গ্যাস প্রয়োগ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এই প্রক্রিয়া এখন পর্যন্ত জানা সবচেয়ে ব্যথাহীন ও মানবিক মৃত্যুদণ্ডের প্রক্রিয়া।
উল্লেখ্য, কেনেথ পেশায় তিনি ছিলেন ভাড়াটে খুনি। আশির দশকে এক মহিলাকে খুনের অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আমেরিকার আদালত। কীভাবে তাকে ‘মারা’ হবে, তা নিয়ে বিস্তর টানাপড়েনের পর শেষমেশ নাইট্রোজেন গ্যাস প্রয়োগ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সিদ্ধান্ত হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।