সেই কষ্টটা কি চিনি? একটু অসতর্কতায়, কিংবা হঠাৎ করেই শুনতে হয় সেই কর্কশ শব্দ – ‘কট’! নখ ভেঙে গেছে। শুধু ব্যথাই নয়, মনে জমে ওঠে একধরনের বিব্রতবোধ, বিশেষ করে যখন সাজগোজের পরিপূর্ণতা নষ্ট হয়ে যায়। হাতের এই সুন্দর অলংকারটিকে রক্ষা করা কেন এত কঠিন? ঢাকার অফিসে কর্মরত সুমাইয়া আক্তার কিংবা নারায়ণগঞ্জের গৃহিণী সীমা রানী – উভয়েরই অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে এই ‘নখ ভাঙার’ সমস্যা। কিন্তু চিন্তার কারণ নেই! নখ ভাঙ্গা রোধ করা সম্ভব আপনারই রান্নাঘর ও আশেপাশের সহজলভ্য জিনিসপত্র দিয়ে। আজকে জানবো সেইসব ঘরোয়া উপায়, যা দীর্ঘদিন ধরে আপনার নখকে রাখবে মজবুত, সুন্দর ও ভাঙনরোধী।
Table of Contents
নখ ভাঙার যন্ত্রণা: শুধু ব্যথাই নয়, সৌন্দর্য হারানোর মানসিক চাপও (H2)
নখ শুধু কসমেটিক ইস্যু নয়, এটি আপনার সার্বিক স্বাস্থ্যেরই আয়না। নখ ভাঙার সমস্যা শুধু একটি শারীরিক অসুবিধা নয়; এটি বহন করে মানসিক চাপ, বিব্রতকর পরিস্থিতি এবং আত্মবিশ্বাসে আঘাত। চিন্তা করুন তো, আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রেজেন্টেশনের জন্য তৈরি হয়েছেন, হাতের মুদ্রণে জোর দিতে চাইছেন, আর ঠিক তখনই হঠাৎ ভেঙে গেল নখ! অথবা বিয়ের সাজে সেজে উঠেছেন, কনে হিসেবে হাত বাড়াতে গিয়ে চোখে পড়ল ভাঙা নখ! এই সামান্য ঘটনা পুরো মুহূর্তটির জৌলুস ম্লান করে দিতে পারে। কুমিল্লার কলেজ ছাত্রী তানহা তাসনিমের ভাষায়, “প্রতিবার নখ ভাঙলে মনে হয় যেন পুরো সাজটাই বৃথা হয়ে গেল। বিশেষ করে যখন বন্ধুদের সামনে হাত দেখাতে লজ্জা লাগে।” এই বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে এবং হাতের সৌন্দর্যকে অটুট রাখতে নখ ভাঙ্গা রোধে ঘরোয়া উপায় জানাটা জরুরি।
কেন ভাঙে নখ? শনাক্ত করুন মূলে থাকা কারণগুলো:
নখ ভাঙার পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে নানা কারণ। শুধু বাইরের আঘাতই নয়, ভেতরের পুষ্টির ঘাটতি বা স্বাস্থ্য সমস্যাও দায়ী হতে পারে:
- পুষ্টির অভাব: বিশেষ করে বায়োটিন (ভিটামিন B7), ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, আয়রন, জিঙ্ক এবং ক্যালসিয়ামের ঘাটতি নখকে ভঙ্গুর ও দুর্বল করে তোলে। পর্যাপ্ত প্রোটিন না খেলেও নখের কেরাটিন উৎপাদন ব্যাহত হয়।
- নিরন্তর পানির সংস্পর্শ: রান্না, বাসন মাজা, কাপড় ধোয়া – দিনে বহুবার হাত পানিতে ডোবালে নখের প্রাকৃতিক তেল ও আর্দ্রতা হারিয়ে যায়। ফলে নখ শুষ্ক, ভঙ্গুর ও সহজেই ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। গৃহিণীদের মধ্যে এই সমস্যা প্রকট।
- ক্ষতিকর কেমিক্যাল: ডিটারজেন্ট, ক্লিনিং প্রোডাক্ট, নেল পলিশ রিমুভারে থাকা শক্তিশালী কেমিক্যাল (অ্যাসিটোন) নখের উপরের প্রতিরক্ষামূলক স্তরকে ক্ষয় করে ফেলে।
