জুমবাংলা ডেস্ক : চাকরি না পেয়ে বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে বাঁশের বেড়া দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন জমির মালিক। ঘণ্টা দুয়েক অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকার পর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে স্কুলটিতে একমাত্র চলাচলের রাস্তাটি থেকে সেই বেড়া সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জামনগর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনের অংশের জমির মালিক ছিলেন মরহুম নাজিম উদ্দিন। সেই জায়গাটি দিয়েই বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ সকলের যাতায়াত ছিল। সম্প্রতি বিদ্যালয়টিতে ৪ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেখানে বিদ্যালয়ে চলাচলের ওই রাস্তাটির বিনিময়ে মরহুম নাজিম উদ্দিনের পরিবারের পক্ষ থেকে তার ছেলে রিয়েল আহম্মেদকে চাকরি দেওয়ার দাবি জানানো হয়। কিন্তু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেইসব পদে অন্য ব্যক্তিদের পদায়ন করলে ক্ষিপ্ত হয়ে গতকাল সকালে নাজিম উদ্দিনের ছেলে জুয়েল আহম্মেদ ও রিয়েল আহম্মেদ স্কুলের মূল গেটের সামনে তাদের জমির ওপর বাঁশ দিয়ে বেড়া দেয়। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের প্রবেশে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। ঘটনাটি জানাজানি হলে বাগাতিপাড়া থানা পুলিশ ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। এসে স্কুল ফটকের সামনে দেওয়া বেড়া উচ্ছেদ করে নাজিম উদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সমঝোতা করার তাগিদ দেন।
নাজিম উদ্দিনের ছেলে জুয়েল আহম্মেদ জানান, বিদ্যালয়ের গেটের সামনের সড়কটি আমাদের পৈতৃক সম্পত্তির অংশ। দীর্ঘদিন যাবৎ এ রাস্তা দিয়েই স্কুলের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে তাতে আমরা কোনোদিন বাধা দেইনি। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের পরিবারের প্রতিশ্রুতি ছিল যে আমাদের পরিবারে যদি যোগ্য কেউ গড়ে ওঠে তাহলে তাকে এই স্কুলে চাকরি দেওয়া হবে। সেই আশাতেই আমরা ছিলাম। সম্প্রতি চারটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়লে আমার প্রতিবন্ধী ছোট ভাইকে পিয়ন পোস্টে চাকরি দিতে বলি। কিন্তু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাকরি না দিয়ে টাকার বিনিময়ে অন্য ব্যক্তিদের চাকরি দেয়। পরে আমি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে বলি, ম্যাডাম আমাদের জায়গা আপনাদের দিলাম কিন্তু চাকরিটা তো হলো না। এখন এই জায়গাটা কী উপলক্ষে আপনাদের দেব? তিনি বলেন, চাকরি দেওয়া হবে না, চাকরি অন্যদের হয়ে গেছে। তোমাদের জায়গায় তোমরা যা ইচ্ছে করো। তো হেডমাস্টার যখন ডিক্লেয়ার দিলো তোমাদের রাস্তা নেব না। নদীর ধার দিয়ে বিকল্প রাস্তা করবো। তখন হেডমাস্টারের কথা অনুযায়ী এখানে বেড়া দিয়েছি।
টাকার বিনিময়ে অন্যদের চাকরি দেওয়ার কথা অস্বীকার করে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক হাজেরা খাতুন বলেন, স্কুলটির প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এই সড়কটি ব্যবহার হয়ে আসছে। বিদ্যালয়টির মূল ফটকের সামনে অল্প একটু জমি তাদের বলে দাবি করে। আমরা বলেছি জমির আসল দলিল উপস্থাপন করলে জায়গাটি আমরা কিনে নেব। তারা তা না করে ইদানিং এসে নৈশপ্রহরীর চাকরির দাবি করে। কিন্তু সেই পদ ফাঁকা নেই।
তিনি বলেন, জুয়েল আহম্মেদ একজন নেশাগ্রস্ত লোক, সে চার দিন আগে জেল থেকে বের হয়ে এসে এই কাণ্ড করেছে। তার বিরুদ্ধে স্কুলের বিল্ডিং তোলার সময় চাঁদাবাজির মামলাও রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) জানিয়েছি। তিনি বিষয়টি দেখছেন। আগামী বৃহস্পতিবার জমিটি নতুন করে মাপা হবে বলে জানান এই প্রধান শিক্ষক।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক জানান, বিদ্যালয়ের প্রবেশপথের ওই জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন। বেড়া দেওয়ার খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে বেলা দুইটার দিকে স্কুলের অফিসে উভয়পক্ষকে নিয়ে একটি বৈঠকে বসা হয়েছিল। সেখানে আইনগতভাবে জমি গ্রহণের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
বাগাতিপাড়া মডেল থানা পুলিশের ওসি শফিউল আযম খান বলেন, জামনগর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল ফটকে বেড়া দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই এবং বেড়াটি উচ্ছেদ করি। ওখানে গিয়ে শুনেছি ওই জায়গাটি ব্যক্তি মালিকানাধীন। পরে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জমির মালিকেরা আলোচনায় বসে। তবে সেখানে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে তা আমি জানি না। সূত্র : ঢাকা পোস্ট
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।