সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: হাবিল হোসেনের বিরুদ্ধে বালু মহাল, মাটি ব্যবসা, গ্রেফতার বাণিজ্য, মামলা গ্রহণ, মামলা তদন্ত, ফুটপাতের হকার, পরিবহন সেক্টরসহ বিভিন্ন খাত থেকে বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে যোগদান করেন হাবিল হোসেন। এরপর থেকেই কতিপয় অসাধু উপ-পরিদর্শক ও সহকারী উপ-পরিদর্শকের সমন্বয়ে গড়ে তুলেন ঘুষ বাণিজ্যের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। কতিপয় অসাধু উপ-পরিদর্শক ও সহকারী উপ-পরিদর্শকের মাধ্যমেই আদায় করতেনঘুষের টাকা। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বালু মহাল ও মাটি ব্যবসায়ীদের ডেকে নিয়ে নিজেই ঘুষের টাকা আদায় করতেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। তিনি ঘুষ বাণিজ্যে এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন যে, ঘুষের টাকায় গত কুরবানির ঈদে গরু কিনেছেন বলে দাবি করেন এক ভোক্তভোগী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মানিকগঞ্জের বিভিন্ন বালুমহাল থেকে মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকা, মাটি ও ড্রেজার ব্যবসাীদের কাছ থেকে প্রতিমাসে এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা, সিনেমা হল থেকে মাসে ৫০ হাজার টাকা , আবাসিক হোটেলগুলো থেকে ৩০ হাজার টাকা, ট্রাক টার্মিনাল থেকে ৫ হাজার টাকা, লেগুনা স্ট্যান্ড থেকে ৫ হাজার টাকা, ভাঙ্গারি দোকানগুলোর প্রত্যেকটি থেকে মাসে এক হাজার টাকা, প্রায় অর্ধশতাধিক হ্যালোবাইক ও রিকশা গ্যারেজের প্রতিটি থেকে এক হাজার টাকা , ফুটপাত ব্যবসা, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স থেকে এক হাজার থেকে পনেরো শত টাকা, মামলা গ্রহণ ও মামলা তদন্ত বাদি-বিবাদীর সামাজিক মর্যাদা অনুযায়ী ৫ হাজার থেকে বিশ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন ওসি হাবিল হোসেন। থানার কতিপয় অসাধু এসআই ও এএসআইয়ের মাধ্যমে এসব টাকা গ্রহণ করেন তিনি। অনেক ক্ষেত্রে হাবিল সরাসরি নিজেই টাকা লেনদেন করে থাকেন। মানিকগঞ্জ সদর থানায় যোগদানের পর থেকে ওসি হাবিল হোসেন কমপক্ষে আড়াই কোটি টাকা বাণিজ্য করেছেন বলে দাবি করেন স্থানীয়রা।
মো: লাভলু নামের এক মাটি ব্যবসায়ী জানান, ইটভাটার সিজনে তিনি মাটির ব্যবসা করেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে মাটি ক্রয় করে ভেকু দিয়ে সেগুলো কেটে ইটভাটায় বিক্রি করেন। কিছুদিন আগেও মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসিকে দুই ধাপে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। মো: শুভ নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, কিছুদিন আগে বেতিলা চকে ভেকু দিয়ে মাটি কাটার সময় ওসি হাবিল হোসেন খবর পেয়ে বেতিলা ইউনিয়নের দফাদার উজ্জলকে ফোন দিয়ে ভেকু আটকে রাখতে বলেন।পরে সেই ভেকু ছাড়াতে ২০ হাজার টাকা নেন।
কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রাজিবপুর এলাকার একটি মাদ্রাসা ও ঈদগা মাঠ ভরাটের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) অনুমতি থাকা সত্যেও ওই মাদ্রাসা ও ঈদগা মাঠে বালু ভরাটের কাজ শুরু হলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন ওসি হাবিল হোসেন। পরে ড্রেজার মালিক মো: বাবুল হোসেন ও স্থানীয় এক মাতব্বর মো: মাসুদ থানায় গিয়ে দুই দফায় এক লক্ষ টাকা দিয়ে আসেন।
মো: মাসুদ বলেন, মাদ্রাসা ও ঈদগা মাঠের বালু ভরাটের জন্য নদী থেকে বালু উত্তোলনে ডিসি অফিস থেকে অনুমতি দেয়ার পরও ওসি সাহেবকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। গত ঈদের দুই দিন আগে এসআই খলিলকে পাঠিয়ে ৪০ হাজার টাকা নেন ওসি সাহেব। এসআই খলিল আমাদের সামনে এসে ওসির ফোন লাউড স্পীকারে দেয়। এসময় ওসি সাহেব খলিল দারোগাকে বলেন, খলিল রাউন্ড ফিগার করে আনো। পরে ওসির জন্য ৪০ হাজার টাকা নিয়ে যান এসআই খলিল। এই কাজের জন্য এর আগেও ওসি সাহেবকে আরো এক লক্ষ টাকা দিতে হয়েছে। সেই টাকা থানায় গিয়ে দিয়ে আসতে হয়েছে।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: হাবিল হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার জীবনেও এগুলো দেখিনি। এগুলো অসত্য অভিযোগ। এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।