- শুষ্ক আবহাওয়া ও ডিহাইড্রেশন: শীতকাল বা এসির নিচে দীর্ঘ সময় থাকলে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়, নখ ও তার আশেপাশের ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। পর্যাপ্ত পানি না খাওয়াও ডিহাইড্রেশনের মাধ্যমে নখকে দুর্বল করে।
- অনুপযুক্ত নখের যত্ন: ভুল পদ্ধতিতে নখ কাটা (কাঁচি বা কাটারের পরিবর্তে নেল ক্লিপার ব্যবহার না করা), খুব বেশি ফাইল করা, নখ দিয়ে কঠিন জিনিস খোলার চেষ্টা করা বা নখকে টুল হিসেবে ব্যবহার করা।
- অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যা: থাইরয়েড ডিসঅর্ডার (হাইপো বা হাইপারথাইরয়েডিজম), ফাঙ্গাল ইনফেকশন (অনাইকোমাইকোসিস), সোরিয়াসিস, একজিমা, রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া) ইত্যাদি রোগ নখের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
- বয়স: বয়স বাড়ার সাথে সাথে নখের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা কমতে থাকে, ফলে ভঙ্গুরতা বাড়ে।
মূল কারণ শনাক্ত করাই প্রথম ধাপ: আপনার নখ ভাঙার পেছনের কারণটি চিহ্নিত করা জরুরি। যদি বারবার পানিতে ডোবানোর অভ্যাস থাকে, তাহলে গ্লাভস পরার অভ্যাস গড়ে তুলুন। যদি পুষ্টির ঘাটতি সন্দেহ করেন, তাহলে ডায়েটে পরিবর্তন আনুন বা ডাক্তারের পরামর্শ নিন। অন্তর্নিহিত কোনো রোগের লক্ষণ (নখের রং পরিবর্তন, গভীর গর্ত, অতিরিক্ত ভঙ্গুরতা) দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। কারণ জানলেই নখ ভাঙ্গা রোধ করা সহজ হবে। (Internal Link: সঠিক পুষ্টির জন্য আমাদের আর্টিকেল “শরীর সুস্থ রাখার জন্য অপরিহার্য ভিটামিন ও মিনারেলস” পড়ুন)
ঘরোয়া উপায়ে নখ ভাঙ্গা রোধ: রান্নাঘরেই লুকিয়ে আছে সমাধান (H2)
এবার আসুন সেই জাদুকরী ঘরোয়া উপায় গুলোর কথায়, যা আপনার নখকে মজবুত, লম্বা ও ভাঙনরোধী করে তুলবে। এই টিপসগুলো সহজলভ্য, সাশ্রয়ী এবং প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি:
নিয়মিত তেল মালিশ (ময়েশ্চারাইজেশন): নখ ভাঙ্গা রোধের সবচেয়ে কার্যকরী ও সহজ উপায় হলো নখ ও কিউটিকলকে নিয়মিত তেল দিয়ে মালিশ করা।
- কোন তেল ব্যবহার করবেন? নারকেল তেল, জোজোবা অয়েল, অলিভ অয়েল, বাদাম তেল, ভিটামিন ই তেল – যেকোনো একটি বা মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন। নারকেল তেল নখে সহজে শোষিত হয় এবং ব্যাকটেরিয়ারোধী গুণ আছে। জোজোবা অয়েল নখের কেরাটিনের গঠনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, গভীরে প্রবেশ করে।
- কখন ও কিভাবে করবেন? রাতে ঘুমানোর আগে সবচেয়ে ভালো সময়। হালকা গরম করে নিন তেলটি (সহনীয় তাপমাত্রায়)। একটি কটন বাড বা আঙুলের ডগা দিয়ে নখের পুরো প্লেট, নখের ডগা (যেখানে ভাঙার সম্ভাবনা বেশি) এবং কিউটিকল অঞ্চলে ভালোভাবে মালিশ করুন। অন্তত ৫-১০ মিনিট মালিশ করুন যাতে তেল গভীরে শোষিত হয়। সারারাত তেল শোষিত হতে দিন। সকালে অতিরিক্ত তেল মুছে ফেলতে পারেন। সপ্তাহে ৩-৪ বার বা প্রতিদিনই করতে পারেন। শীতকালে বা খুব শুষ্ক আবহাওয়ায় দিনে দুবারও করতে পারেন।
