আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিচ্ছেন পুরনো কয়েন? সাবধান! কারণ বুক পকেটে থাকা দু’টো পুরনো দু’টাকার কয়েন দিয়েই আপনি ঘুরে আসতে পারেন কাশ্মীর! অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি—চৈত্র মাসে ঘর গোছাতে গিয়ে বাতিল বলে ফেলে দেওয়া পাঁচ পয়সার কয়েনের বাজারমূল্য হতে পারে কয়েক হাজার টাকা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নানা বিশেষত্বের কারণে পুরনো কিছু বাতিল কয়েনের দাম আজ আকাশছোঁয়া। বহু বাড়িতে এখনো মিলতে পারে এমন পুরনো কয়েন, যার বাজারমূল্য অনেকেই জানেন না। মুদ্রা সংগ্রাহক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ দুই বা এক টাকার কয়েনের দাম হতে পারে ১৪ হাজার থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকারও বেশি।
পশ্চিমবঙ্গের একাধিক মুদ্রা ডিলার জানাচ্ছেন, বহু বাঙালি জানেন না যে তাদের বাড়িতে পড়ে থাকা দু’টাকা বা পঁচিশ পয়সার কয়েনগুলো হতে পারে অমূল্য। এদের কেউই পরিচিত নন ‘নিউমিসম্যাটিস্ট’ নামক কয়েন সংগ্রাহকদের সঙ্গে। এই সংগ্রাহকেরাই ঠিক করেন পুরনো কয়েনের আসল দাম।
মুদ্রা বিশেষজ্ঞ সাগর মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, কোন সালে কয়েনটি তৈরি হয়েছে, কোন টাঁকশালে তৈরি হয়েছে, কতগুলো তৈরি হয়েছিল এবং বর্তমানে কত কয়েন বেঁচে আছে—এসব বিষয়ই নির্ধারণ করে কয়েনের মূল্য।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক ১৯৮৬ সালের মুম্বই টাঁকশালে তৈরি পঞ্চাশ পয়সার কয়েন, যার মূল্য বর্তমানে প্রায় ১৫ হাজার টাকা! একই বছরের কলকাতার টাঁকশাল থেকে তৈরি আধুলির দাম তুলনামূলকভাবে কম হলেও, মুম্বই টাঁকশালের কয়েনগুলোর মূল্য অনেক বেশি। এমনকি, কারও বাড়িতে এমন কয়েন থাকলে, প্রতিটি কয়েনের জন্য ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যেতে পারে।
বর্তমানে ভারতে কয়েন তৈরি হয় চারটি মিন্টে—কলকাতা, হায়দরাবাদ, নয়ডা ও মুম্বই। কয়েনগুলো বিভিন্ন ধাতু দিয়ে তৈরি—কখনো রুপো, কখনো নিকেল, আবার কখনো রুপো-নিকেলের মিশ্রণে। এর বাইরেও রয়েছে স্মারক মুদ্রা, যেগুলোর দামও নেহাত কম নয়।
শশী সুর লেনের মুদ্রা বিক্রেতা বাবু গঙ্গোপাধ্যায়ের সংগ্রহে রয়েছে তামিলনাড়ুর বৃহদীশ্বর মন্দিরের এক হাজার বছর পূর্তিতে হায়দরাবাদ টাঁকশালে তৈরি এক হাজার টাকার একটি কয়েন। এর বাজারদর এখন প্রায় সাড়ে ছ’হাজার টাকা। যদিও এই কয়েন শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সংগ্রহের জন্য, কেনা-বেচার উদ্দেশ্যে নয়—বলেছেন সাগর মুখোপাধ্যায়।
সম্প্রতি ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল হবি এক্সপো-তে দেখা গেল এমন বহু দুর্লভ মুদ্রার সংগ্রহ। দক্ষিণ কলকাতার এক ব্যাঙ্কোয়েটে অনুষ্ঠিত এই মেলায় অংশ নেন বাংলার বিশিষ্ট মুদ্রা সংগ্রাহকরা। যাঁদের বাড়িতে পুরনো কয়েন আছে কিন্তু মূল্য জানেন না, তাঁরা প্রতি শনিবার কলকাতা জিপিওতে আয়োজিত প্রদর্শনীতে অংশ নিতে পারেন। সেখানে উপস্থিত থাকেন রাজ্যের অভিজ্ঞ কয়েন বিক্রেতা ও সংগ্রাহকরা, যারা যাচাই করে জানিয়ে দিতে পারেন কয়েনের প্রকৃত বাজারদর।
তবে সাবধান! এই বাজারে প্রতারকরাও সক্রিয়। অনেক গৃহবধূ প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। সাগর মুখোপাধ্যায় সতর্ক করে বলেন, “সাধারণ স্টেনলেস স্টিলের পঁচিশ পয়সার কয়েনকে মূল্যবান বলে বিক্রি করা হয়েছে বহুজনকে। অথচ, তাতে কোনও বিশেষত্বই নেই।”
Get the latest News first— Follow us on Zoombangla Google News, Zoombangla X(Twitter) , Zoombangla Facebook, Zoombangla Telegram and subscribe to our Zoombangla Youtube Channel.