পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ তারিক সাইফ মামুন হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে মামুনকে গুলি করা দুই ‘শুটার’ রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মঙ্গলবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি পিস্তল ও কয়েকটি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। আটকদের মধ্যে ফারুক ওরফে কুত্তা ফারুক ও রবিন ১০টি গুলি চালিয়ে মামুনকে হত্যা করেছেন।
বুধবার (১২ নভেম্বর) ব্রিফিং এ জানানো হয়,হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটর সাইকেল, অস্ত্র-গুলি এবং হত্যাকাণ্ডের পারিশ্রমিক নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
হত্যার ঘটনায় দেশব্যাপী চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ ছায়া তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে প্রাথমিকভাবে অপরাধীদের সনাক্ত করা হয় এবং তাদেরকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে সিলেট সদর, নরসিংদী ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানকালে আসামী ফারুক, রবিন, শামীম ও রুবেলকে নরসিংদী সদর থানাধীন ভেলানগর হতে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের তল্লাশী পূর্বক আসামী ফারুক ও রবিনের হেফাজত হতে নগদ এক লক্ষ তিপ্পান্ন হাজার ছয়শত চল্লিশ টাকা উদ্ধার করা হয়। যা আসামী ফারুক ও রবিনদ্বয়কে সন্ত্রাসী রনি হত্যাকাণ্ডের পারিশ্রমিক হিসেবে প্রদান করে মর্মে জানায়।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানায় যে, হত্যাকাণ্ডের পর আসামী ফারুক ও রবিন তাদের ব্যবহৃত অস্ত্র ও অব্যবহৃত গুলিগুলো একসময়ের মুদি দোকানি বর্তমানে কাফরুলের বাসিন্দা শীর্ষসন্ত্রাসী রনির নির্দেশে গ্রেপ্তারকৃত আসামী রুবেলের হেফাজতে (রেন্ট এ কার গাড়ি চালক) প্রদান করে। আসামী রুবেল অস্ত্র ও গুলি প্রাপ্তির পর তা জনৈক রনিকে মোবাইল ফোনে অবগত করে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে রুবেলকে নিয়ে মোহাম্মদপুর থানাধীন রায়েরবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপর গ্রেপ্তারকৃত আসামী ইউসুফ (পেশায় দর্জি) এর বসতঘরের মেজে হতে তার দেখানো মতে ২টি বিদেশি পিস্তল, ০৬ রাউন্ড গুলি ও ০২টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামী ইউসুফ এবং রুবেল জানান, ঘটনার দিন আসামী রুবেল অস্ত্র-গুলি ভর্তি একটি ব্যাগ ইউসুফকে তার হেফাজতে রাখার জন্য বুঝিয়ে দিয়ে যায়।
আসামীদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এক সময়ের আন্ডারওয়ার্ল্ডের আলোচিত জুটি ইমন-মামুনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য এবং প্রকট। গত কয়েকদিনে অত্র ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের ঘনিষ্ঠ জনৈক সন্ত্রাসী রনি কর্তৃক আসামী ফারুকের সহায়তায় একাধিকবার মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তখন তারা নতুন পরিকল্পনা করে ঘটনার দিনকে হত্যাকাণ্ডের জন্য বেছে নেয়। কারণ উক্ত তারিখে নিহত মামুনের মামলায় হাজিরার দিন ধার্য্য ছিল।