- লাভ: তেল মালিশ নখকে গভীরভাবে ময়েশ্চারাইজ করে, ভঙ্গুরতা কমায়, নখের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়, কেরাটিনের বন্ধন শক্তিশালী করে এবং কিউটিকল নরম ও সুস্থ রাখে, যার ফলে নখ ভাঙ্গা রোধ হয়।
ডুবিয়ে রাখুন তেলে (তেলের স্নান – Oil Soak): সপ্তাহে এক বা দুবার নখ ডুবিয়ে রাখতে পারেন উষ্ণ তেলে।
- কিভাবে করবেন? একটি ছোট বাটিতে প্রয়োজনীয় তেল (অলিভ বা নারকেল তেল ভালো) সামান্য গরম করুন (গরম নয়, উষ্ণ)। তেলে কয়েক ফোঁটা ভিটামিন ই তেল মিশিয়ে নিলে আরও ভালো ফল পাবেন, কারণ ভিটামিন ই শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা নখের ক্ষতি রোধ করে। এই উষ্ণ তেলে ১০-১৫ মিনিট আঙুল ডুবিয়ে রাখুন। এরপর হালকা হাতে মালিশ করুন। অতিরিক্ত তেল মুছে না ফেলে গ্লাভস পরে রাখতে পারেন কিছুক্ষণ। (Internal Link: ত্বকের যত্নে ভিটামিন ই তেলের বিস্ময়কর গুণাবলী জানতে পড়ুন আমাদের বিশেষ আর্টিকেল)
কিউটিকল কেয়ার: সুস্থ নখের জন্য সুস্থ কিউটিকল অপরিহার্য। কেটে ফেলা বা পেছনে ঠেলে দেয়ার সময় অতিরিক্ত চাপ দিলে নখের গোড়ায় ইনফেকশন বা ক্ষত হতে পারে, যা নখের বৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কখনোই কেটে ফেলবেন না। ব্যবহার করুন কিউটিকল তেল বা ক্রিম। রাতে তেল মালিশের সময় কিউটিকলেও ভালো করে তেল দিন। সপ্তাহে একবার হালকা গরম পানিতে সামান্য অলিভ অয়েল মিশিয়ে ৫-১০ মিনিট হাত ভিজিয়ে রাখুন। এরপর একটি নরম তোয়ালে দিয়ে আলতো করে কিউটিকলের মৃত ত্বক সরান (কখনো জোরে টানবেন না)।
গভীর ময়েশ্চারাইজেশন (ডিপ কন্ডিশনিং): সপ্তাহে একবার নখের জন্য গভীর যত্ন দিন।
- মধু ও অলিভ অয়েল প্যাক: সমপরিমাণ কাঁচা মধু ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি নখ ও কিউটিকলে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন। মধুর প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজিং এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ আছে।
- ময়েশ্চারাইজিং মাস্ক: আপনার হ্যান্ড ক্রিম বা বডি লোশনের সাথে সামান্য নারকেল তেল মিশিয়ে নিন। হাত ও নখে ভালো করে লাগিয়ে তুলো বা পাতলা প্লাস্টিকের গ্লাভস পরে ৩০ মিনিট বা রাতভর রেখে দিন। সকালে ধুয়ে ফেলুন।
সঠিক নখ কাটার ও ফাইলের পদ্ধতি: ভুল পদ্ধতিতে নখ কাটা বা ফাইল করলে নখে মাইক্রোস্কোপিক ফাটল সৃষ্টি হয়, যা পরে বড় ফাটল বা ভাঙনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- কীভাবে কাটবেন? নখ ভেজা অবস্থায় কাটবেন না। ভেজা নখ নরম থাকে এবং সহজে ছিঁড়ে যেতে পারে। নখ শুকনো ও পরিষ্কার অবস্থায় কাটুন। সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো নেল ক্লিপার ব্যবহার করা। কাঁচি বা কাটারের চেয়ে নেল ক্লিপার নখের প্রান্তকে সমানভাবে কাটে এবং ফাটল সৃষ্টির সম্ভাবনা কমায়।
