বিনোদন ডেস্ক : গোটা সপ্তাহের কর্মব্যস্ত জীবনের পর ছুটির দিনগুলো যেন একটু স্বস্তি নিয়ে আসে সবার জীবনে। ছুটির দিনে মানুষ বিভিন্নভাবে উদযাপন করে। পরিবার নিয়ে ঘোরাফেরা, ভ্রমণ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাজির হওয়া। তবে ছুটির দিনে বেশিরভাগ মানুষের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম সিনেমা।
টিভি কিংবা বড় পর্দায়, সিনেমা বা সিরিজ দেখা এখন মানুষের নিত্যদিনের অংশ হয়ে উঠছে। আর ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় এখন সবকিছুই মানুষের হাতের মুঠোয়। আগামীকাল শুক্রবার। ছুটির দিনে ঘরে বসেই দেখে নিতে পারেন, এমন ৫টি চলচ্চিত্র নিয়েই আজকের প্রতিবেদন। বিশ্ব চলচ্চিত্র অঙ্গনে এই চলচ্চিত্রগুলো আজও ‘মাস্টারপিস’ হিসেবেই সমাদৃত।
পারসুট অফ হ্যাপিনেস : জীবন মানেই সংগ্রামের গল্প। প্রত্যেকটি সফল মানুষের সফলতার পেছনেই রয়েছে ব্যর্থতার নির্মম কোনো গল্প। সংগ্রাম না করে জীবনে কেউ কখনো বড় হতে পারেনি।
পৃথিবীর সেরা ধনীদের জীবন কাহিনী ঘাঁটলেও দেখা যাবে কোনো না কোনো এক সময়ে করে আসা কঠিন জীবন সংগ্রামের গল্প। তাদের অতীতের এসব গল্প যেমন বাকিদের জন্য শিক্ষামূলক ঠিক তেমনি অনুপ্রেরণাদায়ক। পরাজয়, চ্যালেঞ্জ আর অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে যাওয়া এক সেলসম্যানের গল্প ‘দ্য পারসুট অব হ্যাপিনেস’। স্ত্রী ছেড়ে চলে যায়, বাড়িভাড়া পরিশোধ করতে না পারায় হারান মাথা গোঁজার ঠিকানাটিও। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে তাঁর মাথায় একটিই চিন্তা আর সেটা হলো নিজের সন্তানের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা। জীবনের সঙ্গে তার এই অদম্য যাত্রায় একবারও আশা ছাড়েনি, হোঁচট খেয়েছেন বার বার কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছেন আবারও। সিনেমাটিতে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য অস্কার এবং গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন পান অভিনেতা উইল স্মিথ। উইল স্মিথের ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেন তাঁরই ছেলে জ্যাডেন স্মিথ।
দ্য গডফাদার : মাফিয়াজগত নিয়ে এখন পর্যন্ত সেরা সিনেমা বলা হয় ‘দ্য গডফাদার’কে। ইতালির সিসিলি থেকে আসাসাধারণ একজন ভিটো কার্লিয়নি ভাগ্যক্রমে হয়ে যায় আমেরিকার অন্ধকার জগতের ডন। ১৯৭২ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটি তিনটি বিভাগে অস্কার জিতে নেয়। মারিয়ো পুজোর বিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য গডফাদার’ অবলম্বনে সিনেমাটি নির্মিত। সিনেমাটির গল্পে দেখা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে, আমেরিকার অর্থনীতির অবস্থা শোচনীয়। এর মধ্যেই মাফিয়া পরিবারগুলোর ব্যবসা চাঙ্গা হয়ে উঠছে। তেমনই একটি পরিবার হল কর্লিওনি। এই পরিবারের প্রধান হলেন ভিটো কর্লিওনি গডফাদার। আর কর্লিওনি পরিবারকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে দ্যা গডফাদার উপন্যাসের কাহিনী। মারিও পুজো উপন্যাসটি সৃষ্টি করেছেন প্রেম ভালবাসা, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের অপূর্ব মিশ্রণে। সিনেমাটি আজও চিরসবুজ হয়ে রয়েছে বিশ্ব বিনোদন অঙ্গনে। অভিনয় করেছেন কিংবদন্তি অভিনেতা মার্লন ব্রান্ডো, আল পাচিনো, রবার্ট ডি নিরো মারিও পুজোসহ একাধিক শক্তিমান তারকা।
