আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নরওয়ের ফিয়র্ড অঞ্চলে উপকূলে খাড়া টিলার মাঝে ঢেউ আছড়ে পড়ার দৃশ্য মানুষকে মুগ্ধ করে৷ সেই ফিয়র্ড অঞ্চলে অদ্ভুত এই ধাতুর গোলকের অর্থ কী? স্থাপত্য ও খাদ্যের অনুরাগীরা কিসের টানে সেখানে হাজির হচ্ছেন? মাছের চোখের আকারের ভাসমান এই শৈল্পিক স্থাপনার নাম ‘স্যামন আই’, যার মধ্যে একটা রেস্তোরাঁও রয়েছে৷
অভিনব স্থাপনা ও ভাসমান রেস্তোরাঁ সৃষ্টি করে টেকসই রন্ধন প্রণালী আকর্ষণীয় করে তোলার উদ্যোগ শুরু হয়েছে৷
মাছ প্রজননের পারিবারিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সোন্দ্রে আইডের মাথায় সেই আইডিয়া এসেছিল৷ কিন্তু সেই নির্মাণের মাধ্যমে তিনি ঠিক কী করতে চান? ‘আইডে ফিয়র্ডব্রুক’-এর কর্ণধার সেই প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘স্যামন আইয়ের লক্ষ্য মানুষকে প্রেরণা জোগানো৷ তারা যেন আরও টেকসইভাবে সি-ফুড বা সামুদ্রিক মাছ কাজে লাগায়৷ সমুদ্রের টেকসই উন্নয়নের চিহ্ন হিসেবে সেটিকে বর্ণনা করা হচ্ছে৷’
পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হারডাঙা ফিয়র্ডের কাছেই প্রথাবিরোধী সেই স্থাপনার দেখা পাওয়া যায়৷ সোন্দ্রে জানালেন, ‘যে সেটি আসলে ফিয়র্ডের মাঝে ভাসছে, প্রায় ১,০০০ মিটার গভীরে সেটির নোঙর ফেলা রয়েছে৷’
ডেনমার্কের কভোরনিং ডিজাইন কোম্পানি মাছের চোখের আকারের সেই স্থাপনা ডিজাইন করেছে৷ পাঁচ মিটার উঁচু ঢেউয়ের ধাক্কাও সামলানোর ক্ষমতা সেটির রয়েছে৷
৯ হাজারেরও বেশি ইস্পাতের প্লেট দেখতে মাছের আঁশের মতো৷ স্যামন মাছের চোখের সঙ্গে মিল আসলে এমন এক আইডিয়ার অংশ, যা মাছ ধরার কাজকে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে উদ্বুদ্ধ করে৷ ভেতরের অংশেও সেটির গোল আকৃতি টের পাওয়া যায়৷ সোন্দ্রে আইডে বলেন, ‘‘ভেতরের অংশ তুলে ধরা আমাদের কাছে খুব জরুরি৷ এমন বক্ররেখা এবং এমন বৈশিষ্ট্যের ভবন থাকলে ভেতরের অংশেও সব গুণাগুণ আনা আমাদের জন্য জরুরি ছিল৷ গোটা ভবনে প্রায় কোনো সরল রেখা নেই৷”
পানির স্তরের তিন মিটার নীচে প্রদর্শনীর জায়গা রয়েছে৷ গোটা বিশ্বের খাদ্য শিল্পখাত কীভাবে আরো টেকসই হতে পারে, সেটাই সেখানকার মূল বিষয়৷ তাছাড়া অ্যাকোয়াকালচার বা সমুদ্রে চাষই বা কোন ভূমিকা পালন করতে পারে? ‘আইরিস’ রেস্তোরাঁর খাদ্য তালিকায়ও সেই ভাবনার প্রতিফলন দেখা যায়৷ ২০২৩ সালের জুন মাসে সেটি উদ্বোধন করা হয়েছে৷
সেখানকার খাদ্যের কনসেপ্টের নেপথ্যে কে আছেন, সেটা জানতে কাছের স্নিলস্টাফেইটয় দ্বীপে যেতে হবে৷ সেখান থেকেই রেস্তোরাঁর প্রধান রাঁধুনী আনিকা মাডসেন নৌকায় করে প্রতিদিন কাজে যান৷
নিজের দেশ ডেনমার্কে নামী রেস্তোরাঁগুলিতে কাজ করার সময়েই তিনি টেকসই রন্ধনপ্রণালীর আইডিয়া থেকে উৎসাহ পেতেন৷ শুধু জলপথে পৌঁছানে সম্ভব, এমন মাছের রেস্তোরাঁ তাঁর কাছে আদর্শ মনে হয়৷ আনিকা মাডসেন মনে করেন, ‘কাছের শহরে এমন রেস্তোরাঁ খোলা অবশ্যই অনেক সহজ হতো৷ কিন্তু মনে হয় এই প্রকল্পের সৌন্দর্যের কারণেও আমি না বলতে পারিনি৷ আমাদের কাহিনি তুলে ধরে অতিথিদের খাদ্যের উপকরণের কাছে নিয়ে আসা সত্যি জরুরি৷ এর বিপরীতটা নয়৷ সেই লক্ষ্যে অবশ্যই আমরা অনেক সি-ফুড পরিবেশন করি৷’
সরাসরি সমুদ্র ও আশেপাশের এলাকা থেকেই রেস্তোরাঁয় খাদ্যের উপকরণ আনা হয়৷ সেই সব উপকরণ দিয়ে আনিকা ১৮ পদের মেনু সৃষ্টি করেন৷
টেকসই আইডিয়াকে খাদ্যের রূপ দিতে যে সব পদ সৃষ্টি করা হয়, ‘৫০০ মিটার’ তারই অন্যতম৷ মাসেল, ওয়াইল্ড জুনিপার, চিংড়ি ও সিউইড-সহ সেটির সব উপকরণই ৫০০ মিটার ব্যসের মধ্য থেকে সংগ্রহ করা হয়৷
সব মানুষই যাতে তাঁরই মতো স্থানীয় পর্যায়ের সম্পদের কদর করেন, আনিকা সেটাই চান৷
সুত্র: ডয়চে ভেলে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।