- কীভাবে ফাইল করবেন? নখ কাটার পর অবশ্যই ফাইল করুন। ফাইল সবসময় এক দিকে করুন (আগে-পিছে না করে)। আগে-পিছে ফাইল করলে নখের প্রান্ত স্তরিত হয়ে যায় এবং সহজে ভেঙে যায়। নখের প্রান্তকে সামান্য গোলাকার বা বর্গাকার (স্কোভাল) শেপ দিন। খুব ধারালো বা খুব চিকন প্রান্ত ভাঙার ঝুঁকি বাড়ায়। ব্যবহার করুন গ্লাস নেল ফাইল বা ফিনিশিং বাফার ব্লক। এগুলো ধাতব বা কাগজের ফাইলের চেয়ে নরম, নখের ক্ষতি কম করে এবং মসৃণ প্রান্ত দেয়। ফাইল করার সময় নখের প্রান্তের উপরে-নিচেও হালকা করে ফাইল করুন যাতে কোনও রুক্ষতা না থাকে।
পানির কাজে গ্লাভস পরুন: এটি নখ ভাঙ্গা রোধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। বাসন মাজা, মেঝে পরিষ্কার করা, কাপড় কাঁচা বা রান্নার সময় যেকোনো রাসায়নিক বা অতিরিক্ত পানির সংস্পর্শ থেকে নখকে রক্ষা করতে ওয়াটারপ্রুফ বা রাবার গ্লাভস পরুন। ভেতরে সুতি গ্লাভস পরে নিলে আরও ভালো, কারণ তা অতিরিক্ত ঘাম শোষণ করে। খেয়াল রাখুন গ্লাভস যেন আঁটসাঁট না হয় বা ছিঁড়ে না যায়।
- হাইড্রেশন: শরীরের অন্যান্য অংশের মতো নখের জন্যও পানি অপরিহার্য। দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান নখসহ সমগ্র শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। ডিহাইড্রেশন নখকে শুষ্ক ও ভঙ্গুর করে তোলে। শীতকালে বা এসির নিচে কাজ করলে পানি খাওয়ার পরিমাণ আরও একটু বাড়িয়ে দিন।
দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিবর্তন: নখের দীর্ঘায়ু ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির মূলমন্ত্র (H2)
নখ ভাঙ্গা রোধ শুধু বাইরে থেকে যত্ন নিলেই হয় না, দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করাও জরুরি:
- নখকে টুল হিসেবে ব্যবহার করা বন্ধ করুন: কোলা বা বিয়ারের ক্যান খোলা, প্যাকেটের সীল ছিঁড়া, স্ক্র্যাচকার্ড আঁচড়ানো, কিংবা স্ক্র্যাপিং – এসব কাজে নখ ব্যবহার করা একদমই নিষেধ! এই ধরনের চাপ নখের গোড়া থেকে প্রান্ত পর্যন্ত ফাটল ধরাতে পারে বা পুরো নখই ভেঙে দিতে পারে। সবসময় উপযুক্ত টুল ব্যবহার করুন।
- নেল হার্ডেনার ব্যবহারে সতর্কতা: বাজারে নানা ধরনের নেল হার্ডেনার পাওয়া যায়। এগুলোতে ফরমালডিহাইড জাতীয় রাসায়নিক থাকতে পারে, যা সাময়িকভাবে নখ শক্ত করে ঠিকই, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে নখকে অতিরিক্ত শক্ত ও ভঙ্গুর করে তোলে। প্রয়োজনে ফর্মালডিহাইড-মুক্ত হার্ডেনার বেছে নিন এবং নির্দেশিত ব্যবহারবিধি মেনে চলুন। ঘন ঘন ব্যবহার করবেন না। প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজেশনই বেশি নিরাপদ।
- নেল পলিশ রিমুভার বাছাই: নেল পলিশ রিমুভারে থাকা অ্যাসিটোন নখকে মারাত্মকভাবে শুষ্ক করে ফেলে। ব্যবহার করুন অ্যাসিটোন-মুক্ত নেল পলিশ রিমুভার। পলিশ রিমুভ করার পর অবশ্যই নখ ও কিউটিকলে তেল মালিশ করুন। একটানা দীর্ঘদিন পলিশ লাগিয়ে রাখবেন না। সপ্তাহে অন্তত এক-দুই দিন নখকে ‘বিশ্রাম’ দিন, শুধু তেল বা ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে রাখুন।