লাইফ ইজ বিউটিফুল : জন্ম মানে মৃত্যুর প্রতি অমোঘ যাত্রা, জন্মদিন মানে একটি সিঁড়ি অতিক্রম। তেমনি ইতালিয়ান সিনেমা ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’ও কমবেশি সবার দেখা। জীবন সুন্দর, নির্মমও বটে। নির্মমতাকে পাশ কাটিয়ে সৌন্দর্য্যকে উপভোগ করতে হয়। সেই সুযোগটুকুও যদি না থাকে কল্পনায় একটা জগৎ সৃষ্টি করে হলেও ভালো থাকতে হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপর অনেক সিনেমা তৈরী হয়েছে যার মধ্যে সবচাইতে সেরা বলা যায় ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’ সিনেমাটি। ২০ শে ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে ইতালিতে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটি দেখার পর যে কেউ বলতে বাধ্য হবেন যে এটা একটা মাস্টারপিস মুভি। বেস্ট এক্টর,বেস্ট মিউজিক,বেস্ট ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ ফিল্ম হিসাবে অস্কার পাওয়া এই মুভিটি তাহলে দেখেই ফেলুন। এতে অভিনয় করেছেন রবার্টো বেনিগনি, নিকোলেটা ব্রাশচি ও গুস্তিনো দুরানোর মতো অভিনয়শিল্পীরা।
অক্টোবর স্কাই : ধরুন আপনার জন্ম এমন এক জায়গায় যেখানকার মানুষের প্রধান পেশা হচ্ছে কয়লা খনিতে কয়লা খনন করা এবং আপনার বাবাও কয়লা খনিতে কাজ করা একজন শ্রমিক। এর বাইরে কোন কিছু করা এখানে অসম্ভব বলে ধরা হয়। কিন্তু আপনি সবার থেকে আলাদা চিন্তা করেন। আপনি জীবনে বড় কিছু হতে চান! দুনিয়াতে নিজের সাফল্যের পদচিহ্ন আঁকতে চান সব বাধা আর উপহাস অতিক্রম করে। এমনই এক সত্য ঘটনা অবলম্বনে বানানো হয়েছে ‘অক্টোবর স্কাই’ সিনেমাটি। এটি এমনি একটা মুভি যা ভালো লাগার কোমল স্পর্শ বুলিয়ে দিয়ে যাবে আপনার হৃদয়ে। সময় থাকলে দেখে ফেলতে পারেন। ১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত জ্যাক গাইলেনহাল, লওরা ডার্ন ও ক্রিস কুপার অভিনীত সিনেমাটি আজও দর্শকহৃদয়ে চিরসবুজ।
টুয়েলভ এংরি ম্যান : সিডনী লুমের পরিচালনায় অসাধারণ একটি কোর্টরুম ড্রামা। ১৯৫৭ সালে মুক্তি পাওয়া এই মুভিটির অবস্থান আইএমডিবির টপলিস্টে ৭ নম্বরে। সিনেমার পুরো কাহিনীটাই আবর্তিত হয় জুরি রুমে ১২ জন জুরির তর্ক-বিতর্কের মধ্য দিয়ে। পিতৃহত্যার দায়ে অভিযুক্ত এক কিশোরের বিচারের শুনানী শেষে জুরিরুমে জুরিবোর্ডের ১২ সদস্য আলোচনায় বসে ছেলেটি দোষী না নির্দোষ সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। শুনানীতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত, তাই প্রথমে সবাই পুরাপুরি নিশ্চিত থাকে ছেলেটা দোষী এবং তার একমাত্র শাস্তি হওয়া উচিত মৃত্যুদন্ড। কিন্তু সাত নম্বর জুরি হেনরি ফন্ডা উঠে দাঁড়ায় এবং ছেলেটির মৃত্যুপরোয়ানা নিশ্চিত করার আগে অন্তত খানিকটা আলোচনা করার আহ্বান জানায়। শুরু হয় শ্বাসরুদ্ধকর আলোচনা। একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে অবিশ্বাস্য সব তথ্য- ঘটনাপ্রবাহের অযৌক্তিকতা এবং সাক্ষীদের বক্তব্যে অসামঞ্জস্যতা। সেই সাথে যুক্ত হয় ১২ জুরির ১২ রকম মত। সত্য নির্ণয়ের চেয়ে প্রধান হয়ে উঠতে থাকে জুরিদের ব্যক্তিগত ইগো। শেষ পর্যন্ত কি রয়েছে ছেলেটির ভাগ্যে?
পরিচালকের অসাধারণ দক্ষতায় আর চমৎকার ক্যামেরা টেকনিকে দর্শকের পক্ষে চোখের পলক ফেলা কঠিন হয়ে পড়বে। শুধু ১২ জন মানুষের বকবকানি নিয়ে মাত্র একটি ছোট রুমের মধ্যে শুট করা সাদাকালোতে চিত্রায়িত একটি সিনেমা যে এরকম অসাধারণ হতে পারে, সেটা যে না দেখবে তার পক্ষে কল্পনাও করা সম্ভব না। তাই সময় থাকলে দেখে ফেলতে পারেন এটি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।