বাংলাদেশে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমি বা সম্পত্তি নিয়ে ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে বিরোধ, দখলদারিত্ব ও দীর্ঘমেয়াদি মামলা বহু বছর ধরে চলে আসছে। প্রায় প্রতিটি পরিবারেই এই ধরনের কোনো না কোনো জটিলতা রয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে সরকার নতুন ও বাধ্যতামূলক নিয়ম চালু করেছে। এখন থেকে উত্তরাধিকার সম্পত্তি নির্দিষ্ট আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভাগ হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ প্রতারণা বা জবরদখল করতে না পারে।
নতুন নিয়মে কী বলা হয়েছে
১. আবশ্যিক আপোষ বণ্টননামা দলিল
এখন থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমি ভাগ করতে চাইলে আবশ্যিকভাবে “আপোষ বণ্টননামা দলিল” করতে হবে। এটি রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রিকৃত হতে হবে, যাতে সবাই আইনি স্বীকৃতি পায়।
২. মৌখিক বণ্টন অবৈধ
আগে অনেক পরিবারে ভাই-বোন বা আত্মীয়দের মধ্যে মৌখিকভাবে জমি ভাগ হয়ে যেত, কিন্তু লিখিত দলিল হতো না। এখন থেকে মৌখিক বা অরেজিস্টারড চুক্তি আর বৈধ হবে না।
৩. দলিল ছাড়া জমি বিক্রয় বা হস্তান্তর নিষিদ্ধ
বণ্টননামা দলিল ছাড়া জমি বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না। করলে সেটি আইনত অবৈধ গণ্য হবে এবং এর জন্য আইনি শাস্তি হতে পারে।
৪. ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ আইন ২০২৩ অনুযায়ী ব্যবস্থা
নতুন নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ অনুযায়ী মামলা করে জরিমানা বা জেল পর্যন্ত দেওয়া যেতে পারে।
৫. নামজারি মানেই মালিকানা নয়
অনেকে মনে করেন, খাজনা বা নামজারি করলেই মালিক হয়ে গেলেন। কিন্তু নতুন নিয়ম অনুযায়ী বণ্টননামা দলিল ছাড়া নামজারি বৈধ হবে না।
কারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবেন?
- যেসব পরিবারে এখনো জমি ভাগাভাগি হয়নি বা অভিভক্ত জমি রয়েছে।
- অতীতে যারা মৌখিকভাবে জমি ভাগ করেছেন, তাদের এখন রেজিস্ট্রার অফিসে আইনি দলিল করতে হবে।
- যারা পূর্বপুরুষদের জমি দখলে রেখে বসবাস করছেন কিন্তু কোনো আইনি কাগজপত্র নেই, তাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
পুরনো নিয়ম কেন ব্যর্থ হয়েছিল?
২০০৪ সালেই প্রথম আপোষ বণ্টননামা দলিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। কিন্তু সচেতনতার অভাব, দুর্নীতি এবং প্রথাগত ব্যবস্থার কারণে বেশিরভাগ মানুষ তা মানেননি। ফলে মামলা, প্রতারণা, দলিল জালিয়াতি ও জবরদখল বেড়ে যায়। এবার সরকার আরও কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
ভূমি আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নিয়ম বাস্তবায়িত হলে—
- পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও মামলা উল্লেখযোগ্য হারে কমবে।
- জমির মালিকানা নিয়ে স্বচ্ছতা আসবে।
- ভবিষ্যতে প্রতারণা ও জালিয়াতির সুযোগ কমবে।
- জমির বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।
সতর্কবার্তা ও পরামর্শ
যারা এখনো আপোষ বণ্টননামা দলিল করেননি, তাদের দ্রুত তা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দেরি করলে আইনি জটিলতায় পড়তে হতে পারে।
যে তথ্যগুলো লাগবে:
- জমির খতিয়ান
- হাল দাগ ও মৌজা
- ওয়ারিশদের তালিকা
- কাকে কত শতাংশ বরাদ্দ হবে তার হিসাব
- সবার স্বাক্ষর
এসব থাকলে সহজেই দলিল রেজিস্ট্রি করা যাবে।
নতুন নিয়ম বাস্তবায়িত হলে
- পরিবারে শান্তি বজায় থাকবে।
- জমি নিয়ে মামলা কমবে।
- প্রতারণা ও জালিয়াতি হ্রাস পাবে।
- ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিরাপদে সম্পত্তির মালিকানা পাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।