- ভালো মানের হ্যান্ড ক্রিম: দিনে কয়েকবার হাত ধোয়ার পর এবং গ্লাভস খোলার পর হাতে ভালো মানের হ্যান্ড ক্রিম বা লোশন লাগান। খেয়াল রাখুন ক্রিমটি যেন হাতের পাশাপাশি নখ ও কিউটিকলেও ভালোভাবে লাগে। ক্রিমে শিয়া বাটার, গ্লিসারিন, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, ইউরিয়া ইত্যাদি উপাদান থাকলে ভালো।
- সুষম খাদ্যাভ্যাস: নখের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভেতর থেকে পুষ্টি দিতে হবে:
- বায়োটিন (ভিটামিন B7): ডিমের কুসুম, বাদাম (আলমন্ড, চিনাবাদাম), বীজ (সূর্যমুখী, চিয়া), মাছ, মাংস, কলা, মিষ্টি আলু, ফুলকপি, শিম। (External Link: National Institutes of Health (NIH) – Biotin Fact Sheet for Consumers: https://ods.od.nih.gov/factsheets/Biotin-Consumer/ – এই লিঙ্কটি বায়োটিনের উৎস ও গুরুত্ব সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য দেয়)
- প্রোটিন: নখের মূল উপাদান কেরাটিন একটি প্রোটিন। পর্যাপ্ত ডাল, ডিম, মাছ, মাংস, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, সয়াবিন খান।
- আয়রন: পালং শাক, মেথি শাক, ব্রকলি, ডাল, রেড মিট, মুরগির কলিজা। আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতা নখ ভাঙার অন্যতম কারণ।
- ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি: দুধ, দই, পনির, ছোট মাছ, সবুজ শাকসবজি, ডিমের কুসুম। ভিটামিন ডি সূর্যালোক থেকে বা সাপ্লিমেন্ট থেকে নিতে হবে।
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: চর্বিযুক্ত মাছ (স্যামন, ম্যাকারেল), আখরোট, ফ্ল্যাক্সসিড, চিয়া সিড। নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং শুষ্কতা কমায়।
- জিঙ্ক: শিম, বীজ, বাদাম, মাংস, সামুদ্রিক খাবার। নখের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- ভিটামিন সি: আমলকী, লেবু, কমলা, পেয়ারা, ক্যাপসিকাম, ব্রকলি। কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে যা নখের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ অবস্থায় সতর্কতা: কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন? (H2)
যদিও নখ ভাঙ্গা রোধে ঘরোয়া উপায় বেশ কার্যকর, কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ দেখলে বুঝতে হবে সমস্যা গভীরে, যার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন:
- নখের রং পরিবর্তন: হলুদ, সবুজ, কালো, সাদা দাগ বা পুরো নখ বিবর্ণ হওয়া (ফাঙ্গাল ইনফেকশন, সোরিয়াসিস, অন্যান্য রোগের লক্ষণ)।
- নখের গঠনে পরিবর্তন: নখ মোটা হয়ে যাওয়া, ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া, নখের নিচ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া (অনিকোলাইসিস), নখে গভীর গর্ত বা খাঁজ পড়া (পিটিং), চামড়ার দিকে নখের আকৃতি চামচের মতো বেঁকে যাওয়া (কয়লোনিচিয়া)।
