জুমবাংলা ডেস্ক : দেখে বোঝার উপায় নেই এটি একটি মসজিদ। পুরোনো হওয়ায় ভেঙে গেছে কিছু অংশ। কোথাও কোথাও সাদা চুন বা রং উঠে গিয়ে শ্যাওলা জমেছে। কালচে হয়ে গেছে পুরো দেওয়াল। তবে ভবনটির উপরিভাগের একটিমাত্র গম্বুজ দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটি একটি প্রাচীন মসজিদ। চুন, সুরকি ও ইট দিয়ে তৈরি মসজিদটির চার কোণায় চারটি পিলারের নান্দনিক কারুকার্য এখন প্রায় বিলীন।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় বেহাল দশায় কালের সাক্ষী হয়ে আজো দাঁড়িয়ে আছে ৬ ফুট দৈর্ঘ্য-প্রস্থের দেশের সবচেয়ে ছোট এক গম্বুজ বিশিষ্ট প্রাচীন এই মসজিদটি। প্রাচীন ও ইসলামিক ঐতিহ্যের অনন্য নিদর্শনটি ‘কাদিরবক্স মন্ডল মসজিদ’ নামেই পরিচিত। এই নামেই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে তালিকাভুক্ত হয়েছে স্থাপনাটি। তবে ৭০০ বছরের পুরোনো মসজিদটির নাম নিয়ে রয়েছে বিতর্ক।
প্রাচীন স্থাপত্য, নকশা ও আরবি হরফ মুদ্রিত দেশের সবচেয়ে ছোট মসজিদকে ঘিরে মানুষের আগ্রহ দিনদিন বেড়েই চলছে। কখন, কিভাবে আর কে এই মসজিদ নির্মাণ করেছেন তার সঠিক কোনো তথ্য নেই। তবে এলাকায় জনশ্রুতি আছে প্রায় ৭০০ বছর আগে কোনো এক রাতে অলৌকিকভাবে তৈরি হয়েছে মসজিদটি। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা মসজিদটি সংস্কার করলে এটি হবে ঐতিহ্যের এক অন্যন্য নিদর্শন।
মসজিদটি পলাশবাড়ী পৌরশহরের নুনিয়াগাড়ি গ্রামে অবস্থিত। শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে মসজিদটির দূরত্ব আধা কিলোমিটার। চুন, সুরকি ও ইটের তৈরি প্রায় এক গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদের ভেতরে রয়েছে একটিমাত্র কক্ষ। একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন ইমামসহ পাঁচজন। ভেতরে জায়গা রয়েছে মাত্র ছয় ফুট। তবে এখন আর নামাজ আদায় করা হয় না এই মসজিদে।
মন্ডল পরিবারের সদস্য আব্দুল মতিন মন্ডল বলেন, ‘ধারণা করা হয় এটি নবাব সুজা-উদ-দৌলার আমলের। বিভিন্ন সময় স্থানীয় ও সরকারিভাবে মসজিদটির ইতিহাস উদ্ঘাটনের চেষ্টা চালানো হয়েছে। ১৯৯৪ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুর সবুর মসজিদটি পরিদর্শন করেন। ইতিহাস উদ্ঘাটনে স্থানীয়দের নিয়ে ১০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন। তারা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারদহ ইউনিয়নের মাস্তা এলাকার প্রাচীন লাল মসজিদ ও দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ওসমানপুর এলাকার প্রাচীন সৌর মসজিদ দেখে ধারণা করেন, এটি নবাব সুজা-উদ-দৌলার আমলে নির্মিত। এই নবাবের আমলে নির্মিত মসজিদ দুটির স্থাপত্যশৈলীর কিছুটা ছাপ পাওয়া যায় পলাশবাড়ীর প্রাচীন এ মসজিদে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মসজিদটির স্মৃতি রক্ষায় এর পূর্ব পাশে নতুন বড় একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে এলাকাবাসীসহ দূর-দূরান্ত থেকে প্রাচীন মসজিদটি দেখতে আসা মুসল্লিরা মানুষ নামাজ আদায় করেন।’
নুনিয়াগাড়ি গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা ও মসজিদ কমিটির সভাপতি রেজানুর রহমান বলেন, ‘প্রাচীন মসজিদটি সংরক্ষণের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয়। ২০১৩ সালের ২ জুন মসজিদটি সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ফলে এটি রংপুর বিভাগের মধ্যে প্রাচীন স্থাপত্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।‘
শিশু ভক্তদের সঙ্গে কারিনা-কারিশমার দুর্ব্যবহার, ভাইরাল ভিডিও
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান বলেন, ‘মসজিদটির বিষয়ে আমার জানা নেই। মসজিদটি পরিদর্শন করে সংস্কারের মাধ্যমে এটি গাইবান্ধার ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।’
সূত্র : রাইজিংবিডি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।