লাইফস্টাইল ডেস্ক : চলার পথে মানুষ নানা রকম বাধাবিঘ্নের সম্মুখীন হয়। কিছু বাধা সরাসরি প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায়, আবার কিছু বাধা অজান্তেই চোরাবালির মতো আঁকড়ে ধরে। এসব বাধা চিহ্নিত করে তা অতিক্রম করার উপায় উদ্ভাবন করে প্রয়োগের মাধ্যমেই মানুষ হতে পারে সফল। তেমন কয়েকটি বাধা ও তা অতিক্রমের উপায় জানাচ্ছেন এনাম-উজ-জামান
সফলতার বাধা
অতীত স্মৃতিতে ডুবে থাকা
আমরা অনেকেই অতীতের ভুল নিয়ে সংকুচিত থাকি, হা-হুতাশ করি। এতে সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই হয় না। অতীতের ভুলকে ইতিবাচকভাবে দেখলে আমরা বুঝতে পারব, এটি সফলতার পথে একটি সিঁড়ি। এই ভুলের মাধ্যমে আমরা অভিজ্ঞতা অর্জন করি, যার মাধ্যমে আমরা সেই কাজটি সঠিকভাবে করতে পারি। তাই অতীত নিয়ে পড়ে না থেকে অর্জিত শিক্ষা নিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা উচিত।
কারও অনুরোধে আয়ত্তের বাইরের কাজ চেষ্টা করা কারও অনুরোধে নিজের আয়ত্তের বাইরের কাজ চেষ্টা করাকে প্রবাদের ভাষায় বলে অনুরোধে ঢেঁকি গেলা। এর ফলে নিজের কাজ নষ্ট হয়। কাজটি ভালো হয় না। ফলে অনুরোধ যিনি করেছেন তিনি সন্তুষ্ট হন না। আমার নিজের সুনাম নষ্ট হয়। এসবই সফলতার পথে বাধা সৃষ্টি করে। তাই কখনো কারও অনুরোধে এমন কোনো কাজ করতে সম্মত হবে না, যা তুমি করতে পারো না।
অপরকে পরিবর্তনের চেষ্টা
সমাজের প্রতিটি মানুষ নিজের সক্ষমতা, পরিবেশ, শিক্ষা ও মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত হয়। তাই প্রতিটি মানুষ নিজের আচরণকে সঠিক বলে মনে করে। মানুষ নিজে চেষ্টা করে নিজেকে পরিবর্তিত করতে পারে কিন্তু অপরকে নয়। তাই অন্যকে পরিবর্তনের চেষ্টা করো না। এই চেষ্টার কারণে তার সঙ্গে তোমার সম্পর্কের অবনতিও ঘটতে পারে। এ ক্ষেত্রে শুভাকাক্সক্ষী হিসেবে তাকে একবার সতর্ক করা যেতে পারে, কিন্তু জোর করো না। জোর করলে তোমার ও ওই ব্যক্তির মানসিক শান্তি বিঘিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপও করা হয়, যা ঠিক নয়।
সবাইকে খুশি করার চেষ্টা
মানুষ তার বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্য নিয়েই সুন্দর। তাদের পছন্দগুলোও ভিন্ন ভিন্ন। তাই কোনো একটি কাজ দ্বারা সবাইকে খুশি করা অসম্ভব। এই সহজ সত্যকে মেনে নিতে শেখো। যে সবাইকে খুশি করতে চায় তাকে অন্যরা সুবিধাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করে যা তোমার সুনামের জন্য ক্ষতিকর। তাই সবাইকে খুশি করার চেষ্টা বাদ দিয়ে যে কাজ তোমার কাছে সঠিক, আনন্দময় ও গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় সেই কাজ করো।
চোখের দৃষ্টিকেই বিশ্বাস করা
এমন অনেক কিছুই আছে, যা প্রথম দেখায় বা চোখের দেখায় সত্য সুন্দরের প্রতিভূ মনে হলেও আদতে গ্রহণযোগ্য নয়। এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে নির্ভর করতে হবে অন্তর্দৃষ্টির ওপর। এসব চোরাবালি এড়িয়ে চলতে পারলে সাফল্য লাভ সহজ হবে।
সফল হওয়ার উপায়
নিজস্ব প্রতিভা এবং দক্ষতা