- চারপাশে ব্যথা, ফোলা, লালভাব বা পুঁজ: ইনফেকশন বা প্যারোনিচিয়ার লক্ষণ।
- অন্যান্য লক্ষণের সাথে: যদি নখ ভাঙার পাশাপাশি অতিরিক্ত চুল পড়া, অবসাদ, ওজন বাড়া-কমা, ত্বকের সমস্যা ইত্যাদি থাকে, তাহলে থাইরয়েড বা অন্যান্য সিস্টেমিক সমস্যা থাকতে পারে।
- ঘরোয়া উপায় টানা কয়েক সপ্তাহ চেষ্টার পরেও যদি কোনো উন্নতি না হয়।
এই ক্ষেত্রে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ (ডার্মাটোলজিস্ট) এর পরামর্শ নিন। তিনি নখ পরীক্ষা করে সঠিক কারণ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা (ওষুধ, ক্রিম, সাপ্লিমেন্ট) দেবেন। মনে রাখবেন, নখের অবস্থা অনেক সময় শরীরের ভেতরের স্বাস্থ্যের বার্তাবাহক।
জেনে রাখুন (FAQs – H2)
প্রশ্ন: নখ দ্রুত ভেঙে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ কী?
উত্তর: নখ ভাঙার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে পুষ্টির অভাব (বিশেষ করে বায়োটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক), অতিরিক্ত পানির সংস্পর্শ ও কেমিক্যালের ব্যবহার (ডিটারজেন্ট, অ্যাসিটোন), নখের শুষ্কতা এবং ভুল নখের যত্ন পদ্ধতি (ভুল ফাইলিং, নখ দিয়ে কঠিন কাজ করা) অন্যতম। দৈনন্দিন অভ্যাস ও খাদ্যাভ্যাস বিশ্লেষণ করে মূল কারণ শনাক্ত করা জরুরি নখ ভাঙ্গা রোধে।প্রশ্ন: গর্ভাবস্থায় নখ ভাঙে বেশি, এর কারণ ও সমাধান কী?
উত্তর: গর্ভাবস্থায় হরমোনের ওঠানামা, বিশেষ করে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে কিছু নারীর নখ দ্রুত বাড়ে ও শক্ত হয়, আবার অন্যের নখ ভঙ্গুর হয়ে ভেঙে যায়। এছাড়া শরীরের চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে পুষ্টির ঘাটতিও হতে পারে। সমাধান হিসেবে নিয়মিত তেল মালিশ, গ্লাভস ব্যবহার, সুষম ও পুষ্টিকর খাবার (বিশেষ করে বায়োটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ) খাওয়া এবং ডাক্তারের পরামর্শে প্রিন্যাটাল ভিটামিন সেবন করা উচিত। অতিরিক্ত সতর্কতার সাথে নখের যত্ন নিন।প্রশ্ন: পুরুষদেরও কি নখ ভাঙার সমস্যা হয়? তাদের জন্য বিশেষ কোন ঘরোয়া উপায় আছে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, নখ ভাঙার সমস্যা শুধু নারীদের নয়, পুরুষদেরও হয়, বিশেষ করে যারা শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করেন, হাতে ভারী সরঞ্জাম ব্যবহার করেন বা হাত বেশি পানিতে ডোবান। পুরুষরাও নখ ভাঙ্গা রোধে একই ঘরোয়া উপায় ফলো করতে পারেন: নিয়মিত তেল মালিশ (রাতে), পানির কাজে গ্লাভস পরা, নখকে টুল হিসেবে ব্যবহার না করা, সঠিক পদ্ধতিতে নখ কাটা ও ফাইল করা এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। নিয়মিত ক্রিম ব্যবহারও উপকারী।প্রশ্ন: নখ কত দিন পর পর কাটা বা ফাইল করা উচিত?