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঘটনার পূর্বের দিন ০৯ নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে সন্ত্রাসী রনি তার নিজের বাসায় অপর সন্ত্রাসী রবিনকে ডেকে নেয়। রনি জানায়- তার সঙ্গে সন্ত্রাসী ফারুক, সুমন, কামালসহ আরও ১/২ জন থাকবে। আমরা মামুনকে মেরে ফেলব। তুই সঙ্গে থাকবি তোকে টাকা দিব এবং সে (সন্ত্রাসী রবিন) রাজী হয়। গত ১০ নভেম্বর সন্ত্রাসী রনি ০৯টায় সন্ত্রাসী রবিনকে ফোন দিয়ে জজ কোর্ট এলাকায় যেতে নির্দেশ করে এবং সে অনুযায়ী ১০টার দিকে সন্ত্রাসী রবিন তার বন্ধু শামীমের (ঢাকা ডেন্টাল এর আউটসোর্সিং লিফট অপারেটর) ড্রাইভিংয়ে (রবিনের মোটরসাইকেল সহযোগে) জজ কোর্ট এলাকায় গমন করে হত্যার মিশনে অংশগ্রহণের জন্য। অন্যদিকে, রনির নির্দেশে ফারুকসহ সুমন কামাল ও আরও ১/২ জন জজ কোর্ট এলাকায় উপস্থিত হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সন্ত্রাসী রনির নির্দেশে সন্ত্রাসী ফারুক অটোরিকশা যোগে জজ কোর্ট এলাকায় গমন করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে সন্ত্রাসী সুমন ও সন্ত্রাসী ফারুককে শুটিং এর জন্য রনি নির্দেশ প্রদান করে। এক পর্যায়ে সুমন ও রনির মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। সন্ত্রাসী রনি তখন সন্ত্রাসী সুমনের নিকট হতে দুটি পিস্তল নিয়ে একটি ফারুক ও অপরটি আসামী রবিনকে হস্তান্তর পূর্বক টার্গেট ভিকটিম মামুনকে হত্যার মিশনে পাঠায়।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, অপর পলাতক সন্ত্রাসী কামালের উপর নির্দেশনা থাকে মামুনকে অনুসরণ পূর্বক তার গতিবিধি তাদেরকে জানানো এবং সে মোতাবেক সন্ত্রাসী কামাল ভিকটিমের সঙ্গেই থাকে এবং তার সংকেত পেয়েই ফারুক ও রবিন ভিকটিম মামুনকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গুলি ছুড়ে ও মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তারা বেড়ি বাঁধ হয়ে রায়েরবাজারে যায় এবং রনির নির্দেশে আসামী রুবেল অপর ০২ সস্ত্রাসী ফারুক ও রবিনের নিকট হতে অস্ত্র-গুলিগুলো গ্রহণ পূর্বক তা রুবেলের বন্ধু ইউসুফের নিকট জমা রাখে। পরবর্তীতে রনির প্রদত্ত ২ লক্ষ টাকা আসামী রুবেল, শ্যুটার ফারুক ও শ্যুটার রবিন প্রত্যেককে ১ লক্ষ করে টাকা প্রদান করে।
১৩ তারিখের অপতৎপরতা ঠেকাতে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করব : ডিবিপ্রধান
পরবর্তীতে সন্ত্রাসী রনির পরিকল্পনা ও নির্দেশে সন্ত্রাসী রুবেলের মাধ্যমে সন্ত্রাসী ফারুক, রবিন ও শামীমদেরকে ঢাকা হতে সিলেটের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয় এবং রুবেল নিজেও সফরসঙ্গী হন। ঘটনার পরপরই সন্ত্রাসী রনি আসামী ফারুক, রবিন, রুবেল ও শামীমের ব্যবহৃত মোবাইলগুলি তাৎক্ষণিকভাবে হাতিয়ে নেয়, যেন আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা কোনভাবেই তাদেরকে চিহ্নিত ও অনুসরণ না করতে পারে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা প্রথমে সিলেটে গমন করে এবং রবিন ও রুবেলের প্রচেষ্টায় ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করে। সেখানে ভারতে প্রবেশের কোন যোগ সুবিধা না করতে পেরে তারা সাতক্ষীরা সীমান্ত পার হয়ে ভারতে প্রবেশের লক্ষ্যে সিলেট ত্যাগ করে ঢাকা অভিমুখে রওয়ানা করে এবং পথিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



