লাইফস্টাইল ডেস্ক : নবজাতকের চোখের রক্তনালিতে এক ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। নবজাতক শিশুর অন্ধত্বের অন্যতম কারণ রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচিউরিটি (আরওপি)। শিশুর চোখে রক্তনালির উন্মেষ ঘটে গর্ভাবস্থার চার মাস বয়সে। জন্মের সময় এ প্রক্রিয়া প্রায় সমাপ্ত হয়ে যায়। রেটিনার প্রান্তিক অংশে অনেক সময় (জন্মের সময়) রক্তনালির বিকাশ কিছুটা অসম্পূর্ণ থাকে।
বিশেষ করে, যেসব শিশু সময়ের আগেই ভূমিষ্ঠ হয়, তাদের ক্ষেত্রে এমন হয়। রক্তনালি-বিবর্জিত রেটিনার একদম প্রান্তিক অংশটির নাম রেটিনাল পেরিফেরাল এভাস্কুলার পার্ট। জন্মের সময় কোনো কারণে রেটিনার এই এভাস্কুলার পার্ট বিদ্যমান থাকাটা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। জন্মের অব্যবহিত পরে অর্থাৎ মাসখানেকের মধ্যে এই এভাস্কুলার পার্টে স্বাভাবিক রক্তনালি পুষ্ট হয়ে যায়।
তবে কখনো কখনো এর ব্যত্যয় ঘটে। জন্মের অব্যবহিত পরে যেসব শিশু নিউনেটাল কেয়ারে থাকে বা কৃত্রিম অক্সিজেনে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অক্সিজেনের প্রভাবে সাময়িক রক্তনালিগুলোয় এক ধরনের সংকোচিত অবস্থা বিরাজমান থাকে। পরবর্তীকালে যখন কৃত্রিম অক্সিজেন থেকে অবমুক্ত হয়ে নবজাতক স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে ফিরে আসে, তখন চোখের ভেতরের রক্তনালি, তথা কোষে সাময়িকভাবে অক্সিজেনের মাত্র কমে যায়।
হঠাৎ এই অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় রেটিনার এভাস্কুলার পার্টে নতুন করে রক্তনালি তৈরি হওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হয়। নতুন করে সৃষ্টি হওয়া এ রক্তনালিগুলোর ধর্ম হলো এগুলো অপুষ্ট, ভঙ্গুর। অস্বাভাবিক রক্তনালিসমৃদ্ধ রেটিনার এ অবস্থার নাম রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচিউরিটি। নতুন রক্তনালি যেগুলো তৈরি হয়, সেগুলোয় খুব সহজেই রক্তক্ষরণ হয়। রক্তক্ষরণ পরবর্তীকালে বিভিন্ন জটিলতা অন্ধত্ব ডেকে আনে। রেটিনার পেরিফেরাল পার্টে অক্সিজেন স্বল্পতা বা ইস্কেমিয়া এবং এন্ডোথেলিয়াল ভাস্কুলার গ্রোথ ফেক্টর নামক কেমিক্যালের প্রভাবে সাধারণত এ সমস্যা নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।
আরওপির রিস্ক ফ্যাক্টর : প্রিম্যাচিউর বেবি, বিশেষ করে ৩২ সপ্তাহের আগে ভূমিষ্ট হওয়া শিশু অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ। জন্মের সময় যাদের ওজন ১ হাজার ৬০০ গ্রামের নিচে, তারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। জন্মের অব্যবহিত পরে যেসব শিশুর কৃত্রিম অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। যেসব শিশুর রক্তশূন্যতা, সেপসিস ও ভিটামিন-ই স্বল্পতা থাকে।
শনাক্তকরণ : রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যচিউরিটি দ্রুত শনাক্ত করা গেলে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া গেলে অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ সমস্যাটি নিরূপণ করার একমাত্র উপায়, চোখ পরীক্ষা করা। এ ক্ষেত্রে হাসপাতাল বা ক্লিনিকে বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়। রিস্ক ফ্যাক্টর বিদ্যমান নবজাতকের সবার চোখ পরীক্ষা করা এ ক্ষেত্রে খুব জরুরি। প্রথমবার নবজাতকের বয়স মাস পূর্তিতে আরওপি স্ক্রিনিং প্রয়োজন। পরবর্তীকালে প্রয়োজনে ১ থেকে ৩ সপ্তাহ বিরতিতে স্ক্রিনিং অব্যাহত রাখতে হবে।
আরওপি সমস্যাযুক্ত শিশুদের ক্ষেত্রে পরবর্তীকালে প্রায়শই দৃষ্টি সমস্যা, চোখে ট্যারাভাব বা স্কুইন্ট ও এমব্লায়োপিয়া বা ভিজুয়্যাল সাপ্রেশন ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এসব শিশুকে দীর্ঘদিনের জন্য ফলোআপে রাখতে হবে।
লেখক : ডা. মো. ছায়েদুল হক
চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
সহযোগী অধ্যাপক (অব.) এবং কনসালট্যান্ট আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার, ৩৮/৩-৪, রিং রোড, আদাবর, ঢাকা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।