আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ওমানের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। সুলতান হাইথাম বিন তারিক তাঁর প্রবর্তিত নতুন জাতীয়তা আইনের অধীনে প্রথমবারের মতো দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রদানের ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। রয়্যাল ডিক্রি নং ২৯/২০২৫ এর মাধ্যমে রুশ নারী মারিয়া ভকটর আনাটলিয়েভিচ আর্জেন্তোভা এই বিরল সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তাঁকে ওমানি নাগরিকত্বের পাশাপাশি রাশিয়ান নাগরিকত্ব বহাল রাখারও বিশেষ অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এই রাজকীয় ফরমানটি কেবল একটি সাধারণ নাগরিকত্ব প্রদান নয়, বরং এটি ওমানের নতুন নাগরিকত্ব আইন চালুর পর প্রথম দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদনের ঘটনা। সম্প্রতি রয়্যাল ডিক্রি নং ১৭/২০২৫ এর মাধ্যমে ওমানি জাতীয়তা আইন কার্যকর করা হয়েছে। এই আইনটি রয়্যাল ডিক্রি নং ৩৮/২০১৪-এর অধীনে থাকা পূর্বতন জাতীয়তা আইনকে প্রতিস্থাপন করে এবং চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর করা হয়। নতুন আইন অনুযায়ী, দ্বৈত নাগরিকত্ব সাধারণভাবে নিষিদ্ধ। তবে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বিশেষ সুপারিশের ভিত্তিতে রাজকীয় ফরমান দ্বারা স্পষ্টভাবে মঞ্জুর হলেই কেবল এর ব্যতিক্রম সম্ভব। মারিয়া আর্জেন্তোভার ক্ষেত্রে সেই ব্যতিক্রমই ঘটানো হলো।
ওমানের জাতীয়তা আইন, নাগরিকত্ব এবং নাগরিক হওয়ার যোগ্যতার মাপকাঠি সম্পর্কিত বিস্তারিত নিয়ম ও প্রবিধানের রূপরেখা দেয়। এই আইনে ওমানের নাগরিকত্ব লাভের বিভিন্ন উপায় উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব, ওমানি নাগরিককে বিবাহ করা এবং স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়া। প্রতিটি পদ্ধতির জন্য নির্দিষ্ট যোগ্যতার মানদণ্ডও আইনে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বংশগত নাগরিকত্বের জন্য পিতৃত্বের প্রমাণ, বিবাহের মাধ্যমে নাগরিকত্ব অর্জনের ক্ষেত্রে বিদেশী স্ত্রীদের জন্য প্রযোজ্য শর্তাবলী এবং স্বাভাবিকীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মাবলী বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আইনটি বংশদ্ভুত ওমানি নাগরিকত্ব সম্পর্কিত বিধানগুলোও স্পষ্ট করে।
নাগরিকত্ব হারানোর কারণসমূহ:
নতুন জাতীয়তা আইন দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিয়েছে। কেবল সুলতানের রাজকীয় ফরমান দ্বারা বিশেষভাবে অনুমতি প্রাপ্ত ব্যক্তিরাই এর ব্যতিক্রম হিসেবে বিবেচিত হবেন। ধারা ২৩ অনুযায়ী, কোনো ওমানি নাগরিক যদি আইন লঙ্ঘন করে অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন, তবে তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওমানের নাগরিকত্ব হারাবেন।
বিবাহ সংক্রান্ত বিধি-নিষেধও নাগরিকত্বের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। যদি কোনো বিদেশী নারী ওমানি পুরুষকে বিয়ে করার সূত্রে ওমানের নাগরিকত্ব লাভ করেন, এবং পরবর্তীতে পাঁচ বছরের মধ্যে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে বা তারা পরিত্যক্ত হন, তবে সেই নারী তার ওমানি নাগরিকত্ব হারাবেন। তবে, আইনে এটিও স্পষ্ট করা হয়েছে যে, পিতার নাগরিকত্ব বাতিল হলেও সন্তানেরা তাদের ওমানি নাগরিকত্ব অক্ষুণ্ণ রাখবে।
একইভাবে, কোনো বিদেশী নারী যদি কোনো ওমানি পুরুষকে বিবাহ করে ওমানের নাগরিকত্ব পান, এবং পরবর্তীতে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটিয়ে অন্য কোনো ভিন্ন জাতীয়তার পুরুষকে পুনরায় বিয়ে করেন, তবে তিনিও ওমানের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হবেন। এই নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত দ্বিতীয় বিবাহের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
ধারা ২৬ অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি মৌখিক বা শারীরিক কার্যকলাপের মাধ্যমে সুলতান বা সালতানাতের প্রতি অসম্মানজনক কিছু করেন, তবে তার নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হতে পারে। এছাড়াও, ওমানের স্বার্থের পরিপন্থী আদর্শ প্রচার করে এমন কোনো সংস্থা বা দলের সদস্য হলেও নাগরিকত্ব বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরও কঠোর বিধান রয়েছে ওমানি নাগরিকদের জন্য যারা কোনো বিদেশী সরকারের এমন কোনো পদে অধিষ্ঠিত হন যা ওমানের স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক। যদি সরকার কর্তৃক পদত্যাগের অনুরোধ জানানোর পরেও তারা পদত্যাগ করতে অস্বীকার করেন, তবে তারাও নাগরিকত্ব হারাতে পারেন। একই নিয়ম उन ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে, যারা ওমানের বিরুদ্ধে শত্রুভাবাপন্ন দেশগুলোর হয়ে কাজ করেন।
আইনটি নাগরিকত্ব বাতিলের ক্ষেত্রে কঠোর হলেও, কিছু ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব পুনর্বহালের সুযোগও রাখা হয়েছে। ধারা ২৭ অনুযায়ী, যদি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে অপরাধে কেউ দোষী সাব্যস্ত হন অথবা নাগরিকত্ব পাওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে একাধিক গুরুতর অপরাধের জন্য দণ্ডিত হন, তবে তার নাগরিকত্ব বাতিল হতে পারে। এছাড়া, যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া একটানা ২৪ মাসের বেশি সময় ধরে ওমানের বাইরে বসবাস করলে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকি থাকে।
এই পদক্ষেপগুলো ওমান সরকারের জাতীয় অখণ্ডতা রক্ষার অঙ্গীকার এবং নাগরিকত্বের মর্যাদা সমুন্নত রাখার কঠোর প্রচেষ্টাকেই নির্দেশ করে। মারিয়া আর্জেন্তোভাকে দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রদান ব্যতিক্রম হলেও, এটি নতুন আইনের অধীনে প্রথম স্বীকৃতি এবং ওমানের ভবিষ্যৎ নাগরিকত্ব নীতি নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।