লাইফস্টাইল ডেস্ক : শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো বিষয়ে আমাদের সমাজে কিছু ভুল ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এজন্য শিশু ও মা দুজনই স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে থাকেন। শিশুর পাকস্থলী ও পরিপাকতন্ত্র মায়ের দুধের ভিটামিন, খনিজ ও এনজাইম সম্পূর্ণরূপে শোষণ করতে এবং কাজে লাগাতে সক্ষম ও প্রস্তুত; অন্য কোনো দুধ হজমের জন্য প্রস্তুত নয়। মায়ের দুধে শিশুর বদহজম বা অ্যালার্জি হওয়ার ঝুঁকি নেই।
মায়ের দুধের ওপর নির্ভরশীল শিশু প্রথম বছরে তিন গুণ ওজন লাভ করে—এটা গবেষণালব্ধ সত্য। তাই বুকের দুধে স্বাস্থ্য হয় না, এ ধারণা ভুল। জন্মের পর থেকে ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের দুধই শিশুর পর্যাপ্ত পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সক্ষম। আর কোনো খাবারের প্রয়োজন নেই, এমনকি আলাদা পানিও না।
তবে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো নিয়ে এখনো অনেক মিথ বা ভুল ধারণা চালু আছে, যা শুনে মায়েরা শিশুকে বুকের দুধ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে। বুকের দুধ খাওয়ানো নিয়ে বহুল প্রচলিত কিছু ধারণা যে আসলে একদম ভুল। আসুন জেনে নিই ভুলগুলো:
১. শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো সহজ
মায়ের বুক খুঁজে নেওয়ার প্রবৃত্তি নিয়েই শিশুরা জন্মায়। যাই হোক অনেক মায়েদের বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য তাদের শিশুর অবস্থান নির্ধারণের এবং তাদের শিশুটি সঠিকভাবে স্তনের সঙ্গে যুক্ত আছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর সহায়তা প্রয়োজন। শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য সময় লাগে এবং এর জন্য মা ও শিশু দুজনেরই অনুশীলন দরকার হয়।
শিশুর যখনই ক্ষুধা লাগে তখনই তাকে বুকের দুধ খাওয়াতে হয়। সে কারণে বাড়ি ও কাজের উভয় জায়গাতেই সন্তানকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা ও সহযোগিতার প্রয়োজন হয়।
২. বুকের দুধ খাওয়াতে গেলে আঘাত লাগবেই, স্তনের বোঁটা ক্ষত হওয়া অবশ্যম্ভাবী
অনেক মা-ই সন্তান জন্মদানের পর প্রথম কিছুদিন দুধ খাওয়ানোর সময় অস্বস্তি বোধ করেন। শিশুকে সঠিক অবস্থানে রেখে এবং ঠিকমতো স্তনের সঙ্গে যুক্ত রেখে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো গেলে, স্তনের বোঁটার ক্ষত হওয়া বা ফুলে যাওয়া এড়ানো যায়। কোনো মা এ ধরনের সমস্যায় পড়লে স্তনদান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ বা দক্ষ পেশাজীবীর পরামর্শ নিয়ে তা কাটিয়ে উঠতে পারেন।
৩. শিশুকে দুধ খাওয়ানোর আগে স্তনের বোঁটা ধুয়ে নিতে হবে
শিশুকে বুধের দুধ খাওয়ানোর আগে স্তনের বোঁটা ধুয়ে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। শিশুরা জন্মের পর থেকেই তার মায়ের শরীরের গন্ধ ও কণ্ঠস্বরের সঙ্গে পরিচিত হয়ে যায়। তা ছাড়া স্তনের বোঁটায় কিছু পদার্থ তৈরি হয় যার ঘ্রাণ শিশুরা পায় এবং তাতে এক ধরনের ভালো ব্যাকটেরিয়াও থাকে। এগুলো শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে।
৪. মায়ের বিশ্রামের জন্য শিশু ও তার মাকে আলাদা রাখতে হয়
ডাক্তার, নার্স ও ধাত্রীরা প্রায়ই জন্মের পরপরই শিশুকে তার মায়ের সংস্পর্শে রাখতে বলেন। একে ‘ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার’ও বলা হয়। এভাবে মায়ের সংস্পর্শে রাখা, গায়ের সঙ্গে লেগে থাকা শিশুদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যা তাদের মায়ের বুকের দুধ খুঁজতে ও পেতে সহায়তা করে। যদি শিশুর জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে তা করা যায় এবং এরপরে বারবার তা করা যায়, তাহলে শিশুরা সহজে দুধ পাবে। যদি মা তা একা না করতে পারেন, তাহলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মা ও শিশুকে সাহায্য করতে হবে।
৫. বুকের দুধ খাওয়াতে চাইলে কখনোই ফর্মুলা (বাজারে যেসব দুধ পাওয়া যায়) দেওয়া যাবে না
বুকের দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি মায়েরা শিশুদের কখনো কখনো ফর্মুলা খাওয়ানোর কথা ভাবতে পারেন। সে ক্ষেত্রে শিশুর ফর্মুলা বা সম্পূরক খাবারের বিষয়ে সঠিক, পক্ষপাতহীন তথ্য থাকতে হবে। বুকের দুধ তৈরি অব্যহত রাখার জন্য যত বেশিবার সম্ভব শিশুকে বুকের দুধ দিতে হবে। এ বিষয়ে সঠিক পরিকল্পনার জন্য মাতৃদুগ্ধ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ বা দক্ষ পেশাজীবীর পরামর্শ নিতে হবে।
বিশ্বের সবচেয়ে ছোট সোনার ব্যাগ এটি, যা বানাতে দৃষ্টিশক্তি হারান শিল্পী
৬. অসুস্থ মায়েরা দুধ খাওয়াতে পারবেন না
এটা নির্ভর করবে অসুস্থতার ধরনের ওপর। তবে মায়েরা সাধারণত অসু্স্থ অবস্থায়ও শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে পারেন। শুধু সেক্ষেত্রে মায়ের চিকিৎসা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও যথাযথ খাবার নিশ্চিত করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে মায়ের শরীরে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় থাকে, তা দুধ খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে শিশুর শরীরেও সঞ্চারিত হয়, যা তার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে সহায়তা করে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।