সফল হওয়ার জন্য নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ খুব জরুরি। লক্ষ্য সবসময় নিজের পছন্দ, প্রতিভা ও দক্ষতা অনুসারে হওয়া উচিত। একটি মাছ যদি গাছে চড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে তা হলে সে কখনো সফল হবে না। তাই লক্ষ্য নির্ধারণের আগে নিজের প্রতিভা ও দক্ষতাকে আমলে নাও।
স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা
লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নির্ধারণ করার পরের ধাপ হলো পরিকল্পনা গ্রহণ। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি দুধরনের পরিকল্পনাই নিতে হবে। পরিকল্পনা হতে হবে সুনির্দিষ্ট, যথাযথ এবং অর্থবোধক। পরিকল্পনা যেন ক্যারিয়ার গঠনের পথপরিক্রমার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়। এ ধাপে অন্তর্ভুক্ত থাকবে কী করতে চাই, কীভাবে করতে চাই, কখন করতে চাই। স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা হতে পারে চলতি বছরে চূড়ান্ত পরীক্ষায় কেমন ফলাফল চাও তা নির্ধারণ এবং কীভাবে সেই লক্ষ্য পূরণ করবে তার পরিকল্পনা। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হতে পারে আগামী পাঁচ বছর বা দশ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চাও সে সম্পর্কে পরিকল্পনা। পরিকল্পনা গ্রহণের সময় খেয়াল রাখতে হবে নিজের অবস্থান, নিজের বা পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা, পারিবারিক প্রয়োজন এবং সমস্যা ও সম্ভাবনা ইত্যাদি। পরিকল্পনাতে ব্যয়িত সময় কাজে নামার পর সময়ের অপচয় হ্রাস করবে বহুগুণে। দীর্ঘ পরিকল্পনার আরেকটি দিক হলো জীবনব্যাপী পথচলার জন্য একটি আদর্শকে গ্রহণ করা। এ উদ্দেশ্যে ক্যারিয়ার গঠনের পরিকল্পনার পাশাপাশি চরিত্র গঠন ও উন্নয়নের জন্যও আলাদা পরিকল্পনা করো।
মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার
সফলতার জন্য প্রয়োজন পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ব্যবহারিক শিক্ষায় দীক্ষিত হওয়া। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, প্রতিভা হলো দক্ষতা অর্জনের বিশেষ ক্ষমতা। তাই লক্ষ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কাজে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলা। শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যেই পড়াশোনাকে সীমাবদ্ধ রেখে সাহিত্য, শিল্প, ইতিহাস, দর্শন ও আত্মোন্নয়ন বিষয়ে বই পড়ার অভ্যাস করা। ক্লাসের ভালো ফল সফল হতে সাহায্য করে। তাই এ বিষয়েও মনোযোগী হতে হবে। শেখার পথে কোনো বাধাকেই গ্রাহ্য করবে না। কারণ অর্জিত জ্ঞানই মানুষের প্রকৃত বন্ধু।
সময়ের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার
সময়কে যে যেভাবে ব্যবহার করে তার জীবন সেভাবে গড়ে ওঠে। ছাত্রজীবনে সময়ের সদ্ব্যবহার করতে ব্যর্থ হলে সফল হওয়া তথা সফল জীবন গড়া সম্ভব হয় না। সময়ের কাজ যথাসময়ে না করে ভবিষ্যতের জন্য ফেলে রাখা সফলতা লাভের বিরাট অন্তরায়। প্রয়োজন সময়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ ও পরিকল্পনা গ্রহণ সময়ের এই অপচয় অবশ্য বহুলাংশে কমায়। লক্ষ্য নির্ধারিত থাকে বলে অপ্রয়োজনীয় কাজ সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। ফলে এ ধরনের সময়ক্ষয়ী কাজ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।