জুমবাংলা ডেস্ক : সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে ফাঁসি কার্যকরের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চলছে। তবে বাস্তবতা অনেকটাই আলাদা। আদালতের চূড়ান্ত রায় ছাড়া এমন দাবি শুধুই বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে।
Table of Contents
ওসি প্রদীপের ফাঁসি দাবির প্রচার ও বাস্তব অবস্থা
মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও এসআই লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় কক্সবাজারের আদালত। রায় ঘোষণার পরপরই এই দুটি নাম ঘিরে প্রচারণা শুরু হয়, কিন্তু প্রকৃত আইনি প্রক্রিয়ায় এখনো তা কার্যকর হয়নি।
২০২২ সালে উচ্চ আদালতে মামলাটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে গৃহীত হয় এবং আসামিরা আপিলও করেন। এই প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার সুযোগ নেই।
রাষ্ট্রের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া শুনানিতে এখনও মাত্র ১৪ দিন অতিক্রান্ত হয়েছে। ফলে সামাজিক মাধ্যমে সাত দিনের মধ্যে ফাঁসি কার্যকরের তথ্য সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
আইনি প্রক্রিয়া ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারের কারণ
বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায়, কোনো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে হলে উচ্চ আদালতের অনুমোদন আবশ্যক। পাশাপাশি আসামিদের আপিল ও অন্যান্য আইনি অধিকার নিশ্চিত করতে হয়। এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না হলে দণ্ড কার্যকর করার সুযোগ নেই।
বিভ্রান্তির মূল কারণ হলো কিছু সাংবাদিক বা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীর ভুল ব্যাখ্যা। আপিল শুনানির অংশে বিচারকের মন্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
যেকোনো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে আসামির পরিবারকে সাক্ষাতের সুযোগ দিতে হয়, যা এখনও হয়নি। অর্থাৎ আইন অনুযায়ী কার্যকর হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এখনো বিচারাধীন পর্যায়ে রয়েছে এই মামলা।
সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রভাব
ভুল তথ্যের কারণে সাধারণ জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। আইন ও বিচারপ্রক্রিয়া সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে এটি সমাজে ভুল বার্তা ছড়াতে পারে। এমনকি এটি বিচারপ্রক্রিয়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ফ্যাক্টওয়াচ-এর মতে, এই প্রচারগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটি শুধু বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হ্রাস করে না, বরং অসত্য তথ্য প্রচারের সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করে।
উল্লেখযোগ্য পটভূমি ও মামলার অগ্রগতি
২০২০ সালের ৩১ জুলাই, কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা। তার বোন প্রদীপ ও লিয়াকতসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে দেওয়া রায়ে ২ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৬ জনের যাবজ্জীবন এবং ৭ জনকে খালাস দেওয়া হয়।
এই মামলার কাগজপত্র হাইকোর্টে জমা পড়ে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এবং ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে শুনানি শুরু হয়। এটি এখনো বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চালানো হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট অভ্যন্তরীণ তথ্য
- ক্রাইম নিউজ বিভাগে আরও বিস্তারিত পড়ুন।
- সিনহা হত্যা মামলার রায় সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেখুন।
ওসি প্রদীপের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দাবিতে প্রচার যদি চলমানও থাকে, তা চূড়ান্ত রায়ের আগে বাস্তবায়নের কোনো সুযোগ নেই। বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রাখতে এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য থেকে বিরত থাকতে সবার উচিত সঠিক তথ্য যাচাই করে জানা।
🤔 সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQs)
ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে রায় কী?
কক্সবাজারের আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন, তবে রায় এখনো উচ্চ আদালতে চূড়ান্ত হয়নি।
ফাঁসি কার্যকর হওয়ার জন্য কী কী প্রক্রিয়া লাগে?
ডেথ রেফারেন্স, আপিল, জেল আপিল, এবং সর্বশেষ অনুমোদনসহ বিচারকাজ শেষ না হলে ফাঁসি কার্যকর করা যায় না।
বর্তমানে মামলাটি কোন পর্যায়ে আছে?
হাইকোর্টে শুনানির প্রক্রিয়া চলছে এবং মাত্র ১৪ দিনের শুনানি সম্পন্ন হয়েছে।
এই ধরনের ভুল তথ্যের প্রভাব কী?
এটি জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায় এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা নষ্ট করে।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়?
আসামির পরিবারকে তলব করা হয় এবং সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয়, যা এখনো হয়নি।
সঠিক তথ্য কোথা থেকে পাওয়া যাবে?
বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম এবং সরকারি উত্স থেকেই সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা উচিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।