লাইফস্টাইল ডেস্ক : এলিজাকে দেখা যায় কখনও দেশের কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার সামনে আবার কখনো এশিয়া কিংবা ইউরোপের কোনো পুরনো শহরে। এলিজা বিনতে এলাহী একজন ভ্রমণকারী। আমাদের কাছে পরিচিত তিনি হেরিটেজ ট্রাভেলার কিংবা ঐতিহ্য পর্যটক হিসেবে।
এলিজা এ পর্যন্ত ভ্রমণ করেছেন বিশ্বের ৫৬টি দেশ ও বাংলাদেশের ৬৪ জেলা। ভ্রমণে তার মূল বিষয় হলো যে কোনো স্থানের ইতিহাস জানা ও ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরে দেখা। ভ্রমণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি কখনই জীবন-যাপন করতে চাইনি, জীবনকে সব সময় উপভোগ করতে চেয়েছি। জীবনকে আমি প্রকৃতির একটি মূল্যবান উপহার মনে করি, সেখান থেকেই উপভোগ করার চিন্তা মাথায় এসেছে। আর উপভোগ করার মাধ্যম আমার কাছে ভ্রমণ। এক জীবনে পৃথিবীতে যা কিছু আছে যতটুকু সম্ভব দেখে যেতে চাই। এলিজা নিজেকে একজন ইতিহাস অনুরাগীও মনে করেন। সেই অনুরাগ থেকেই তার ভ্রমণের মূল অনুষঙ্গ ইতিহাস ও ঐতিহাসিক স্থান। ঐতিহ্য পর্যটক হিসেবে তিনি মূলত সমাদৃত হয়েছেন বাংলাদেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ করতে গিয়ে। গোটা বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে, জানা-অজানা যত ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা রয়েছে, সেগুলোর একটি নিজস্ব তালিকা তিনি তৈরি করেছেন।
এই কাজটি মূলত তিনি করেছেন বাংলাদেশের হেরিটেজ ট্যুরিজম বিকাশে। “কোয়েস্ট, আ হেরিটেজ জার্নি অব বাংলাদেশ” নামে তার একটি প্রজেক্ট রয়েছে নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি করা। কোয়েস্টের কাজ আসলে থেমে নেই। তিনি বলেন, “এমন নয় ৬৪ জেলা একবার ভ্রমণ করলেই আসলে হেরিটেজ ট্যুরিজম বিকাশের কাজটি সম্পন্ন হবে। কারণ হেরিটেজ বলতে কেবল স্থাপনাগুলো বোঝায় না। একটি স্থানের খাবার, পোশাক, গান, সামাজিক রীতিনীতিও হেরিটেজের অংশ। তাই হেরিটেজ ট্যুরিজম বিকাশের কাজটি আসলে একটি অনন্ত যাত্রা।”
এলিজা তার বিশ্ব ভ্রমণ শুরু করেন ১৯৯৯ সাল থেকে। প্রথম দেশ ছিল নেপাল। তারপর ধীরে ধীরে সে সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৬তে গিয়ে। বিশ্ব ভ্রমণের অভিজ্ঞতাই এলিজাকে বাংলাদেশে হেরিটেজ ট্যুরিজম বিকাশের কাজটি করতে অনুপ্রাণিত করে। অন্যান্য দেশ যেমন পর্যটনশিল্পকে কাজে লাগিয়ে নিজ দেশে তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করছে, বাংলাদেশেও অনুরূপ একটি বিশাল সম্ভাবনার জায়গা রয়েছে।
ভ্রমণের পাশাপাশি এলিজা জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে, বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই ভ্রমণগল্প লেখেন নিয়মিত। এলিজার ভ্রমণবিষয়ক দুটি প্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে বিশ্ব ভ্রমণকে কেন্দ্র করে; তবে তার বাংলাদেশ ভ্রমণ অভিজ্ঞতা মলাটবদ্ধ হয়নি এখনো। সেটির কাজই করছেন এখন।
এলিজা তার ভ্রমণ অভিজ্ঞতার একটি দারুণ আর্কাইভ তৈরি করছেন তথ্যচিত্র নির্মাণের মাধ্যমে। তার তথ্যচিত্রের বিষয়বস্তুও ইতিহাস ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব। তথ্যচিত্রগুলোর গবেষণা, চিত্রনাট্য লেখা ও প্রযোজনার কাজটিও তিনি নিজে করেন। এ পর্যন্ত ৫টি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। সম্প্রতি একটি তথ্যচিত্র “লীলাবতী নাগ : দ্য রেবেল”, ২২তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে।
বাংলাদেশে পর্যটনশিল্পে অবদান রাখার জন্য তিনি প্রথম আলো ও ভিএসও স্বেচ্ছাসেবা সম্মাননা, ২০১৯; রোটারি ক্লাব ভোকেশনাল এক্সিলেন্স এওয়ার্ড, ২০২২; রিন নামকরা নারী, ২০২২সহ আরও অনেক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। বাংলাদেশের হেরিটেজ নিয়ে কাজ করার জন্য আমেরিকা সরকারের ইউএস স্টেট গভ. অ্যালামনাই সদস্যপদ পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আমন্ত্রণে ২১ দিনের একটি কর্মশালা সম্পন্ন করার পর।
ব্যক্তিজীবনে এলিজা কাজ করছেন খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়াতে। তিনি বিবাহিত ও এক সন্তানের জননী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।