উত্তর: নখ কাটা বা ফাইলের কোনো কঠোর সময়সীমা নেই। এটি নির্ভর করে আপনার নখের বৃদ্ধির গতি এবং আপনার পছন্দের লম্বার উপর। তবে, নখ ভাঙ্গা রোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ টিপস হলো নখকে অতিরিক্ত লম্বা না রাখা। একটু লম্বা হলেই ফাইল করে প্রান্ত মসৃণ করে নিন। নখের প্রান্ত সামান্য ভোঁতা বা ফাটা দেখা মাত্রই সেটা ফাইল করে মসৃণ করে নিলে পুরো নখ ভাঙা রোধ করা যায়। সাধারণত সপ্তাহে বা দু’সপ্তাহে একবার কাটা বা ফাইল করার প্রয়োজন হতে পারে।- প্রশ্ন: নখ শক্ত করার জন্য দাঁত মাজার পেস্ট বা অন্যান্য অস্বাভাবিক টোটকা কি কার্যকর?
উত্তর: ইন্টারনেটে নখ শক্ত করার জন্য দাঁত মাজার পেস্ট, লেবুর রসে ডুবানো, বা অন্যান্য অস্বাভাবিক টোটকার প্রচলন আছে। এসব পদ্ধতি এড়িয়ে চলাই উত্তম। দাঁতের পেস্টে থাকা অ্যাব্রেসিভ কণা ও ব্লিচিং এজেন্ট নখের পৃষ্ঠকে ক্ষয় করে আরও দুর্বল ও ভঙ্গুর করে তুলতে পারে। লেবুর রসের অ্যাসিডিটিও নখের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। নখ ভাঙ্গা রোধে প্রমাণিত ও নিরাপদ ঘরোয়া উপায় যেমন তেল মালিশ, পুষ্টিকর খাবার, সঠিক যত্ন পদ্ধতিই অনুসরণ করা উচিত।
সতর্কীকরণ: এই আর্টিকেলে উল্লিখিত ঘরোয়া উপায় সাধারণ নখ ভাঙার সমস্যায় সহায়ক। তবে, যদি নখে তীব্র ব্যথা, ফোলা, পুঁজ, রং পরিবর্তন, স্থায়ী বিকৃতি বা অন্য কোনও অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দেয়, অথবা দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা চলতে থাকে, তাহলে অবশ্যই একজন যোগ্য চিকিৎসক বা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। এই লেখা চিকিৎসা পরামর্শের বিকল্প নয়।
আপনার নখই আপনার সুস্থতার আয়না। সামান্য সচেতনতা আর নিয়মিত যত্নই পারে এই ছোট্ট অলংকারটিকে দীর্ঘদিন সুন্দর, মজবুত ও ভাঙনমুক্ত রাখতে। নখ ভাঙ্গা রোধে ঘরোয়া উপায় যেমন নারকেল তেলের মালিশ, জোজোবা অয়েলের স্নান কিংবা পানির কাজে গ্লাভস পরার মতো সহজ অভ্যাসগুলোকে আজ থেকেই আপনার রুটিনের অংশ বানিয়ে ফেলুন। মনে রাখবেন, সুস্থ নখ শুধু সৌন্দর্যই প্রকাশ করে না, আপনার আত্মবিশ্বাসকেও বাড়িয়ে তোলে। তাহলে আর দেরি কেন? আজ রাত থেকেই শুরু করুন সেই তেলের বোতলটা হাতের কাছে রাখতে, এবং হাতের যত্নের এই ছোট্ট পদক্ষেপগুলোকে বড় স্বাস্থ্য উপকারিতায় রূপান্তরিত করতে। আপনার হাতের সুন্দর নখই হোক আপনার ব্যক্তিত্বের দীপ্তিময় স্বাক্ষর!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।